পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΨΨ, শুণেক পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ সকল কথা কাহাকেও বল নাই কেন ?” শৈ । আমার কথায় কে বিশ্বাস করিবে ? চ । এ সকল কথা কে জানে ? শৈ । ফষ্টর আর পাৰ্ব্বতী । চ। পাৰ্ব্বতী কোথায় ? শৈ। মাসাবধি হইল মুঙ্গেরে মরিয়া গিয়াছে। চ। ফষ্টর কোথায় ? শৈ । উদয়নালায় নবাবের শিবিরে । চন্দ্রশেখর কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া পুনরায় জজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার রোগের কি প্রতীকার হইবে—বুঝিতে পার ?” শৈ । আপনার যোগবল আমাকে দিয়াছেন-- তৎপ্রসাদে জানিতে পারিতেছি—আপনার শ্ৰীচরণরুপায়, আপনার ঔষধে আরোগ্য লাভ করিব । চ । আরোগ্য লাভ করিলে কোথায় যাইতে ইচ্ছা কর ? শৈ । ভয় করে । চ । মরিতে চাও কেন ? শৈ। এ সংসারে আমার স্থান কোথায় ? চ । কেন, আমার গৃহে ? শৈ। আপনি আর গ্রহণ করিবেন ? চ। যদি করি ? শৈ। তবে কায়মনে আপনার পদসেবা করি ; কিন্তু আপনি কলঙ্কা হইবেন । এই সময়ে দূরে অশ্বের পদশব্দ শুনা গেল। চন্দ্রশেখর জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার যোগবল নাই, রমানন্দ স্বামীর যোগবল পাইয়াছ,—বল, ও কিসের শব্দ ? শৈ । ঘোড়ার পায়ের শব্দ । চ । কে আসিতেছে ? শৈ। মহম্মদ ইবৃফান—মবাবের সৈনিক । চ । কেন আসিতেছে ? শৈ । আমাকে লইয়া যাইতে—নবাব আমাকে দেখিতে চাহিয়াছেন। চ। ফষ্টর সেখানে গেলে পরে তোমাকে দেখিতে চাহিয়াছেন, না তৎপূৰ্ব্বে ? শৈ । না । দুই জনকে আনিতে এক সময় আদেশ করেন । চ । কোন চিন্ত নাই, নিদ্রা যাও । এই বলিয়। চন্দ্রশেখর সকলকে ডাকিলেন । তাহারা আসিলে বলিলেন যে, “এ নিদ্রা যাইতেছে । যদি বিষ পাই ত খাই—কিন্তু নরকের নিদ্রাভঙ্গ হইলে এই পাত্রস্থ ঔষধ খাওয়াইও । সম্প্রতি নবাবের সৈনিক আসিতেছে—কল্য শৈবলিনীকে লইয়। ষাইবে । তোমর সঙ্গে যাইও ।” - সকলে বিক্ষিত ও ভীত হইল। চন্দ্রশেখরকে জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ইহাকে নবাবের নিকট লইয়া যাইবে ?” - চন্দ্রশেখর বলিলেন, “এখনই শুনিবে, চিন্তা নাই ।” মহম্মদ ইবৃফান আসিলে, প্রতাপ তাহার অভ্য র্থনায় নিযুক্ত হইলেন। চন্দ্রশেখর আদ্যোপান্ত সকল কথা রমানন্দ স্বামীর কাছে গোপনে নিবেদিত করিলেন । রমানন্দ স্বামী বলিলেন, “আগামী কল্য আমাদের দুই জনকেই নবাবের দরবারে উপস্থিত থাকিতে হইবে ।" সপ্তম পরিচ্ছেদ দরবারে বৃহৎ তাম্বুর মধ্যে বার দিয়া বাঙ্গালার শেষ রাজা বসিয়াছেন—শেষ রাজী, কেন না, মীর কাসেমের পর যাহারা বাঙ্গালার নবাব নাম ধারণ করিয়াছিলেন, র্তাহারা কেহ রাজত্ব করেন নাই । বার দিয়া মুক্তাপ্রবাল-রজত কাঞ্চন'শোভিত উচ্চাসনে নবাব কাসেম আলি খ মুক্তাহীরকমণ্ডিত হইয়া, শিরোদেশে উষ্ণীষোপরি উজ্জ্বলতম স্বৰ্য্যপ্রভ হীরকখণ্ড রঞ্জিত করিয়া দরবারে বসিয়াছেন । পার্শ্বে শ্রেণীবদ্ধ হইয়। ভৃত্যুবৰ্গ যুক্তহস্তে দণ্ডায়মান—অমাত্য বর্গ অনুমতি পাইয়া, জানুর দ্বারা ভূমি-স্পর্শ করিয়া নীরবে বসিয়া আছেন । নবাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “বন্দিগণ উপস্থিত ?” মহম্মদ ইবৃফান বলিলেন, “সকলেই উপস্থিত ।” নবাব প্রথমে লরেন্স ফক্টরকে আনিতে বলিলেন । লরেন্স ফষ্টর আনীত হইয়া, সমুখে দণ্ডায়মান হইল। নবাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?” লরেন্স ফষ্টর বুঝিয়াছিল যে, এবার নিস্তার নাই । এত কালের পর ভাবিল, "এত কাল ইংরেজ নামে কালি দিয়াছি-এক্ষণে ইংরেজের মত মরিব ? “আমার নাম লরেন্স ফষ্টর ” নবাব । তুমি কোন জাতি ? ফষ্টর । ইংরেজ । ন। ইংরেজ আমার শত্রু । তুমি শক্র হইয়। কেন আমার শিবিরে আসিয়াছিলে ? 象