পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. ७. " বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী । গিনী আর যুৰিতে পারিলেন না। বলিলেন, :"ত মেয়েটি লক্ষ্মী, রূপেও বটে, কথায়ও বটে । ত৷ যাই দেখি কৰ্ত্তার কাছে, তিনি কি বলেন । তুমি । এখানে বসো মা, বসে৷ ” প্রফুল্ল তখন চাপিয়া বসিল। সেই সময়ে একটি কপাটের আড়াল হইতে একটি চতুর্দশবর্ষীয়া বালিকা, সেও স্বন্দরী, মুখে আড়ঘোমটা—সে প্রফুল্লকে হাতছানি দিয়া ডাকিল । প্রফুল্ল ভাবিল, এ আবার কি ? উঠিয়া বালিকার কাছে গেল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ যখন গৃহিণী ঠাকুরাণী হেলিতে দুলিতে হাতের বাউটির খিল খুঁটিতে খুঁটিতে কৰ্ত্ত মহাশয়ের নিকেতনে সমুপস্থিত, তখন কৰ্ত্ত মহাশয়ের ঘুম ভাঙ্গিয়াছে ; হাতে মুখে জল দেওয়া হইয়াছে, হাত-মুখ মোছ হইতেছে। দেখিয়া কৰ্ত্তার মনটা কাদা করিয়া ছানিয়া লইবার জন্য গৃহিণী ঠাকুরাণী বলিলেন, “কে ঘুম ভাঙ্গাইল ? আমি এত করে বারণ করি, তবু কেউ শোনে না।” কৰ্ত্ত মহাশয় মনে মনে বলিলেন,--“ঘুম ভাঙ্গাইবার আঁধি তুমি নিজে—আজ বুঝি কি দরকার আছে ?” প্রকাশ্বে বলিলেন, “কেউ ঘুম ভাঙ্গায় মাই। বেশ ঘুমাইয়াছি—কথাটা কি ?” গিন্নী মুখখানা হাসি ভরাভরা করিয়া বলিলেন, “আজ একটা কাণ্ড হয়েছে, তাই বলুতে এসেছি।” এইরূপ ভূমিকা করিয়া এবং একটু একটু নথ ও বাউট নাড়া দিয়া—কেন না, বয়স এখনও পয়তাল্লিশ বৎসর মাত্র-গৃহিণী প্রফুল্ল ও তার মাতার আগমন ও কথোপকথনবৃত্তাস্ত আদ্যো পান্ত বলিলেন । বধুর চাদপান মুখ ও মিষ্ট কথাগুলি মনে করিয়া প্রফুল্লর দিকে অনেক টানিয়া বলিলেন । কিন্তু মন্ত্রতন্ত্র কিছুই খাটিল না। কৰ্ত্তার মুখ বৈশাখের মেঘের মত অন্ধকার হইয়া উঠিল । তিনি বলিলেন, “এত বড় ম্পৰ্দ্ধা ! সেই বাগদী বেটী আমার বাড়ীতে ঢোকে ? এখনই ঝাটা মেরে বিদায় কর ।” গিন্নী বলিলেন, “ছি ছি! অমন কথা কি বলুতে আছে ? হাজার হোক-বেটার বউ—আর বাগদীর মেয়ে বা কিরূপে হলো ? লোকে বলুলেই কি হয় ?” গিন্নী ঠাকুরুণ হার কাত নিয়ে খেলতে বসেছেন— “ কাজে কাজেই এই রকম বদরঙ্গ চালাইতে লাগিলেন । - হাতছানি দিয়া ডাকিয়াছিল। কিছুতেই কিছু হইল না, “বাদী বেটীকে বাট মেরে বিদায় কয়,” এই হুকুমই বাহাল রছিল। গিল্পী শেষে রাগ করিয়া বলিলেন, “ঝাটা মারিতে হয়, তুমি মার ; আমি আর তোমার ঘরকন্নার কথায় থাকিব না।” এই বলিয়া গিল্পীও রাগে গর গর করিয়া বাহিরে আসিলেন । যেখানে প্রফুল্লকে রাখিয়া গিয়াছিলেন, সেইখানে আসিয়া দেখিলেন, প্রফুল্ল সেখানে নাই । প্রফুল্ল কোথায় গিয়াছে, তাহ পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। একখানা কপাটের আড়াল হইতে ঘোমটা দিয়া একটি চোঁদ বছরের মেয়ে তাকে প্রফুল্ল সেখানে গেল । প্রফুল্ল সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিবামাত্র বালিকা দ্বার রুদ্ধ করিল। প্রফুল্ল বলিল,“দ্বার দিলে কেন ?” মেয়েটি বলিল, “কেউ না আসে । তোমার সঙ্গে তুটো কথা কব, তাই " প্রফুল্ল বলিল, “তোমার নাম কি ভাই ?” সে বলিল, “আমার নাম সাগর, ভাই !” প্র । তুমি কে ভাই ? সী । আমি, ভাই, তোমার সতীন । প্র । তুমি আমায় চেন না কি ? সা। এই যে আমি কপাটের আড়াল থেকে সব শুনিলাম । প্র । তবে তুমিই ঘরণী গৃহিণী— স। দূর, তা কেন ? পোড়াকপাল আর কি, আমি কেন সে হতে গেলাম ? অামার কি তেমনই দাত উচু, না আমি তত কালে ? প্র । সে কি—কার দাত উচু ? সা। কেন ? যে ঘরণী গৃহিণী। প্র । সে আবার কে ? স। জান না ? তুমি কেমন ক’রেই বা জামূবে ? কখন ত এসে নি, আমাদের আর এক সতীন আছে, জান না ? প্র । আমি ত আমি ছাড়া আর এক বিয়ের কথাই জানি—আমি মনে করিয়াছিলাম, সেই তুমি । স। না । সে সেই—আমার ত তিন বছর হলো বিয়ে হয়েছে । প্র । সে বুঝি বড় কুৎসিত ? সা। রূপ দেখৈ আমার কান্না পায় } প্র । তাই বুঝি আবার তোমায় বিবাহ , করেছে ?