পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نوئ পড়িতেছে—সম্মুখে শূন্ত পাত্র পড়িয়া আছে—দলনী বিষপান করিয়াছে। মহম্মদ তকি জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ কিসের পাত্র পড়িয়া আছে ?” দলনী বলিলেন, “ও বিষ। আমি তোমার মত নিমকহারাম নহি, প্রভুর আজ্ঞা পালন করিয়া থাকি। তোমার উচিত—অবশিষ্ট পান করিয়া আমার সঙ্গে আইস ” মহম্মদ তকি নিঃশব্দে দাড়াইয়া রহিল । দলনী ধীরে ধীরে শয়ন করিল। চক্ষু বুজিল । সব অন্ধকার হইল। দলনী চলিয়া গেল ।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ সম্রাট্র ও বরাটু মীর কাসেমের সেনা কাটোয়ার রণক্ষেত্রে পরাভূত হইয়া হটিয়া আসিয়াছিল । ভাঙ্গ। কপাল গিরিয়ার ক্ষেত্রে আবার ভাঙ্গিল—আবার ষবনসেন ইংরেজের বাহুবলে, বায়ুর নিকট ধূলিরাশির দ্যার তাড়িত হইয়। ছিন্ন-ভিন্ন হুইয়া গেল । ধবংসাবশিষ্ট সৈন্তাগণ আসিয়া উদয়নালায় আশ্রয় গ্রহণ করিল । তথায় চতুষ্পাশ্বে খাদ প্রস্তুত করিয়া যবনের ইংরেজ সৈন্তের গতিরোধ করিতেছিলেন । মীর কাসেম স্বয়ং তথায় উপস্থিত হইলেন । তিনি আসিলে সৈয়দ আমীর হোসেন একদা জানাইল যে, এক জন বন্দী তাহার দর্শনার্থ বিশেষ কাতর। তাহার কোন বিশেষ নিবেদন আছে-হুজুরে নহিলে তাহা প্রকাশ করিবে না । মীর কাসেম জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কে ?” আমীর হোসেন বলিলেন, “এক জন স্ত্রীলোক – কলিকাতা হইতে আসিয়াছে। ওয়ারেন হেষ্টিংস সাহেব পত্র লিখিয়া তাহাকে পঠাইয়া দিয়াছেন । সে বাস্তবিক বন্দী নহে। যুদ্ধের পূর্বের পত্র বলিয়া অধীন তাহা গ্রহণ করিয়াছে। অপরাধ হইয়া থাকে, গোলাম হাজির আছে।” এই বলিয়া আমীর হোসেন পত্র পড়িয়া নবাবকে শুনাইল । ওয়ারেন হেষ্টিংস লিখিয়াছিলেন, “এ স্ত্রীলোক কে, তাহা আমি চিনি না, সে নিতান্ত কাতর হইয়া অামার নিকটে আসিয়া মিনতি করিল যে, কলিকাতায় সে নিঃসহায়, আমি যদি দয়া করিয়া নবাবের নিকট পাঠাইয়া দিই, তবে সে রক্ষা পায় । আপনাদিগের বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী সঙ্গে আমাদিগের যুদ্ধ উপস্থিত হইতেছে, কিন্তু আমাদের জাতি স্ত্রীলোকের সঙ্গে বিবাদ করে না । এ জন্য ইহাকে আপনার নিকট পাঠাইলাম । ভাল মন্দ কিছু জানি না .।” নবাব পত্র শুনিয়া স্ত্রীলোককে সম্মুখে আনিতে অনুমতি দিলেন । সৈয়দ আমীর হোসেন বাহিরে গিয়া ঐ স্ত্রীলোককে সঙ্গে করিয়া আনিলেন—নবাব দেখিলেন—কুলসম। নবাব রুষ্ট হইয়া তাহাকে বলিলেন, “তুই কি চাহিদ বাদী-—মরিবি ?” কুলসমৃ নবাবের প্রতি স্থিরদৃষ্টি করিয়া কহিল, “নবাব ! তোমার বেগম কোথায় ? দলনী বিবি কোথায় ?" আমীর হোসেন কুলসমের বাক্য প্রণালী দেখিয়া ভীত হইল এবং নবাবকে অভিবাদন করিয়া সরিয়া গেল । " মীর কাসেম বলিলেন, “যেখানে সেই পাপিষ্ঠ, তুইও শীঘ্র সেইখানে যাইবি ।” - কুলসম্বলিল, “আমিও, আপনিও । তাই আপনার কাছে আসিয়াছি । পথে শুনিলাম, লোকে রটাইতেছে, দলনী বেগম আত্মহত্যা করিয়াছে । সত্য কি ?'+ নবাব । আত্মহত্যা ! রাজদণ্ডে সে মরিয়াছে । তুই তাহার দুষ্কৰ্ম্মের সহায়—তুই কুকুরের দ্বারা ভুক্ত হুইবি ।” কুলসমৃ আছড়াইয় পড়িয়া আৰ্ত্তনাদ করিয়৷ উঠিল এবং যাহা মুখে আসিল, তাহ বলিয়। নবাবকে গালি দিতে আরম্ভ করিল। শুনিয়া চারিদিক্ হইতে সৈনিক, ওমরাহ, ভৃত্য, রক্ষক প্রভৃতি আসিয়া পড়িল —এক জন কুলসমের চুল ধরিয়া তুলিতে গেল । নবাব_ নিষেধ করিলেন—তিনি বিস্মিত হইয়াছিলেন। সে সরিয়া গেল। তখন কুলসমৃ বলিতে লাগিল, “আপনার সকলে আসিয়াছেন, ভালই হইয়াছে। আমি এক অপূৰ্ব্ব কাহিনী বলিব, শুনুন । আমার এক্ষণই বধাজ্ঞা হুইবে— আমি মরিলে আর কেহ তাহ শুনিতে পাইবে না, এই সময় শুনুন ।” “শুনুন, সুবে বাঙ্গালী-বেহারের মীর কাসেম নামে এক মুর্থ নবাব আছে। দলনী নামে তাহার বুেগম ছিল। সে নবাবের সেনাপতি গুরুগন খার ভগিনী।” শুনিয়া কেহ আর কুলুসমের উপর আক্রমণ করিল নী—সকলেই পরস্পরের মুখের দিকে চাহিতে লাগিল —সকলেরই কৌতুহল বাড়িতে লাগিল। নবাবও কিছুই বলিলেন না–কুলসম্বলিতে লাগিল, “গুরুগম খ ও দৌলত উল্লেচ্ছা ইস্পাহান হইতে পরামর্শ