পাতা:বংশ-পরিচয় (ষষ্ঠ খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রায় সাহেব রাধাগোবিন্দ রায় 8. করিবার জন্য অনুরোধ করেন। অনেকেই কালেক্টরের সে অনুরোধ উপেক্ষা করিয়া তাহার বিরাগভাজন হইতে সাহস করেন নাই, তঁাহারা যথোপযুক্ত মূল্য লইয়া রাজ সম্পত্তি প্ৰত্যাৰ্পণ করিয়াছিলেন । কেহ কেহ আত্মগোপন করিয়া স্থানান্তরে অবস্থান করেন । এই সময়ে দেওয়ান বাহাদুরের মৃত্যু হয় । তিনি চিরকুমার ছিলেন । তাহার লোকান্তরের পর, তাহার মধ্যম সহোদর কৃষ্ণকান্ত রায় কালেক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিজানগর পরগণা বিনামূল্যে মহারাজ-কুমারকে প্ৰত্যপণ করেন। ইনি যেমন সদাশয়, পরহিতব্ৰত, পরম ধাৰ্ম্মিক ছিলেন, তেমনই কৰ্ত্তব্যপরায়ণ এবং নানাবিধ লোকহিতকর সদনুষ্ঠানের অনুষ্ঠাতা ছিলেন । জনসাধারণের সুবিধার জন্য লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ইনি দিনাজপুর টাউনে ঘাঘরা নদীর উপর যে দুইটি খিলান পোল নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিয়া গিয়াছেন, তাহ আজও এই – ৭৫ বৎসরের উপর তাহার কীৰ্ত্তিস্বরূপ বর্তমান রহিয়াছে। পোল দুইটি প্ৰাচীন হইলেও এখন ও কাৰ্য্যোপযোগী রহিয়াছে এবং তাহার উপর দিয়া লোক চলাচল করিতেছে । ইহার পর ১১৭৬ সালে মন্বন্তর উপস্থিত হইলে লক্ষ লক্ষ লোক যখন অন্নাভাবে মরণাপন্ন হইয়া হাহাকার করিতেছিল, তখন করুণাদ্রহৃদয় কৃষ্ণকান্ত আর স্থির থাকিতে পারলেন না। বুভুক্ষিতের আৰ্ত্তিনাদ তঁহাকে অস্থির করিয়া তুলিল। তিনি সেই সকল দুর্ভিক্ষ-পীড়িত স্থানে অন্নসত্ৰ খুলিয়া ক্ষুধাৰ্ত্ত জনগণের প্রাণরক্ষায় প্ৰবৃত্ত হইলেন । এই কাৰ্য্যে তঁহার বহু লক্ষ টাকা ব্যয় হইলেও সে দিকে তঁাহার ক্ৰক্ষেপ ছিল না, অনশন মৃত্যু হইতে নরনারীকে রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন ভাবিয়াই আনন্দিত এবং কৃতাৰ্থ হইয়াছিলেন । তাহার এই লোকহিতকর সদনুষ্ঠানের জন্য মোগলরাজ তাহাকে বংশানুক্রমিক ‘রায় সাহেব” উপাধি-ভুষণে ভূষিত করিয়া তাহাকে সম্মানিত করেন।