পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান Y (t ভারতবর্ষের জনসাধারণেরও সেই এক রূপ,—এই জনসাধারণের কোন ক্ষোভ নাই, চাঞ্চল্য নাই, ইহার চিরধ্যানস্থ মূৰ্ত্তি ঐতিহাসিকের চক্ষে পরম বিস্ময়কর। একজন ঐতিহাসিক লিখিয়াছিলেন যে—“যখন পলাশীর যুদ্ধ হইতেছিল, তখন কয়েক ক্রোশ দূরে চাষা নিরুপদ্রবে তাহার লাঙ্গল লইয়া ক্ষেত চষিতেছিল এবং দূর গ্রামের ব্রাহ্মণ শিবলিঙ্গের উপর চক্ষু মুদিয়া বিল্বপত্রসহ জল ঢালিতেছিল।” এসকল কথায় কিছু অতিরঞ্জন আছে কিনা জানি না। কিন্তু ভারতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা ভারত ইতিহাসের খুব বড় কথা নহে। বাঙ্গালার জনসাধারণ বলিতে কাহাদিগকে বুঝিতে হইবে ? ইহার জৈন নহেন, বৌদ্ধ নহেন, খৃষ্টান নহেন, হিন্দু নহেন, মুসলমান নহেন— ইহারা বাঙ্গালী । ইহাদের পূর্বপুরুষদের কত কীৰ্ত্তি, বাঙ্গালা ও বাঙ্গালার বাহিরে ছাইয়া আছে ; তাহার উত্তরাধিকারী সমস্ত বাঙ্গালী জাতি, প্রধানতঃ হিন্দু ও মুসলমান। যাহারা জগজ্জয়ী মসলিন নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন,— যাহা কেহ কেহ ‘বুনট করা বাতাসের জাল’, ‘চলন্ত নদীর স্রোতঃ', “পরীর স্বপ্ন’, ‘সাঁঝের নীহার’, ‘অঙ্গর লীলা প্রভৃতি নামকরণে পরিচিত করিয়াছেন, যাহা অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও জগতের বিস্ময়। সেই 'মসলিনই’ আমাদের পরিচয়। আমাদের পরিচয় বাঙ্গালার রেশম-শিল্প—কৌষেয় বস্ত্র যাহা এত মহার্য ছিল যে, রোম-সম্রাট্ আরিলিয়ানের পত্নী স্বীয় অঙ্গরক্ষার জন্ত কিছু কৌষেয় বস্ত্র চাহিলে, তাহ দুৰ্ম্ম ল্য বলিয়া সম্রাট তাহাকে তাহ দিতে পারেন নাই এবং খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট হেলিওগেবলস এই বস্ত্র ব্যবহার করাতে অপরিমিত ব্যয়শীলতার জন্ত তাহার মন্ত্রী-সভা কর্তৃক তিরস্কৃত হইয়াছিলেন । এই জগজ্জয়ী বস্ত্রশিল্পীরা নিৰ্ব্বংশ হইয়া যায় নাই। এখনও ঢাকার সন্ত্রান্ত রমণীর বস্ত্রের উপর অতি স্থল্ম জড়াও কারুকার্য্য করিয়া থাকেন। তাহা কি বংশানুক্রমিক নৈপুণ্যের পরিচায়ক