পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান ৭৯ মেহের জিনিষকে সজোরে নিজের বুকের কাছে টানিয়া পরিচয়ট শুধু নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ করেন না, তাহাকে স্বীয় হৃদ পঞ্জরের হাড়-মাংসে পরিণত করিয়া একেবারে আপন করিয়া তুলেন। আপনার ‘হাসেন-হুসেন কাব্যে ফাতেমার বিলাপ পড়ুন, উহা আরব দেশের জননীর কান্না নহে, উহ। একেবারে বাঙ্গালার মায়ের কান্না ; উহাতে পদ্মার গভীরতা ও শীতলক্ষার বিশালতা আছে । জগতে কত লোকই ন কাদিয়াছে—লায়লী— মজনুর জন্ত কাদিয়াছে, শিরী—ফরহাদের জন্ত কাদিয়াছে, কৌশল্যা—রামের জন্য কাদিয়াছে, কিন্তু এই সমস্ত কান্না একত্র হইলে যে করুণ-রস প্রকাশ পায়, বাঙ্গালী কবির সেই বুক-ফাট কান্নার সুর ‘ফাতেমা-বিলাপ”-এ প্রকাশ পাইয়াছে। তপ্ত পয়কর ছয়ফল মুলুক বদিউজ্জামাল’ প্রভৃতি পুস্তক এইভাবে অনুদিত হইলেও তাহ ঋতুভেদে বঙ্গীয়-প্রকৃতির সমস্ত আভরণ ধারণ করিয়া কাব্য-লক্ষ্মীর স্বরূপ দেখাইতেছে। এই সকল অনুবাদ সম্বন্ধে একটি কথা বলা চলে, যে পুস্তকগুলি যত বেশী পরিমাণে দেশজ উপাদান আয়ত্ত করিতে সমর্থ হইয়াছে, সেগুলি ততট বেশী মনোজ্ঞ, হৃদয়গ্রাহী ও বাঙ্গালার নিজস্ব হইয়াছে। মুসলমানী কেচ্ছগুলি যাহ উর্দু প্রধান ভাষায় ছাপা হইয়াছে, তাহা সময়ে সময়ে এত উৎকট যে, তাহ একরূপ পাঠের অযোগ্য হইয়াছে। ইহাদের সংখ্যা কম নহে, কিন্তু এই নাতি-ক্ষুদ্র সংখ্যক সাহিত্যকে আমরা একরূপ পণ্ডশ্রম মনে করি। ইহাদের আর একটা দোষ এই যে, যদিও ইহারা পল্লী-প্রচলিত গীতিক ও রূপকথা অবলম্বনে রচিত হইয়াছে. ইহাদের লেখকেরা প্রাচীন কবিতার প্রাণ একেবারে গলা টিপিয়া মারিয়! যেন শববাহী একটা শোভাযাত্রা বাহির করিয়াছেন। আমাদের দেশের অত্যন্ত্র-শিক্ষাপ্রাপ্ত হিন্দু মুসলমান প্রাচীন ভাবসম্পদের ও কবিত্বের সন্ধান জানেন না। মহানদীর তীরে বসিয়া