পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বঙ্গল সাহিত্যে মুসলমানের অবদান br○ এই পল্লী-কাব্য গুলির মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের এত বড় বড় কবি আছেন, র্যাহাদের সঙ্গে সমকক্ষতা করিতে পারেন, এরূপ কবি তথাকথিত ভদ্র সাহিত্যেও বিরল। এই কাব্যগুলির রচকদের অনেকেই নিরক্ষর, কিন্তু ইহাদের দৃষ্টি এত সুহ্ম যে, স্বীয় সমাজ ও দেশের যে চিত্র ইহারা দিয়াছেন, তাহ। একেবারে নিগত যে-সময়ে ভারতচন্দ্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয় রাজসভা ও দরবারের কুরুচির স্রোতে এদেশ ভাসিয়া যাইতেছিল, সে-সময়ে এই নিরক্ষর কবির নৈতিক-জীবনের যে সতর্কত দেখাইয়াছেন, তাহ বিস্ময়কর। প্রেম-প্রসঙ্গে ইহারা মনস্তত্ত্বের স্বক্ষতম সন্ধান রাখেন এবং এত পুঙ্খানুপুঙ্গরূপে মানসিক ভাবের বিশ্লেষণ করিতে সমর্থ যে, অনেক স্থলেই তাহারা বৈষ্ণব কবিদের সমকক্ষ । ইহার সকলেই খাটি বাঙ্গালী । মৌলবী বা পুরোহিতের খপ্পরে তাহারা পড়েন নাই, সংস্কৃত বা আরবী দ্বার অভিভূত হন নাই, একেবারে পাণ্ডিত্য-বজ্জিত, অথচ প্রকৃতির স্বীয় সন্তান, ভারতীর প্রিয় সেবক এই সকল কবি বঙ্গ সাহিত্যের মুখোজ্জ্বল করিয়াছেন। এই বিরাট সাহিত্যের সুচনা আমি যে দিন পাইয়াছিলাম, সেদিন আমার জীবনের একট। স্মরণীয় দিন। আমি সেদিন দেশ-মাতৃকার মেহিনী মূৰ্ত্তি দেখিয় মুগ্ধ হইয়াছিলাম, আমাদের বাঙ্গলা ভাষার শক্তি ও প্রসার দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছিলাম এবং হিন্দু ও মুসলমানের যে যুগলব্ধপ দেখিয়াছিলাম –তাহাতে চক্ষু জুড়াইয়া গিয়াছিল। হিন্দু, খৃষ্টান, মুসলিম প্রভৃতি প্রভেদাত্মক নাম সেদিন আমি ভুলিয়া গেলাম, এই দেশবাসীর এক অভিন্ন, অতিশয় প্রিয় নাম পাইলাম—তাহা বাঙ্গালী । তাহা যুগ-যুগান্তরের নাম ; সমস্ত বাহ্য-বৈষম্যের উপর সেই নাম সাম্যবাচক, সৌহার্দ্য-জ্ঞাপক ও জ্ঞাতিত্বের পরিচায়ক । দুঃখের বিষয়, কয়েকজন বিশিষ্ট নিরপেক্ষ সমালোচক ব্যতীত পূৰ্ব্ববঙ্গের এই রত্নখনির জহুরী মিলিতেছে না। যে বিরাট প্রতিভাশালী পুরুষবরের