পাতা:বংশ-পরিচয় (নবম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাণী ভবানী S 3ኞ» প্ৰজাবৰ্গকে দুঃখ-সাগরে ভাসাইয়া অনন্তধামে চলিয়া গেলেন। পতিশোক-বিদগ্ধ রাণী ভবানী তৎকালীন দেশ-প্ৰথানুসারে পতির সহিত সহমরণে যাইবেন বলিয়া সঙ্কল্প করিয়াছিলেন ; কিন্তু রাজা রামকান্ত তাহাকে অন্তিমকালে অনুরোধ করিয়া যান, যেন তিনি সহমরণে না যাইয়া “পোষ্যপুত্র” গ্ৰহণ করেন এবং অপত্য-নির্বিশেষে প্রজাপালন করিতে থাকেন । রাজা রামকান্তের শ্রোদ্ধোপলক্ষে রাণী ভবানী বাঙ্গালায় ভীষণ জলকষ্ট দর্শন করিয়া বহুসংখ্যক দীঘিকা ও পুষ্করিণী খনন করিয়া দিয়াছিলেন। উত্তর বঙ্গের যাবতীয় দীঘিকা ও পুষ্করিণী যে রাণী ভবানীর অতুল পরদুঃখকাতরতার নিদর্শন, এ কথা বলাই বাহুল্য। সে সময়ে উত্তরে বঙ্গে ভবাদা-ভবানীপুরে মা-ভবানীর পীঠস্থান ছিল। বহু লোক সেই পীঠস্থানে পূজা দিতে যাইত ; কিন্তু দুৰ্গম, জঙ্গলাবৃত রাস্তা দিয়া যাইতে হইত বলিয়া ধৰ্ম্মপিপাসু লোকদের যৎপরোনাস্তি কষ্ট হইত। রাণী ভবানী পথিকদিগের কষ্ট দূর করিবার নিমিত্ত যেখানে জলাভূমি আছে, সেখানে ইষ্টকনিৰ্ম্মিত সেতু প্ৰস্তুত করিয়া দিলেন ; যেখানে জলকষ্ট আছে, সেখানে সোপানাবলী-বিশিষ্ট পুষ্করিণী নিৰ্ম্মাণ করিয়া করিয়া দিলেন ; পথিকদের জন্য স্থানে স্থানে পান্থশালা ও শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়া দিলেন, তাহা ছাড়া পনর হাত বিস্তৃত পথ প্ৰস্তুত করিয়া দিয়া তাহার উভয় পার্থে নৌকা চলাচলের উপযোগী খাল কাটাইয়া দিলেন। ইহা ছাড়া কাশীধামে দুৰ্গাবাড়ী প্ৰতিষ্ঠা করিলেন, কাশীর সীমানা নির্দেশ করিবার জন্য প্ৰতি স্থানে শিবস্থাপনা করিলেন, তথায় নীল ভৈরব শিবপ্রতিষ্ঠা করিলেন, তাহা ছাড়া অন্নসত্ৰ প্ৰতিষ্ঠা করিয়া সহস্ৰ সহস্ৰ লোকের অন্নসংস্থানের উপায় করিয়া দিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ব্ৰহ্মচারিণী হইয়া মুর্শিদাবাদের উত্তরে বড় নদীর তীরে তঁহাদের ষে বাসভবন ছিল তাহাতে বাস করিতেন।