পাতা:বংশ-পরিচয় (সপ্তম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীগৌরাঙ্গ S\o দিতে হইবে । নবদ্বীপের পণ্ডিতমণ্ডলী প্ৰমাদ গণিলেন । এতদিনে বুঝি নবদ্বীপের গৌরব-সুৰ্য্য অস্তমিত হইল ! একদিন নিমাই পণ্ডিত নদীতটে ছাত্ৰগণসহ সভা করিয়া বসিয়া আছেন, এমন সময় কাশ্মীরি পণ্ডিত সভামধ্যে গিয়া নিমাইকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “তোমার নামই কি নিমাই ? তুমিই না। নবদ্বীপের প্ৰধান বৈয়াকরণিক ?” নিমাই বলিলেন, “আমি ব্যাকরণের অধ্যাপনা করি বটে, কিন্তু ব্যাকরণে আমার অধিকার সামান্য ।” কাশ্মীরি দিগ্বিজয়ী নিমাইয়ের বিনয়বাক্য বুঝিয়াও বুঝিলেন না । তিনি দম্ভভরে বলিলেন, “নিমাই পণ্ডিত ! তুমি যে কোন বিষয়ে হউক আমাকে প্রশ্ন করিতে পার ।” নিমাই বলিলেন, “আচ্ছা যদি নিতান্তই আমাদিগকে আপনা’ পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইবার সুযোগ দিতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে ঐ যে সম্মুখে কুলুকুলু-নাদিনী জাহ্নবী,ঐ জাহ্নবীর মহিমা কিছু বর্ণন করুন, আমরা শুনিয়া পরিতৃপ্ত হই ।” কেশব কাশ্মীরি মুহুৰ্ত্তমাত্র অপেক্ষা না করিয়া একশত শ্লোকে গঙ্গার মহিমা বৰ্ণনা করিলেন । দিগ্বিজয়ীর সুমধুর শ্লোক শুনিয়া সকলেই মোহিত হইলেন। দিগ্বিজয়ীর অনেক পীড়াপীড়িতে নিমাই সেই এক শত শ্লোকের মধ্যে দুইটি শ্লোকের অলঙ্কারগত দোষ প্ৰদৰ্শন করিলেন । দিগিজয়ী নিমাইয়ের অসাধারণ স্মরণশক্তি দেখিয়া একেবারে বিস্মিত হইলেন । তিনি বলিলেন, “আমি এতদিন নিমাই পণ্ডিতকে শুধু বৈয়াকরণিক বলিয়াই জানিতাম, আজি বুঝিলাম নিমাই পণ্ডিত আলঙ্কারিকও বটে ! নিমাঈ, তুমি শ্লোকের মধ্যে যে সমস্ত দোষ-ত্রুটি প্ৰদৰ্শন করিয়াছ, তাহা অতি প্রকৃতই হইয়াছে।” দিগ্বিজয়ীর মান মুখ ও পরাজয়ে অবনতশিল্প দেখিয়া নিমাইয়ের ছাত্রগণ সকলেই হাসিয়া উঠিল, নিমাই তাহাদিগকে ধমক দিয়া হাসিতে নিষেধ করিলেন। পরদিন দিগ্নি জয়ী পণ্ডিত নিমাইয়ের শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করিলেন।