পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

by o প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান তাহারা কূপ কাটিতে লাগিয়া যান। সেই সকল প্রাচীন কাহিনীর ভাষা অমাজ্জিত বলিয়। বর্জন করেন এবং তৎস্থলে সংস্কৃত কি উদ-শব্দবহুল একটা খিচুড়ি ভাষা স্বষ্টি করেন। যে-সকল পল্লী-পণ্ডিত পাঠশালায় পড়িয়াই বিদ্যার আঙ্গিন ত্যাগ করিয়াছেন, তাহাদের ভারতচন্দ্রী ‘বিদ্যাসুন্দর’ প্রভৃতি বাঙ্গল কাব্যের ভাষাটা খুব বড় বলিয়া মনে হয়। সুতরাং আদি-রসটা এই সকল গীতিকায় পয়ঃপ্রণালীর মত বহিয়া যায় ; তারপর পণ্ডিতী-বাঙ্গলার ও ফারসীর রূপ বর্ণনাগুলি তাহাদিগকে পাইয়া বসে। সাবেকী গল্প-মাধুর্য্যের সুধ-ভাণ্ড সম্মুখে পাইয়াও এই ভারতচন্দ্রী-তাড়ির আস্বাদ তাহারা পছন্দ করেন, এই সকল তথাকথিত পণ্ডিত কবিদের অনুকরণ করিয়া বাহাদুরী দেখাইতে ব্যস্ত হন । সেই সুদীর্ঘ রূপবর্ণনা ও কেশ-সূক্ষ্ম উপমার বছর দেখিয়া সহজ-রসের বোদ্ধা—শিশুর দ্যায় সরল পল্লীবাসীরা ভড়কিয় যায় এবং সেই ধারাপাতগত বিদ্যার বিদ্বানদিগের লেখা সম্বন্ধে এমন একটা উচ্চ ধারণা থাকে যে, তাহার উৎকর্ষ সম্বন্ধে কোন দ্বিধ প্রকাশের সাহস পায় না ; যতই উৎকট, দুৰ্ব্বোধ্য ও বুদ্ধির অগম্য হউক না কেন, তাহার তারিফ না করাটা তাহার। মুর্থতার লক্ষণ বলিয়া মনে করে। এইভাবে এই বিকৃত বাঙ্গলা ভাষায় লিখিত কতকগুলি পুথি বাঙ্গালার মুসলমানদের মধ্যে কার্টুতি হয়। পল্লীর গীতিকাগুলি যখন কি হিন্দু কি মুসলমান অৰ্দ্ধশিক্ষিত ও অল্পবিদ্যা-ভয়ঙ্কর লেখকদের হাতে পড়িয়া রূপায়িত হয়, তখন তাহাদের স্বরূপটি আর চেনা যায় না। তাহদের এমনধীর পরিবর্তন হয় যে—যেন মনে হয়, পল্লীর অনাবিল হাওয়ায় প্রস্ফুটিত পদ্মটি একটি সজনে ফুল হইয়া গিয়াছে। কিন্তু তথাপি এই সকল কেচ্ছার মূলগুলি এখনও পাড়াগায়ে একেবারে দুষ্প্রাপ্য হয় নাই । অন্ধ যেমন—‘কুধ কেমন জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিয়াছিল—“দুধ বকের মত । সেই পল্লী-গাথাসমূহের পরিচয় আধুনিক কেচ্ছগুলি সেইরূপই দিয়া থাকে।