পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ ' নবম পরিচ্ছেদ দেবনিকেতলে “কল্প । অলং রুদিতেন ; স্থির। ভব, ষ্টতঃ পস্থানমালোকয় ।" শকুন্তল । প্রাতে অধিকারী নবকুমারের নিকট আসিলেন । দেখিলেন, এখনও নবকুমার শয়ন করেন নুষ্টি । জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কি কৰ্ত্তব্য ?” নবকুমার কহিলেন, “আজি হইতে কপালকুণ্ডল আমার ধৰ্ম্মপত্নী । ঠহার জন্য সংসার ত্যাগ করিভে হয়, তাহাও করিব । কে কন্যা সম্প্রদান করিবে ?” ঘটকচূড়ামণির মুখ হৰ্ষোৎফুল হইল । মনে মনে ভাবিলেন, “এত দিলে জগদম্বার রূপায় আমার কপালিনীর বুঝি গতি হইল।” প্রকাশ্বে বলিলেন, “আমি সম্প্রদান করিব।” অধিকারী নিজ শয়নকক্ষমধ্যে পুনঃপ্রবেশ করিলেন । একটি খুঙ্গীর মধ্যে কয়েকখণ্ড অতি জীর্ণ তালপত্র ছিল ; তাহাতে তাহার তিথিনক্ষত্রাদি নির্দিষ্ট থাকিত । তৎসমুদয় সবিশেষ সমালোচন করিয়া আসিয়া কহিলেন, “আজি যদিও বৈবাহিক দিল নহে-তথাচ বিবাহে কোন বিঘ্ন নাই । গোধূলিলয়ে কন্ঠ সম্প্রদান করিব । তুমি অদ্য উপবাস করিয়৷ থাকিবে মাত্র, কৌলিক আচরণ সকল বাট গিয়; করাইও । এক দিনের জন্য তোম{দিগকে লুকাইয়। রাখিতে পারি, এমন স্থান আছে । আজি যদি তিনি আসেন, তবে তোমাদিগের সন্ধান পাইবেন না । পরে বিবাহন্তে কালি প্রাতে সপত্নীক বাটী যাইও " নবকুমার ইহাতে সন্মত হইলেন । এ অবস্থায় যতদূর সস্তবে, ততদূর যথাশাস্ত্র কার্য্য হইল । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী গোধুলিলগ্নে রের সহিও কাপালিকপালিত সন্ন্যাসিনীর বিবাহ হইল । কাপুলিকের কোন সংবাদ নাই। পরদিন প্রত্যুষে তিন জনে সাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন । অধিকারী মেদিনীপুরের পথ পর্য্যন্ত তাহাদিগকে রাখিয়া আসিবেন । যাত্রাকালে কপালকুণ্ডলা কালী-প্রণামার্থ গেলেন । ভক্তিভাবে প্রণাম করিয়া, পুষ্পপাত্র হইতে একটি অভিন্ন বিল্বপত্র প্রতিমার পাদোপরি স্থাপিত করিয়া তৎপ্রতি নিরীক্ষণ করিয়া রহিলেন । পত্রটি পড়িয়া গেল । কপালকুণ্ডল। নিতান্ত ভক্তিপরায়ণ। বিল্বদল প্রতিমাচরণচ্যুত হইল দেখিয়া ভীত হইলেন ;–এবং অধিকারীকে সংবাদ দিলেন । অধিকারীও বিষণ্ণ হইলেন । কহিলেন, “এখন নিরুপায় । এখন পতিমাত্র তোমার ধৰ্ম্ম । পতি শ্মশানে গেলে তোমাকে সঙ্গে সঙ্গে যাইতে হুইবে । অতএব নিঃশব্দে চল ” সকলে নিঃশব্দে চলিলেন । অনেক বেলা হইলে মেদিনীপুরের পথে আসির উপস্থিত হইলেন । তখন অধিকারী বিদাষ হইলেন । কপালকুণ্ডল৷ কাদিতে লাগিলেন । পুথিবীতে যে জন তাহার একমাত্র সুহৃদ, সে বিদায় হইতেছে । অধিকার ও কাদিতে লাগিলেন। চক্ষের জল মুছিয়। কপালকুণ্ডলীর কালে কীনে কহিলেন, “ম। তুই জানিস, পরমেশ্বরীর প্রসাদে তেীর সস্তানের অর্থের অভাব নাই । হিজলীর ছোট বড় সকলেই তাহার পূজা দেয় । তোর কাপড়ে যাহ। বাধিয়া দি স্নাছি, তাহ। ভোর স্বামীর নিকট দিয়া তোকে পাল্কা করিয়া দিতে বলিস --সন্তান বলিয়া মনে করিস ।” অধিকারী এষ্ট বলিয়। কাঁদিতে কঁাদিতে গেলেন । কপালকুণ্ডলাও কাদিতে কঁাদিতে চলিলেন ।