পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ջb- ইহা তাহার অবিদিত থাকিবে না। দশা কি হুইবে ? পেষ মন প্রায় রোদনোন্মুখী হইয়া কহিল, “তবে কি হইবে ?” মতি কহিলেন, “এক ভরসা আছে। মেহেরউল্লিসার চিত্ত জাৰ্হাগীরের প্রতি কিরূপ ? তাহার ষেরূপ দাঢ্য, তাহাতে যদি সে জাহাগীরের প্রতি অনুরাগিণী না হইয়া স্বামীর প্রতি যথার্থ স্নেহশালিনী হুইয়া থাকে, তবে জাহাগীর শত শের আফগান বধ করিলেও মেহের-উন্নিসাকে পাইবেন না। আর যদি মেহের-উন্নিস জার্তাগীরের যথার্থ অভিলাষিণী হয়, তবে আর কোন ভরসা নাই ।” পে । মেহের-উন্নিসার মন কি প্রকারে জানিবে ? মতি হাসিয়া কহিলেন, “লুৎফউন্নিসার অসাধ্য কি ? মেহের-উল্লিস। আমার বাল্যসখী—কালি বৰ্দ্ধমানে গিয়া তাহার নিকট দুই দিন অবস্থিতি করিব ” পে । যদি মেহের-উন্নিসা বাদশাহের অনুরাগিণী না হন, তাহা হইলে কি করিবে ? ম। পিত কহিয়া থাকেন, বিধীয়তে ” উভয়ে ক্ষণেক নীরব হইয়া রহিলেন । ঈষৎ হাসিতে মতির ওষ্ঠাধর কুঞ্চিত হইতে লাগিল। পেষমন জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিতেছ কেন ?" মতি কহিলেন, “কোন নুতন ভাব উদয় হইতেছে।” পে । কি নুতন ভাব ? মতি তাহা পেষ মনকে বলিলেন না । আমরাও তাহা পাঠককে বলিব পশ্চাৎ প্রকাশ পাইবে । তখন আমার "ক্ষেত্রে কৰ্ম্ম তৃতীয় পরিচ্ছেদ প্রতিযোগিনী গৃহে "শুমোদন্তে ন হি ন হি ন হি প্রাণনাথো মমাস্তি ।” —উদ্ধবদূত | এ সময়ে শের আফগান বঙ্গদেশের স্ববাদারের অধীনে বৰ্দ্ধমানের কৰ্ম্মাধ্যক্ষ হইয়া অবস্থিতি করিতেছিলেন । মতিবিবি বৰ্দ্ধমানে আসিয়া শের আফগানের আলয়ে উপনীত হইলেন । শের আফগান সপরিবারে র্তাহাকে অত্যন্ত সমাদরে তথায় অবস্থিতি করাইলেন । যখন শের অফগান এবং তাছার স্ত্রী মেহের-উন্নিস আগ্ৰায় অবস্থিতি করিতেন, তখন মতি র্তাহাদিগের নিকট বিশেষ পরিচিত ছিলেন । মেহেরউন্নিসার সহিত র্তাহার বিশেষ প্রণয় ছিল, পরে উভয়েই দিল্লীর সাম্রাজ্যলাভের জন্য প্রতিযোগিনী হইয়াছিলেন । এক্ষণে একত্র হওয়ায় মেহের-উল্লিসা মনে ভাবিতে ছেন, “ভারতবর্ষের কর্তৃত্ব কাহার অদৃষ্টি বিধাতা লিখিয়াছেন ? বিধাতাই জানেন, আর সেলিম জানেন, আর কেহ যদি জানে ত সে এই লুৎফউন্নিসা ; দেখি লুৎফউন্নিসা কি কিছু প্রকাশ করিবে ੇ মতিবিবিরও মেহের-উন্নিসার মন জানিবার C531 | মেহের-উন্নিসা তৎকালে ভারতবর্ষমধ্যে প্রধান রূপবতী এবং গুণবতী বলিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। বস্তুতঃ তাদৃশ রমণী ভূমণ্ডলে অতি অল্পই জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । সৌন্দর্য্যে ইতিহাসকীক্তিতা স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে তাহার প্রাধান্ত ঐতিহাসিকমাত্রেই স্বীকার করিয়! থাকেন । কোন প্রকার বিদ্যায় তাৎকালিক পুরুষদিগের মধ্যে বড় অনেকে র্তাহার অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ ছিলেন না। নৃত্যগীতে মেহের-উন্নিসা অদ্বিতীয়া; কবিতারচনায় বা চিত্ৰলেখনেও তিনি সকলের মনোমুগ্ধ করিতেন । র্তাহার সরস কথা তাহার সৌন্দৰ্য্য অপেক্ষ মোহময়ী ছিল । মতিও এ সকল গুণে হীন৷ ছিলেন না । অদ্য এই দুইটি চমৎকারিণী পরস্পরের মন জানিতে উৎসুক হইলেন । মেহেরউন্নিসা খাস কামরায় বসিয়। তসবীর লিখিতেছিলেন । মতি মেহের-উন্নিসার পৃষ্ঠের নিকট বসিয়া চিত্রলিখন দেখিতেছিলেন এবং তাম্বুল চৰ্ব্বণ করিতেছিলেন । মেহের-উন্নিসা জিজ্ঞাসা করিলেন, “চিত্র কেমন হইতেছে ?" মতিবিবি উত্তর করিলেন, “তোমার চিত্র যেরূপ হইয়া থাকে, তাহাই হইতেছে । অন্য কেহ যে তোমার ন্যায় চিত্রনিপুণ নহে, ইহাই দুঃখের বিষয় ।” মেহে। তাই ষদি সত্য হয় ত দুঃখের বিষয় কেন ? ম। অন্যের তোমার মত চিত্রনৈপুণ্য থাকিলে তোমার এ মুখের আদর্শ রাখিতে পারিত। মেহে। কববের মাটীতে মুখের আদর্শ থাকিবে । মেহেরউন্নিসা এই কথা কিছু গাম্ভীর্য্যের সহিত কহিলেন । ম। ভগিনি । আজ মনের ফুৰ্ত্তির এত অল্পত কেন ? মেহে । ফুৰ্ত্তির অল্পতা কই । তবে যে তুমি আমাকে কা’ল প্রাতে ত্যাগ করিয়া যাইবে, তাছাই বা