পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্থ খণ্ড প্রায়শ্চিত্ত প্রথম পরিচ্ছেদ প্রতাপ কি করিলেন ? প্রতাপ জমাদার এবং প্রতাপ দস্থ । আমরা ষে সময়ের কথা বলিতেছি, সে সময়ের অনেক জমীদারই দম্য ছিলেন । ডারুষ্টন বলেন, মানবজাতি বানরদিগের প্রপৌত্র । এ কথায় যদি কেহ রাগ ন৷ করিয়া থাকেন, তবে পূৰ্ব্বপুরুষগণের এই অখণতি শুনিয়া, বোধ হয়, কোন জমীদার আমাদের উপর রাগ করিবেন না ; বাস্তবিক দস্থ বংশে জন্ম অগৌরবের কথ। বলিয়। বোধ হয় না কেন না, অন্যত্র দেখিতে পাই, অনেক দনুবংশজ তই গৌরবে প্রধান । তৈমুরলঙ্গ নামে বিখ্যাত দক্ষ্যর পরপুরুষেরাই বংশমর্যাদায় পৃথিবীমপে শ্রেষ্ঠ হইয়াছিলেন । ইংলণ্ডে যাহার। বংশমর্যাদার বিশেষ গৰ্ব্ব করিতে চাহেন, তাহার। নৰ্ম্মান বা স্কন্দেনেবীয় নাবিক দক্ষুদিগের বংশোদ্ভব বলিয়া আত্মপরিচয় দেন । প্রাচীন ভারতে কুরুবংশেরই বিশেষ মর্যাদা ছিল ; তাহার। গোচোর ; বিরাটের উত্তরগোগৃহে গোরু চুরি করিতে গিয়াছিলেন । তুষ্ট এক বাঙ্গালী জমাদারের এরূপ কিঞ্চিৎ বংশমর্যাদা আছে । তবে অন্যান্য প্রাচীন জমীদারের সঙ্গে প্রতাপের দস্থ্যতার কিছু প্রভেদ ছিল । আত্মসম্পত্তিরক্ষার জন্য বা দুৰ্দ্ধাস্ত শত্রুর দমন জন্তই প্রতাপ দস্তুদিগের সাহায্য গ্ৰহণ করিতেন । অনর্থক পরস্বাপহরণ ব! পরপীড়ন জন্য করিতেন না ; এমন কি, তৰ্বল বা পীড়িত ব্যক্তিকে রক্ষা করিয়া পরোপকার জন্যই দস্থ্যতা করিতেন। প্রতাপ আবার সেই পথে গমনোপ্তত হইলেন । যে রাত্রে শৈবলিনী ছিপ ত্যাগ করিয়া পলাইল, সেই রাত্রি-প্রভাতে প্রতাপ নিদ্র। হইতে গাত্ৰোখান করিয়া, রামচরণ আসিয়াছে দেখিয়া আনন্দিত হইলেন ; কিন্তু শৈবলিনীকে ন| দেখিয়া চিস্তিত হইলেন । কিছু কাল তাহার প্রতীক্ষা করিয়া তাহাকে ন। দেখিয়া, তাহার অনুসন্ধান আরম্ভ করিলেন । গঙ্গাতীরে অনুসন্ধান করিলেন, পাইলেন না । অনেক বেলা হইল। প্রতাপ নিরাশ হইয়া সিদ্ধান্ত করিলেন যে, শৈবলিনী ডুবিয়া মরিয়াছে। প্রতাপ জানিতেন, এখন তাহার ডুবিয়। মরা অসম্ভব নহে । প্রতাপ প্রথমে মনে করিলেন, “আমিই শৈবলিনীর মৃত্যুর কারণ " কিন্তু ইহাও ভাবিলেন, “আমার দে{য কি ? আমি ধৰ্ম্ম ভিন্ন অধৰ্ম্ম পথে যাই নাই , শৈবলিনী যে জন্য মরিয়াছে, তাহ আমার নিবার্য কারণ নহে ।" অতএব প্রতাপ নিজের উপর রাগ করিবার কারণ পাইলেন না। চন্দ্রশেখরের উপর কিছু রাগ করিলেন-–চন্দ্রশেখর কেন শৈবলিনাকে বিবাহ করিয়াছিল ? রূপসার উপর একটু রাগ করিলেন, কেন শৈবলিনীর সঙ্গে প্রতাপের বিবাহ ন হইয়া রূপসীয় সঙ্গে বিবাহ হইয়াছিল ? মুন্দরীর উপর আরও একটু রাগ করিলেন--সুন্দরা তাহাকে না পাঠাইলে, প্রতাপের সঙ্গে শৈবলিনীর গঙ্গাসস্তরণ ঘটিত ন], শৈবলিনীও মরিত না । কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষ। লরেন্স ফষ্টরের উপর রাগ হইল—সে শৈবলিনীকে গৃহত্যাগিনী না করিলে, এ সকল কিছুষ্ট ঘটিত না । ইংরেজজাতি বাঙ্গালায় ন। আসিলে শৈবলিনা লরেন্স ফষ্টরের হাতে পড়িত ন। । অতএব ইংরেজজাতির উপর প্রতাপের অনিবাৰ্য্য ক্রোধ জন্মিল। প্রতাপ সিদ্ধাস্ত করিলেন, ফষ্টরকে আবার ধৃত করিয়া, বধ করিয়া, এবার অগ্নিসৎকার করিতে হইবে ; নহিলে সে আবার বঁচিবে—গোর দিলে মাটী ফুড়িয়া উঠিতে পারে । দ্বিতীয় সিদ্ধাস্ত এই করিলেন যে, ইংরেজ জাতিকে বাঙ্গালা হইতে উচ্ছেদ করা কৰ্ত্তব্য । কেন না, ইহাদিগের মধ্যে অনেক ফষ্টর আছে । - এইরূপ চিন্ত| করিতে করিতে, প্রতাপ সেই ছিপে মুঙ্গেরে ফিরিয়া গেলেন । প্রতাপ দুর্গমধ্যে গেলেন । দেখিলেন, ইংরেজের সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ হইবে, তাহার উদ্যোগের বড় ধুম পড়িয়া গিয়াছে।