পাতা:বংশ-পরিচয় (দ্বাদশ খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বৰ্গীয় সারদাচরণ চট্টোপাধ্যায় R8 S একদিকে তিনি যেমন বিনয়ী ছিলেন, অন্য দিকে আবার সেইরূপ শান্ত, ধীর এবং সহিষ্ণু ছিলেন। সংসারে তিনি বিশেষ কোনও সুখ লাভ করেন নাই। আত্মীয়-বিরোধ, পুত্ৰ-কন্য-কলাত্ৰ-বিয়োগ প্ৰভৃতি দুৰ্বিসহ। শোকতাপে প্ৰায় সারাজীবনই তাহাকে জর্জরিত থাকিতে হইয়াছে ; কৰ্ম্মক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা-সংস্কুল উদ্বেগ-আশঙ্কায় তাহাকে নিয়তই নিপীড়িত হইতে হইয়াছে। তিনি স্থিরভাবে সব সহ করিয়াছেন, এত জালাযন্ত্রণার মধ্যেও এক মুহূৰ্ত্তের জন্য তিনি কৰ্ত্তব্য হইতে বিচলিত হন নাই । সারদাচরণ দানে একেবারে মুক্তহস্ত ছিলেন। তিনি যাহা উপাৰ্জন করিয়াছিলেন তাহার প্রায় সমস্তই দানে ব্যয় করিয়া গিয়াছিলেন । তাহার হৃদয় ছিল যেমন কোমল, তেমনই উদার । পরিচিত হউক বা অপরিচিতই হউক, যে কেহ তাহার কাছে অভাব জানাইত, তিনি তৎক্ষণাৎ তাহার দুঃখ-মোচনের জন্য যথাসাধ্য অর্থসাহায্য করিতেন । তাহার দ্বার হইতে যাচক কোনও দিন হতাশ হইয়া ফিরে নাই। ভদ্রেতর-নির্বিশেষে অনেকগুলি গৃহস্থ-পরিবারের ভরণ-পোষণের সমস্ত ব্যয় তিনি নিজে নির্বাহ করিতেন। তাহার পিতৃশ্ৰাদ্ধে ও জননীর “তুলা”য় যেরূপ প্রচুরভাবে তিনি ব্রাহ্মণপণ্ডিত এবং দরিদ্র ও ভিক্ষুকদিগকে অর্থদান করিয়া পরিতুষ্ট করিয়াছিলেন তাহা আজিও তাঁহার স্বগ্রামে "গল্প কথা” হইয়া আছে। সন ১৩২০ সালে দামোদরের প্রবল বন্যায় যখন হাওড়া জেলার অধিকাংশ স্থান জলপ্লাবিত হইয়া গিয়াছিল তখন বন্যাপীড়িতের সাহায্যাৰ্থ তিনি তাহার অর্থকোষ মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন এবং বন্যাগ্ৰস্ত গ্রামগুলির মধ্যে নৃত্যুনাধিক পাচ হাজার মণ চাউল বিতরণ করিয়াছিলেন। উল্লিখিত সাধারণ দান ব্যতীত সারদাচরণ দেশহিতরা কতকগুলি স্থায়ী অনুষ্ঠানে প্রচুর অর্থ দান করিয়াছিলেন। স্বগ্রামে তথা দেশের মঙ্গলের জন্য পথ ও ঘাট প্রভৃতির উন্নতিকল্পে তিনি অনেক অর্থ ব্যয় করিয়াছিলেন।