পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ob" ন। তুমি চিনিলে কি প্রকারে ? ফ। আপনার অভিপ্রায়ে যে দণ্ড থাকে, অনুমতি করুন। আমি উত্তর দিব না । ন। আমার অভিপ্রায়, কুকুরদংশনে তোমার भूङ्क) श्रब ।। ফক্টরের মুখ বিশুষ্ক হইল—হস্তপদ কঁাপিতে লাগিল । কিছুক্ষণে ধৈর্য্য প্রাপ্ত হইল—বলিল, “আমার মৃত্যুই যদি আপনার অভিপ্রেত হয়, অন্তপ্রকার মৃত্যু আজ্ঞা করুন ।” - ন। না । এ দেশে একটি প্রাচীন দণ্ডেব কিংবদস্তী আছে । অপরাধীকে কটি পর্যন্ত মৃত্তিকামধ্যে প্রোথিত করে, তাহার পরে তাহীকে দংশনার্থ শিক্ষিত কুকুর নিযুক্ত করে । কুকুরে দংশন করিলে ক্ষতমুখে লবণ বৃষ্টি করে । কুকুরের মাংসভোজনে পরিতৃপ্ত হইলে চলিয়া যায়, অৰ্দ্ধভক্ষিত অপরাধী অৰ্দ্ধমৃত হইয়া প্রোথিত থাকে । কুকুরদিগের ক্ষুধা হুইলে তাহার। আবার আসিয়া অবশিষ্ট মাংস খায়। তোমার ও তকি গার প্রতি সেই মৃত্যুর বিধান করিলাম । বন্ধনযুক্ত তকি খ আৰ্ত্ত পশুর স্যায় বিকট চীৎকার করিয়া উঠিল। ফষ্টর জানু পাতিয়া ভূমে বসিয়া যুক্তকরে উৰ্দ্ধনয়নে জগদীশ্বরকে ডাকিতে লাগিল । মনে মনে বলিতে লাগিল, “আমি কখনও তোমাকে ডাকি নাই, কখনও তোমাকে ভাবি নাই, চিরকাল পাপই করিয়াছি। তুমি যে আছ, তাহা কখনও মনে পড়ে নই ; কিন্তু আজি নিঃসহায় বলিয়া তোমাকে ডাকিতেছি । হে নিরুপায়ের উপায় । অগতির গতি ! আমায় রক্ষ কর । কেহ বিস্মিত হইও না । যে ঈশ্বরকে ন মানে, সেও বিপদে পড়িলে তাহাকে ডাকে –ভক্তিভাবে ডাকে। ফষ্টরও ডাকিল । নয়ন বিনত করিতে ফক্টরের দৃষ্টি তাবুর বাহিরে পড়িল । সহসা দেখিল, এক জটাজুটধারী, রক্তবস্ত্রপরিহিত, শ্বেতশৃশ্রবিভূষিত, বিভূতিরঞ্জিত পুরুব দাড়াইয়া তাহার প্রতি দৃষ্টি করিতেছেন । ফষ্টর সেই চক্ষুপ্রতি স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়৷ রহিল—ক্রমে তাহার চিত্ত দৃষ্টির বশীভূত হইল। ক্রমে চক্ষু বিনত করিল— যেন দারুণ নিদ্রায় তাহার শরীর অবশ হুইয়। আসিতে লাগিল। বোধ হইতে লাগিল যেন, সেই জটাজটধারী পুরুষের ওষ্ঠাধর বিচলিত হইতেছে—যেন তিনি কি বলিতেছেন। ক্রমে সজল জলদ-গম্ভীর কণ্ঠধ্বনি যেন তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল। ফষ্টর শুনিল, যেন কেহ বলিতেছে, “আমি তোকে কুকুরের দণ্ড হইতে উদ্ধার / বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী করিব । আমার কথার উত্তর দে । শৈবলিনীর জার ?” ফষ্টর একবার সেই ধূলিধূসরিতা উন্মাদিনী-প্রতি দৃষ্টি করিল—বলিল, “না।” সকলে শুনিল, “না ! আমি শৈবলিনীর জার নহি ।” সেই বজ্ৰগম্ভীর শব্দে পুনৰ্ব্বার প্রশ্ন হইল। নবাব প্রশ্ন করিলেন, কি চন্দ্রশেখর, কি কে করিল, ফষ্টর তাহা বুঝিতে পারিল না—কেবল শুনিল যে, গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন হইল, “তবে শৈবলিনী তোমার নৌকায় ছিল কেন ?" ফষ্টর উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “আমি শৈবলিনীর রূপে মুগ্ধ হইয়া, তাহাকে গৃহ হইতে হরণ করিয়া ছিলাম । আমার নৌকায় রাখিয়াছিলাম। মনে করিয়াছিলাম যে, সে আমার প্রতি আসক্ত । কিন্তু দেখিলাম যে, তাহা নহে ; সে আমার শত্রু। নৌকায় প্রথম সাক্ষাতেই সে ছুরিকা নির্গত করিয়৷ আমাকে বলিল, “তুমি যদি আমার কামরায় আসিবে, তবে এই ছুরিতে দুই জনেই মরিব । আমি তোমার মাতৃতুল্য ? আমি তাহার নিকট যাইতে পারি নাই, কখনও তাহাকে স্পর্শ করি নাই ।” সকলে এ কথা শুনিল । চন্দ্রশেখর জিজ্ঞাস করিলেন, “এই শৈবলিনীকে তুমি কি প্রকারে স্নেচ্ছের অন্ন খাওয়াইলে ?” ফষ্টর কুষ্ঠিত হইয়া বলিল, “এক দিনও আমার অন্ন ব। আমার স্পৃষ্ট অন্ন সে খায় নাই, সে নিজে রাধিত ।" প্রশ্ন ! কি রাধিত ? সষ্টর । কেবল চাউল—অল্লের সঙ্গে দুগ্ধ ভিন্ন আর কিছুই খাইত না ! প্রশ্ন । জল ? ফ। গঙ্গা হইতে আপনি তুলিত । এমন সমযে সহসা-শব্দ হইল, “ধুরূম ধুব্ধম্ ধুম্‌ তুই কি धूस् ! নবাব বলিলেন, “ও কি ও ?" ইবৃফান কাতরস্বরে বলিল, “আর কি ? ইংরেজের কামান । তাহার। শিবির আক্রমণ করিয়াছে।” সহসা তাম্বু হইতে লোক ঠেলিয়া বাহির হইতে লাগিল । "ভূম্ দুডুম ডুম্‌ আবার কামান গজ্জিতে লাগিল । আবার । বহুতর কামান একত্রে শব্দ করিতে লাগিল—ভীমনাদ লম্ফে লম্ফে নিকটে আসিতে লাগিল । রণবাদ্য বাজিল, চারিদিক হইতে তুমুল কোলাহল উখিত হইল। অশ্বের পদাঘাত, অস্ত্রের ঝনঝনা–সৈনিকের জয়ধ্বনি, সমুদ্রতরঙ্গবৎ গর্জিয়া উঠিল । ধূমরাশিতে গগন প্রচ্ছন্ন হইল—