পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Įk আনন্দমঠ ঐশ্বৰ্য্যাম্বিতা । গন্ধৰ্ব্ব, কিন্নর, দেব, যক্ষ, রক্ষ তাহাকে পূজা করিতেছে । ব্রহ্মচারী অতি গম্ভীর— অতি ভীতস্বরে মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “সকল দেখিতে পাইতেছ?” মহেন্দ্র বলিলেন, “পাইতেছি ।" ব্ৰহ্ম । বিষ্ণুর কোলে কি আছে, দেখিয়াছ ? মহে । দেখিয়াছি । কে উনি ? ব্ৰহ্ম ৷ মা ! মহে ৷ মা কে ? ব্রহ্মচারী বলিলেন, “আমরা ধীর সন্তান ।” মহে ৷ কে তিনি ? ব্ৰহ্ম । সময়ে চিনিবে ; বল—বন্দে মাতরম্ । এখন চল, দেখিবে চল । তখন ব্রহ্মা গ্রী মহেন্দ্রকে কক্ষান্তরে লষ্টয়৷ গেলেন । সেখানে মহেন্দ্র দেখিলেন, এক অপরূপ সৰ্ব্বাঙ্গসম্পন্ন সৰ্ব্বাভরণভূষিত। জগদ্ধাত্রীমূৰ্ত্তি । মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইনি কে ?” ব্ৰহ্ম । ম!—ধ ছিলেন । মহে । সে কি ? ব্ৰহ্ম ৷ ইনি কুঞ্জর, কেশরী প্রভূতি বঙ্গ পশু সকল পদতলে দলিত করিয়৷ বহু পশুর আবাসস্থানে আপনার পদ্মাসন স্থাপিত করিয়াছিলেন । ইনি সৰ্ব্বালঙ্কার-পরিভূষিত হ্রাস্তমন্ত্রী সুন্দরা ছিলেন । ইনি বালার্কবর্ণভা, সকল ঐশ্বর্যশালিমা । ইহাকে প্রণাম কর । মহেন্দ্র ভক্তিভাবে জগদ্ধাত্রীরূপিণী মাতৃভূমিকে প্ৰণাম করিলে পর ব্রহ্মচারী তাহকে এক অন্ধকার সুড়ঙ্গ দেখাইয়া বলিলেন, “এই পথে আইস ” প্রহ্মচারী স্বয়ং আগে আগে চলিলেন । মহেন্দ্র সভয়ে পাছু পাছু চলিলেন। ভূগর্ভস্থ এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কোথা হইতে সামান্ত আলোক আসিতেছিল। সেই ক্ষণালোকে এক কলামু দেখিতে পাইলেন। ব্ৰহ্মচারী বলিলেন, “দেখ, ম য হইয়াছেন।” মহেন্দ্র সভয়ে বলিলেন, “কালা ।” ব্ৰহ্ম । কালী—অন্ধকারসমাচ্ছন্ন। কালিমাময়ী । হৃতসৰ্ব্বস্ব, এই জন্য নগ্নিক । আজ দেশে সৰ্ব্বত্রই শ্মশান— তাই মা কঙ্কালমালিনী । আপনার শিব আপনার পদতলে দলি তেছেন—হায় মা ! ব্রহ্মচারীর চক্ষে দরদর ধারা পড়িতে লাগিল । মহেশ্ৰী জিজ্ঞাসা করিলেন, “হাতে খেটক খপর কেন ?” ব্ৰহ্ম । আমরা সস্তান, অস্ত্র মা'র হাতে এই দিয়াছি মাত্র—বল—বন্দে মাতরম্ । ‘বনে মাতরম্ বলিয়া মহেন্দ্র কালীকে প্রণাম করিলেন । তখন ব্রহ্মচারী বলিলেন, “এই পথে ہنس ag s१ আইস ” এই বলিয়া তিনি দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ আরোহণ করিতে লাগিলেন । সহসা তাহাদিগের চক্ষে প্রাতঃসুৰ্য্যের রশ্মিরাশি প্রভাসিত হইল। চারিদিক্ হইতে । মধুকণ্ঠ পক্ষিকুল গারিয়া উঠিল । দেখিলেন, এক মৰ্ম্মরপ্রস্তরনিৰ্ম্মিত প্রশস্ত মন্দিরের মধ্যে সুবর্ণনিৰ্ম্মিত দশভূজা প্রতিমা নবারুণ-কিরণে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী হইয়া হাসিতেছেন । ব্রহ্মচারী প্রণাম করিয়া বলিলেন,— “এই মা যা হইবেন । দশভুজ দশ দিকে প্রসারিত, তাহাতে নানা আয়ুধরূপে নানাশক্তি শোভিত, পদতলে শক্র বিমৰ্দ্ধিত, পদাশ্রিত বীরকেশরী শক্রনিপীড়নে নিযুক্ত । দিগ ভুঞ্জi"—বলিতে বলিতে সত্যানন্দ গদগদকণ্ঠে কাদিতে লাগিলেন । “দিগ ভুজ।—নানাপ্রহরণ-ধারিণী শক্ৰবিমৰ্দ্দিনী—বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিণী --দক্ষিণে লক্ষ্মী ভাগ্যরূপিণী-বামে বাণী বিদ্যাবিজ্ঞানদায়িনী—সঙ্গে বলরূপী কাৰ্ত্তিকেয়, কার্য্যসিদ্ধিরূপী গণেশ ; এস, আমরা মাকে উভয়ে প্রণাম করি।” তখন দুই জনে যুক্তকরে উৰ্দ্ধমুখে এককণ্ঠে ডাকিতে লাগিলেন,— “সৰ্ব্বমঙ্গল-মঙ্গল্যে শিবে সৰ্ব্বার্থদায়িকে । শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে ” উভয়ে ভক্তিভাবে প্রণাম করিয়া গাত্ৰোখান করিলে মহেন্দ্র গদগদ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা’র এ মূৰ্ত্ত কবে দেখিতে পাইব ?” ব্রহ্মচারী বলিলেন, “ষবে মা’র সকল সস্তান মাকে ম৷ বলিয়া ডাকিবে, সেই দিন" উনি প্রসন্ন হইবেন ।” মহেন্দ্র সহসা জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার স্ত্রীকস্তা কোথায় ?” ব্ৰহ্ম । চল—দেখিবে চল । মহেন্দ্র । তাহাদের একবার মাত্র আমি দেখিয়৷ বিদায় দিব । ব্ৰহ্ম । কেন বিদায় দিবে ? মহেন্দ্র । আমি এই মহামন্ত্র গ্রহণ করিব । ব্ৰহ্ম । কোথায় বিদায় দিবে ? মহেন্দ্র কিয়ৎক্ষণ চিন্ত করিয়া কহিলেন, “আমার গৃহে কেহ নাই, আমার আর স্থানও নাই। এই মহামারীর সময় আর কোথায় বা স্থান পাইব ?” ব্ৰহ্ম । যে পথে এখানে আসিলে, সেই পথে মনিরের বাহিরে ষাও । মন্দির-দ্বারে তোমার স্ত্রী-কন্যাকে দেখিতে পাইবে । কল্যাণী এ পর্য্যস্ত অভুক্ত ; যেখানে তাহারা বসিয়া আছে, সেইখানে ভক্ষ্যসামগ্ৰী পাইবে । তাহাকে ভোজন করাইয়া তোমার যাহা অভিরুচি, তাহা করিও । এক্ষণে আমাদিগের আর কাহারও