পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর •®ጫ চল, আমি পাগল, জলে ঝাপ দিয়া পড়িব । তুমি আমাকে বাচাইবার জন্য জলে ঝাপ দাও । এই বলিয়া শৈবলিনা উচ্চৈহাস্ত করিয়া উঠিল, হাসিতে হাসিতে বলিল, “আমি ভাত খাইব না ।” তখনই আবার ক্র দন করিতে করিতে বাহির হইয়। বলিল, “আমাকে মুসলমানের ভাত খাওয়াইয়াছে— আমার জাত গেল -—ম গঙ্গা ধরিও ।” এই বলিয়। শৈবলিনী গঙ্গার স্রোতে ঝাপ দিয়া পড়িল । “কি হইল ? কি হইল ?” বলির প্রতাপ চীৎকার করিতে করিতে নৌকা হইতে বাহির হইলেন। শাম্বী সম্মুখে দাড়াষ্টয় নিষেধ করিতে যাইতেছিল। “হারামজাদ ! স্ত্রালোক ডুবিয়। মরে, তুমি দাড়াইরা দেখিতেন্ডু ?” এই বলিয়। প্রতাপ সিপাহীকে এক পদাঘাত করিলেন ; সেই এক পদাঘাতে সিপাহী পান্সী হইতে পড়িয়া গেল। তারের দিকে সিপাহী পড়িল । “স্ত্রীলোককে রক্ষা কর” বলিয়। প্রতাপ অপর দিকে জলে ঝাপ দিলেন । সস্তরণপটু শৈবলিনী আগে অাগে সীতার দিয়! টলিল। প্রভাপ তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সন্তরণ করির চলিলেন । “কয়েদী ভাগিল" পলিস। পশ্চাতের শাম্বা ডাকিল এবং প্রতাপকে লক্ষ্য করিম বন্দুক উঠাইল । তখন প্রস্তাপ সাভার দিতেছেন । প্রতাপ ডাকিয়! বুলিলেন, “ভল্ল মাষ্ট—পলাই নাই । এষ্ট স্ত্রীলোকটাকে উঠাইব—সম্মুখে স্বাহত। কি প্রকারে দেখিব ? তুষ্ট বাপু হিন্দু-বুঝিয়। লক্ষ্মহত। করিস " সিপাহী বন্দুক - ত করিল। এই সময়ে শৈবলিনা সৰ্ব্বশেষের নৌকার নিকট দিয়া সন্তরণ করিয়া যাঙ্গীতছিল । সেখানি দেখিয়। শৈবলিন অকস্মাৎ চমকিয় উঠিল। দেখিল যে, যে নৌকার শৈবলিন লরেন্স ফক্টরের সঙ্গে বাস করিয়াছিল, এ সেক্ট নৌক । শৈবলিনা কম্পিত হইয়। দৃষ্টিপাত করিল। দেখিল, তাeার ছাদে, জ্যোংস্কার আলোকে ক্ষুদ্র পালঙ্কের উপর একটি সাহেব অদ্ধ শয়ানাবস্থায় রচিয়াছে । উজ্জল চন্দ্র রশ্মি তাহার মুখমণ্ডলে পড়িয়াছে । শৈবলিনী চীংকার শব্দ করিল—দেখিল, পালঙ্কে লরেন্স ফষ্টর । লরেন্স ফষ্টরও সস্তরণকারিণীর প্রতি দৃষ্টি করিতে করিতে চিনিল—শৈবলিনী । লরেন্স ফষ্টরও চীৎকার করিয়া বলিল, “পাকৃড়ে ! পাকৃড়ে ! হামার বিবি ?" ফষ্টর শীর্ণ, রুগ্ন, দুৰ্ব্বল, শয্যাগত, উত্থানশক্তিরহিত । ক্ষণকাল তৎপ্রতি । ফষ্টরের শব্দ শুনিয়া ঢারি পাচ জন শৈবলিনীকে পরিবার জন্য জলে ঝাপ দিয়া পড়িল । প্রতাপ তখন তাহাদিগের অনেক আগে । তাহার প্রতাপকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “পাক্‌ড়ো ! পাকুড়ো ! ফষ্টর সাহেব ইনাম দেগ৷ ” প্রতাপ মনে মনে বলিল, “ফক্টর সাহেবকে আমিও একবার ইনাম দিয়াছি—ইচ্ছ। আছে, আর একবার দিব।” প্রকাপ্তে ডাকিয়া বলিল, “আমি পরিতেছি, তোমরা উঠ ।” এই কথায় বিশ্বাস করিয়া সকলে ফিরিল। ফষ্টর বুঝে নাই সে, অগ্রবর্তী ব্যক্তি প্রতাপ । ফষ্টরের মস্তিদ্ধ তখনও নীরোগ হয় নাই । - সষ্ঠ পরিচ্ছেদ আগাপ জলে সাতার দুই জনে সাতারিয়া অনেক দূর গেল। কি মনোহর দৃশু ! কি সুখের সাগরে সাতার ! এই অনন্তদেশব্যাপিনী বিশালহৃদয়, ক্ষুদ্রবীচিমালিনী, নীলিমাময়ী তটিনীর বক্ষে, চন্দ্রকর সাগরমধ্যে ভাসিতে ভাসিতে সেই উৰ্দ্ধস্থ অনন্তনীলসাগরে দৃষ্টি পড়িল । তখন প্রতাপ মনে করিল, কেনই বা মনুষ্ঠ অদৃষ্টে ঐ সমুদে সাতার নাই ? কেনই ব৷ মান্তসে ঐ মেঘের তরঙ্গ ভাঙ্গিতে পারে ন! ? কি পুণ্য করিলে ঐ সমুদে সস্তরণকারী জীব হইতে পারি ? স তার ? কি ছার ক্ষুদ্র পথিৰ নদীতে সাতার ! জন্মিয়৷ অবপি এই হ্রস্ত কালসমুদে সাতার দিতেছি, তরঙ্গ ঠেলিয়। তরঙ্গের উপর ফেলিতেছি—তৃণবৎ তরঙ্গে তরঙ্গে বে:াইতেছি--অfবার সাতার কি ? শৈবলিনী ভাবিল, এ জলের ত তল আছে—আমি ষে অতল জলে ভাসিতেছি । তুমি গ্রান্স কর, না কর, তাই বলিয়া ত জড়প্রকৃতি ছাড়ে ন-সৌন্দর্য ত লুকাইয়া রয় না । তুমি যে সমুদ্রে সীতার দাও না কেন, জল নীলিমার মাধুর্য বিরক্ত হয় ন! -ফুদ্র বাঁচির মালা ছিড়ে না, --তারা তেমনি জলে--তীরে বৃক্ষ তেমনই দোলে— জলে চাদের আলো তেমনই খেলে । জড়-প্রকৃতির দৌরাত্ম্য ! স্নেহময়ী মাতার স্যায় সকল সময়েই আদর করিতে চায় । এ সকল কেবল প্রতাপের চক্ষে । শৈবলিনীর চক্ষে নহে । শৈবলিনী নৌকার উপর যে রুগ্ন, শীর্ণ, শ্বেত মুখমণ্ডল দেখিয়াছিল, তাহার মনে কেবল