পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চন্দ্রশেখর দিগন্তু ব্যাপ্ত হইল। স্বযুপ্তিকালে যেন জলোচ্ছ্বাসে উছলিয়। ক্ষুব্ধ সাগর আসিয়া বেড়িল । সহসা নবাবের অমাত্যবর্গ এবং ভূতগণ টেলাঠেলি করিয়া তাম্বুর বাহিরে গেল—কেহ সমরাভিমুখে— কেহ পলায়নে । কুলসমৃ চন্দ্রশেখর, শৈবলিনী ও ফষ্টর ইহারাও বাহির হইল। তাম্বুমধ্যে এক নবাব ও বন্দী তকি বসিয়া রহিলেন । সেই সময়ে কামানের গোল আসিয়৷ তাম্বুর মধ্যে পড়িতে লাগিল ; নবাব সেই সময়ে স্বীয় কটিবন্ধ হষ্টতে আসি নিস্কোষিত করিয়৷ তকির বক্ষে স্বহস্তে বিদ্ধ করিলেন । তকি মরিল । নবাব ভাস্কুর বাহিরে গেলেন । অষ্টম পরিচ্ছেদ শৈবলিনীকে লইয়া বাহিরে অসিয়৷ চন্দ্রশেখর দেখিলেন, রমানন্দ স্বামী দাড়াইয় আছেন । স্বামী বলিলেন, “চন্দ্রশেখর ! অতঃপর কি ক{রবে ?” চন্দ্রশেখর বলিলেন, “এক্ষণে শৈবলিনীর প্রাণরক্ষা করি কি প্রকারে ? চারিদিকে গোলাবৃষ্টি হইতেছে । চারিদিক ধূমে অন্ধকার কোথায় যাইব ?" রমানন্দ স্বামী বলিলেন, “চিস্ত নাই –দেখিতেছ ন, কোন দিকে যবন সেনাগণ পলায়ন করিতেছে ? যেখানে যুদ্ধারম্ভেই পলায়ন, সেখানে আর রণজয়ের সম্ভাবন কি ? এই ইংরেজ জাতি অতিশয় ভাগবান--- বলবান এবং কৌশলময় দেখিতেছি—বোধ হয়, ইহার এক দিন সমস্ত ভারতবর্ষ অধিকৃত করিবে । চল, আমরা পলায়নপরায়ণ যবনদিগের পশ্চাদ্বত্তী হই, তোমার আমার জন্য চিন্তা নাই, কিন্তু এই বধূর জন্য চিন্তা " তিন গুনে পলায়নোদ্যত যবন সেনার পশ্চাদগামী হইলেন। অকস্মাৎ দেখিলেন, সম্মুখে এক দল সুসজ্জিত অস্ত্রধারী হিন্দুসেনা—রণমত্ত হইয়। দৃঢ় পৰ্ব্বতরঞ্জপথে নির্গত হইয়া ইংরেজরণে সম্মুখীন হইতে যাইতেছে । মধ্যে তাহাদিগের নায়ক অশ্বারোহণে । সকলেই দেখিয় চিনিলেন যে, প্রতাপ । চন্দ্রশেখর প্রতাপকে দেখিয়া বিমন হইলেন । কিঞ্চিত পরে বিমনা হইয়। বলিলেন, প্রতাপ ! এ দুর্জয় রণে তুমি কেন ? ফের !" - “আমি আপনাদিগের সন্ধানেই আসিতেছিলাম । চলুন, নিৰ্ব্বিগ্ন স্থানে আপনাদিগকে রাখিয়া আসি ” VS) এই বলিয়। প্রতীপ তিন জনকে নিজ ক্ষুদ সেনাদলের মধ্যস্থানে স্থাপিত করিয়৷ ফিরিয়৷ চলিলেন । তিনি পর্বতমালামধ্যস্থ নির্গমন-পথ সকল সবিশেষ অবগত ছিলেন । অবিলম্বে তাহাদিগকে সমরক্ষেত্র হইতে দূরে লইয়। গেলেন। গমনকালে চন্দ্রশেখরের নিকট, দরবারে যাই। যাহা ঘটিয়াছিল, তাছা বিস্তারে শুনিলেন । তৎপরে চন্দ্রশেখর প্রতাপকে বলিলেন, ' “প্রতাপ ! তুমি ধন্ত, তুমি যাহা জান, আমিও তাহা জানি ।” প্রতাপ বিস্মিত হইয়। চাহিয়া রহিলেন । চন্দ্রশেখর বাষ্পগদগদকণ্ঠে বলিলেন, “এক্ষণে জানিলাম যে, ইনি নিষ্পাপ । যদি লোকরঞ্জনার্থ কোন প্রায়শ্চিন্তু করিতে হয়, তবে তাহা করিব । করিয়া হহাকে গৃহে লইব । কিন্তু সুখ তার আমার কপালে হুইবে ন৷ ” প্র । কেল, স্বামীর নাই ? চ। এ পর্য্যন্ত নষ্ঠে । প্রতাপ বিমর্ষ হইলেন । তাহার ও আসিল । শৈবলিনী অবগুণ্ঠনমপ্য হইতে তাহা দেখিতেছিল—শৈবলিনা একটু সরিয়। গিয়া, হস্তেঙ্গিতের দ্বাব। প্রতাপকে ৬ কিল –প্ৰতাপ অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া তাহার নিকটে গেলেন । শৈবলিনী অন্যের অশ্রাব্যস্বরে প্রতাপকে বলিল, “আমার একটা কথা কানে কানে শুনিবে ? আমি দূষণীয় কিছুই বলিব না ।" প্রতাপ বিস্মি ত হইলেন ; বাতুলত কি কৃত্রিম ?" শৈ । এক্ষণে বটে ৷ আজি প্রাতে শঘ্য হইতে উঠিয় অবধি সকল কথা বুঝিতে পারিতেছি । আমি কি সত্য সত্যই পাগল হইয়াছিলাম ? প্রতাপের মুখ প্রফুল্ল হইল। শৈবলিন তাহার মনের কথা বুঝিতে পারিয়া ব্যগ্ৰ ভাবে বলিলেন, “চুপ, এক্ষণে কিছু বলিও না । আমি নিজেই সকল বলিব ! কিন্তু তোমার অনুমতিসাপেক্ষ ।" প্র । আমার অনুমতি কেন ? শৈ। স্বামী যদি আমায়ু পুনৰ্ব্বার গ্রহণ করেন, তবে মনের পাপ আবার লুকাইয়। রাখিয়া, তাহার প্রণয়ভাগিনী হওয়া কি উচিত হয় ? يؤه প্র । কি করিতে চাও ? শৈ। পূৰ্ব্বকথা সকল তাহাকে বলিয়া ক্ষমা চাহিব । চন্দ্রশেখরের মুখপানে ঔষধে কোন ফল দর্শে চক্ষে জল বলিলেন, “তোমার