পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্রর গ্রন্থাবলী "ই সুন্দরী ; রমণী সুন্দরী ; ধ্বনিও সুন্দর ; হৃদয়তন্ত্রীমধ্যে সৌন্দর্য্যের লয় উঠিতে লাগিল । রমণী কোন উত্তর না পাইয়া কহিলেন, “আইস ” এই বলিয়৷ তরুণী চলিল, পদক্ষেপ লক্ষ্য হয় না। বসন্তকালে মনানিল সঞ্চালিত শুভ্র মেঘের ন্যায় ধীরে ধীরে অলক্ষ্য পাদবিক্ষেপে চলিল; নবকুমার কলের পুন্তলীর ন্যাস্ত্র সঙ্গে চলিলেন । এক স্থানে একটা ক্ষুদ্র বন পরিবেষ্টন করিতে হইবে ; বনের অন্তরালে গেলে, আর সুন্দরীকে দেখিতে পাইলেন না । বনবেষ্টনের পর দেখেন যে, সম্মুখে কুটার । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ কাপালিকসঙ্গে “কথং নিগডসংযতাসি দ্রতম নয়মি ভবতীমিতঃ---” রত্নাবলী । নবকুমার কুটারমধ্যে প্রবেশ করির দ্বারসংযোজন পূর্বক করতলে মস্তক দিয়া বসিলেন : শীঘ্র আর মস্তকেত্তোলন করিলেন না ! “এ কি দেবী—মান্নবী-ন কাপলিকের মায়। মাত্র !" নবকুমার নিম্পদ হইয়া হৃদয়মধ্যে এই কথার আন্দোলন করিতে লাগিলেন। কিছুই বুঝিতে পারিলেন না । - অন্যমনস্ক ছিলেন বলিয়া, নবকুমার আর একটি ব্যাপার দেখিতে পান নাই । সেই কুটারমধে। তাহার আগমনপূর্বাবধি একখানি কাষ্ঠ জ্বলিতেছিল। পরে যখন অনেক রাত্রে স্মরণ হইল দে, সায়াঙ্গকতা অসমাপ্ত রহিয়াছে—তখন জলান্বেষণ অনুরোধে চিন্ত৷ হইতে ক্ষান্ত হইয়া এ বিষয়ের অসন্তাবিত হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন। শুধু আলো নহে, তণ্ডুলাদি পাকোপযোগী কিছু কিছু সামগ্ৰীও আছে। নবকুমার বিস্মিত হইলেন না—মনে করিলেন যে, এও কপিলিকের কৰ্ম্ম—এ স্থানে বিস্ময়ের বিষয় কি আছে ! “শস্ত্যঞ্চ গৃহমাগতম" মন্দ কথা নহে। “ভোজ্যঞ্চ উদরাগতম বলিলে আরও স্পষ্ট হয় । নবকুমার এ কথার মাহাত্ম্য না বুঝিতেন, এমন নহে । সায়ংকৃত্যু সমাপনস্তে তণ্ডুলগুলি কুটীরমধ্যে প্রাপ্ত এক মৃৎপাত্রে সিদ্ধ করিয়া আত্মসাৎ করিলেন । পরদিন প্রভাতে চৰ্ম্মশয্যা হইতে গাত্ৰোখান করিয়াই সমুদ্রতীরাভিমুখে চলিলেন । পূৰ্ব্বদিনের যাতায়াতের গুণে অদ্য অল্প কষ্টে পথ অনুভূত করিতে পারিলেন । তথায় প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন । কাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন ? পূৰ্ব্বদৃষ্ট মায়াবিনী পুনৰ্ব্বার সে স্থলে যে আসিবেন -এমত আশা নবকুমারের হৃদয়ে কতদূর প্রবল হইয়াছিল, বলিতে পারি না-কিন্তু সে স্থান তিনি ত্যাগ করিতে পারিলেন না । অনেক বেলাতেও তথায় কেহ আসিল ন! । তখন নবকুমার সে স্থানের চারিদিকে ভ্ৰমিয়া বেড়াইতে লাগিলেন ; বৃথা অন্বেষণ মাত্র । মনুষ্যসমাগমের চিহ্নমাত্র দেখিতে পাইলেন না । পুনৰ্ব্বার ফিরিয়া আসিয়া সেই স্থানে উপবেশন করিলেন । স্থৰ্য্য অস্তগত হইল ; অন্ধকার হইয়। আসিতে লাগিল ; নবকুমার হতাশ হুষ্টয়া কুটীরে ফিরিয়৷ আসিলেন । সাম্রাহকালে সমুদ্রতীর ইষ্টতে প্রত্যাগমন করিয়া নবকুমার দেখিলেন ণে, কাপালিক কুটারমধ্যে ধরান্তলে উপবেশন করিয়া নিঃশব্দে আছে : নবকুমার প্রথমে স্বাগত জিজ্ঞাসা করিলেন : তাঙ্গাতে কাপালিক কোন উত্তর করিলেন না ; নবকুমার কহিলেন, “এ পর্যন্ত প্রভুর দর্শনে কি জন্ত বঞ্চিত ছিলাম ?” কাপালিক কহিল, "নিজ বতে নিযুক্ত ছিলাম।” নবকুমার গৃহগমনাভিলাধ ব’ল্প করিলেন । কহিলেন, “পথ অবগত নহি—পাথেয় নাই ; মদিহিতপিধান প্রভুব সাক্ষাৎ লাভ হইলে হইতে পরিবে, এই ভরসায় আছি " কাপালিক কেবলমাত্র কঠিল, “আমার সঙ্গে আগমন কর।” এই বলিরা উদাসীন গাত্ৰেখন করিলেন । বাটা ধাইবার কোন সরূপায় হইতে পাপ্লিবে, প্রত্য!শাম নবকুমারও তাহার পশ্চাদ্বী হইলেন। তখন সন্ধ্যালোক অন্তৰ্হিত হয় নাই-কীপালিক অগ্ৰে অগ্রে, নবকুমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছিলেন । অকস্মাৎ নবকুমারের পৃষ্ঠদেশে কার্গর কোমল কর স্পর্শ হইল । পশ্চাৎ ফিরিয়া যত দেখিলেন, তাহাতে স্পন্দহীন হইলেন। সেই আগুলুফলম্বিন্ত নিবিপ্লকেশ রাশিধারিণী বঙ্গদেবীমূৰ্ত্তি। পূৰ্ব্ববং নিঃশব্দ, নিম্পন্দ । কোথা হইতে এ মূৰ্ত্তি অকস্মাৎ তাহার পশ্চাতে আসিল ! নবকুমার দেখিলেন, রমণী মুখে অঙ্গুলী প্রদান করিয়া আছে। নবকুমার বুঝিলেন যে, রমণী বাক্যদুৰ্ত্তি নিষেধ করিতেছে। নিষেধের বড় প্রয়োজনও ছিল না। নবকুমার কি কথা কহিবেন ? তিনি তথায় চমৎকৃত হইয়া দাড়াইলেন । কাপালিক এ সকল কিছুই দেখিতে পাইল না, অগ্রসর হইয়া চলিয়া