পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8 বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী অধিকারী মনে করিলেন, সকলই বুঝাইলেন । কপালকুণ্ডলা মনে করিলেন, সকলই বুঝিলেন । বলিলেন, “তাহাই হউক । কিন্তু তাহাকে ত্যাগ করিয়৷ যাইতে আমার মন সরিতেছে না । তিনি যে আমাকে এত দিন প্রক্তিপালন করিয়াছেন ।” 'অধি। কি জন্য প্রতিপালন করিয়াছেন, তাহা জান না । স্ত্রীলোকের সতীত্বনাশ না করিলে যে অন্ত্রিক সিদ্ধ হয় না, তাহা তুমি জান না । আমি ও তন্ত্রাদি পাঠ করিয়াছি । মা জগদম্বা জগতের মাত । ইনি সতীর সতীত্ব—সতীর প্রধান । ইনি সতীত্বনাশসংযুক্ত পূজা কখন গ্রহণ করেন না । এই জন্যই আমি মহাপুরুষের অনভিমত সাধিতেছি। তুমি পলায়ন করিলে কদাপি কৃতঘ্ন হইবে না। কেবল এ পর্য্যন্ত সিদ্ধির সময় উপস্থিত হয় নাই বলিয়৷ তুমি রক্ষা পাইয়াছ ! আজি তুমি যে কাৰ্য্য করিয়াছ—তাহতে প্রাণেরও আশঙ্কা । এই জন্য বলিতেছি, পলায়ন কর ভবানীরও এই আজ্ঞা । অভএব যাও । আমার এখানে রাখিবার উপায় থাকিলে রাখিতাম ; কিন্তু সে ভরসা যে নাই, তাহা ত জান । কপা । বিবাহই হউক । এই বলিয়া উভয়ে মন্দির হইতে বহির্গত হইলেন । এক কক্ষমধ্যে কপালকুণ্ডলাকে বসাইয়। অধিকারী নবকুমারেব শষ্যা-সন্নিধানে গিয়া তাহার শিয়রে বসি লেন । ভিজ্ঞাস করিলেন, “মহাশয় ! নিদ্রিত কি ?” নবকুমারের নিদ্র। যাইবার অবস্থা নহে, নিজদশ। ভাবিতেছিলেন । বলিলেন, “আঞ্জে না ।" অধিকারী কহিলেন, “মহাশয় ! পরিচয়ট লইতে একবার আসিলাম । আপনি ব্রাহ্মণ ?” নব । আজ্ঞ চ | অধি ! কোন শেণী ? নব । রাঢ়ীয় শ্রেণী । অপি ; আমরাও রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ—উৎকলব্রাহ্মণ বিবেচনা করিবেন না । বংশে কুলাচাৰ্য্য, তবে এক্ষণে মায়ের পদাপ্রয়ে আছি । মহাশয়ের নাম ? নব । নবকুমার শর্ক্স । আধি ; নিবাস ? নব । সপ্তগ্রাম । অধি। আপনার কোন গাই ? নব । বন্দ্যঘটী । অধি। কয় সংসার করিয়াছেন ? নব । এক সংসার মাত্র । নবকুমার সকল কথা খুলিয়া বলিলেন না । প্রকৃত পক্ষে তাহার এক সংসারও ছিল না । তিনি রামগোবিন্দ ঘোষালের কন্যা পদ্মাবতীকে বিবাহ করিয়াছিলেন। বিবাহের পর পদ্মাবতী কিছুদিন পিত্রালয়ে রছিলেন ; মধ্যে মধ্যে শ্বশুরালয়ে যাতায়াত করিতেন । যখন র্তাহার বয়স ত্রয়োদশ বৎসর, তখন তাহার পিতা সপরিবারে পুরুষোত্তম দর্শনে গিয়াছিলেন । এই সময়ে পাঠানের আকবর শাহ কর্তৃক বঙ্গদেশ হইতে দূরীভূত হইয়া উড়িষ্যায় সদলে বসতি করিতেছিল । তাহাদিগের দমনের জন্য আকবর শাহ বিধিমতে যত্ন পাইতে লাগিলেন । যখন রামগোবিন্দ ঘোষাল উড়িষ্য হইতে প্রত্যাগমন করেন. তখন মোগল-পাঠানের যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে । আগমনকালে তিনি পথিমধ্যে পাঠান সেনার হস্তে পতিত হয়েন । পাঠানেরা তৎকালে ভদ্রাভদ্রবিচারশূণ্ঠ । তাহার নিরপরাধী পথিকের প্রতি অর্থের জন্য বলপ্রকাশের চেষ্টা করিতে লাগিল । রামগোবিন্দ কিছু উগ্ৰস্বভাব, পাঠানদিগকে কটু কহিতে লাগিলেন । ইহার ফল এই হইল যে, সপরিবারে অবরুদ্ধ হইলেন ; পরিশেষে জাতীয় ধৰ্ম্ম বিসর্জন পূৰ্ব্বক সপরিবারে মুসলমান হইয়া নিষ্কৃতি পাইলেন । রামগোবিন্দ ঘোষাল সপরিবারে প্রাণ লইয়া বাটী আসিলেন বটে, কিন্তু মুসলমান বলিয়। আত্মীয়জনসমাজে এককালীন পরিত্যক্ত হইলেন । এ সময়ে নবকুমারের পিতা বর্তমান ছিলেন, তাহকে সুতরাং জাতিভ্রষ্ট বৈবাহিকের সহিত জাতিভ্রষ্ঠ পুত্রবধূকে ত্যাগ করিতে হইল। আর নবকুমারের সহিত তাহার স্ত্রীর সাক্ষাৎ হইল না । স্বজনত্যক্ত ও সমাজচ্যুত হইয়। রামগোবিন্দ ঘোষাল অপিক দিন স্বদেশে বাস করিতে পারিলেন না । এই কারণেও বটে এবং রাজপ্রসাদে উচ্চপদস্থ হুইবার আকাজক্ষায়ও বটে, তিনি সপরিবারে রাজমহলে গিয়া বসতি করিতে লাগিলেন । ধৰ্ম্মান্তর গ্রহণ করিয়া তিনি সপরিবারে মহম্মদীয় নাম ধারণ করিয়াছিলেন । রাজমহলে যাওয়ার পরে শ্বশুরের বা বনিতার কি অবস্থা হইল, তাহা নবকুমারের জানিতে পারিবার কোন উপায় রহিল না এবং এ পর্য্যস্ত কখন কিছু জানিতেও পারিলেন না। নবকুমার বিরাগবশতঃ আর দারপরিগ্রহ করিলেন না । এই জন্য বলিতেছি, নবকুমারের “এক সংসারও নহে ।” অধিকারী এ সকল বৃত্তান্ত অবগত ছিলেন না। তিনি বিবেচনা করিলেন, 'কুলীনের সস্তানের দুই