পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ ব্ৰহ্মঠাকুরাণী তখন সাগরের কাছে শুইয়া বিহঙ্গমের গল্প আরম্ভ করিলেন । সাগর তাহার আরম্ভ হইতে না হইতেই ঘুমাইয়া পড়িল ৷ ব্ৰহ্ম ঠাকুরাণী সে সংবাদ অনবগত, দুই চারি দণ্ড গল্প চালাইলেন—পরে যখন জানিতে পারিলেন, শ্রোত্রী নিদ্রামগ্না, তখন দুঃখিতচিত্তে মাঝখানেই গল্প সমাপ্ত করিলেন । পরদিন প্রভাত হইতে না হইতেই সাগর আসিয়া, ঘরের কুলুপ খুলিয়া দিয়া গেল। তার পর কাহাকেও কিছু না বলিয়া ব্রহ্মঠাকুরাণীর ভাঙ্গা চরক। লইয়া, সেই নিদ্রামগ্ন। বর্ষীয়সীর কানের কাছে ঘেনর-বেনর করিতে লাগিল । “কটাশ–ঝনাৎ” করিয়া কুলুপ-শিকল খোলার শব্দ হইল—প্রফুল্ল ও ব্রজেশ্বর তাহ শুনিল । প্রফুল্ল বসিয়াছিল—উঠিয়া দাড়াইল ; বলিল, “সাগর শিকল খুলিয়াছে, আমি চলিলাম । স্ত্রী বলিয়া স্বীকার কর না কর, দাসী বলিয়া মনে রাখিও ।” ব্রজ। এখন যাইও না । আমি একবার কৰ্ত্তাকে বলিয়া দেখিব । প্র । বলিলে কি তার মন ফিরিবে ? ব্রজ । না ফিরুক, আমার কাজ আমায় করিতে হইবে । অকারণে তোমায় ত্যাগ করিয়া আমি কি অধৰ্ম্মে পতিত হইব ? প্র । তুমি আমায় ত্যাগ কর নাই—গ্রহণ করিয়াছ । আমাকে এক দিনের জন্য শষ্যার পাশে ঠাই দিয়াছ—আমার সেই ঢের । তোমার কাছে ভিক্ষা করিতেছি আমার মত দুঃখিনীর জন্য বাপের সঙ্গে তুমি বিবাদ করিও না, তাতে আমি স্থখ হইব না । ব্রজ । নিতান্তপক্ষে, তিনি যাহাতে তোমার খোরপোষ পাঠাইয়া দেন, তা আমায় করিতে হুইবে । প্র । তিনি আমায় ত্যাগ করিয়াছেন, আমি র্তার কাছে ভিক্ষা লইব না । তোমার নিজের যদি কিছু থাকে, তবে তোমার কাছে ভিক্ষা লইব । ব্রজ । আমার কিছুই নাই, কেবল আমার এই আঙ্গটাটি আছে। এখন এইট লইয়া যাও। আপাততঃ ইহার মূল্যে কতক দুঃখ নিবারণ হইবে । তার পর, যাহাতে আমি দু’পয়সা রোজগার করিতে পারি, সেই চেষ্টা করিব । যেমন করিয়া পারি, অামি তোমার ভরণপোষণ করিব । এই বলিয়া ব্ৰজেশ্বর আপনার অঙ্গুলী হইতে বহুমূল্য হীরকাঙ্গুরীয় উন্মোচন করিয়া প্রফুল্পকে দিল । బ్రీ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী প্রফুল্ল আপনার আঙ্গুলে আঙ্গটটি পরাইতে পরাইতে বলিল, “যদি তুমি আমাকে ভুলিয়া ধাও ?” ব্রজ। সকলকে ভুলিব—তোমায় কখন ভুলিব না। প্র । যদি এর পর চিনিতে না পার ? ব্ৰ । ও মুখ কখনও ভুলিব না। প্র । আমি এ আঙ্গটটি বেচিব না—না খাইয়া মরিয়া যাইব, তবু কখন বেচিব না । যখন তুমি আমাকে ন চিনিতে পারিবে, তখন তোমাকে এই আঙ্গটা দেখাইব । ইহাতে কি লেখা আছে ? ত্র । আমার নাম খোদা আছে । দুই জনে অশ্রীজলে নিষিক্ত হইয়া নিকট বিদায় গ্রহণ করিল। প্রফুল্ল নীচে আসিলে সাগর ও নয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল । পোড়ারমুখী নয়ান বলিল, “দিদি, কাল রাত্রে কোথায় গুইয়াছিলে ?” প্র । ভাই, কেহ তীর্থ করিলে সে কথা আপন মুখে বলে না । ন। সে আবার কি ? স । বুঝতে পারিস নে ? কা’ল উনি আমাকে তাড়াইয়া আমার পালঙ্কে বিষ্ণুর লক্ষ্মী হইয়াছিলেন । মিনূষে আবার সোহাগ করে আঙ্গটা দিয়াছে। সাগর নয়ানকে প্রফুল্লের হাতে বজেশ্বরের আঙ্গটা দেখাইল । দেখিয়া নয়নতার হাড়ে হাড়ে জলিয়া গেল । বলিল,-“দিদি, ঠাকুর তোমার কথার কি উত্তর দিয়াছেন, শুনেছ ?” প্রফুল্লের সে কথ। অীর মনে ছিল না, সে বজেশ্বরের আদর পাইয়াছিল । প্রফুল্ল জিজ্ঞাসা করিল, “কি কথার উত্তর ?” ** ন । তুমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, কি করিয়া খাইবে ? প্র । তার আর উত্তর কি ? ন । ঠাকুর বলিয়াছেন, চুরি-ডাকাতি করিয়া খাইতে বলিও । “দেখ যাবে" বলিয়া প্রফুল্ল বিদায় হইল । প্রফুল্ল আর কাহারও সঙ্গে কথা কহিল না, একেবারে বাহিরে খিড়কীদ্বার পার হইল । সাগর পিছু পিছু গেল। প্রফুল্ল তাহাকে বলিল, “আমি ভাই, আঞ্জ চলিলাম । এ বাড়ীতে আর আসিব না । তুমি বাপের বাড়ী গেলে, সেখানে তোমার সঙ্গে দেখ হইবে ।” সী । তুমি আমার বাপের বাড়ী চেন ? প্র । না চিনি, চিনিয়া যাইব । স৷ ৷ ”তুমি আমার বাপের বাড়ী যাবে ? পরস্পরের