পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী - >● জঙ্গলে কাঠের অভাব নাই। কিছু কাঠের চেল। উঠানে পড়িয়াছিল, প্রফুল্ল তাহ বহিয়া আনিয়া কতগুলা গহবরমধ্যে নিক্ষেপ করিল। তাহার পর অনুসন্ধান করিতে লাগিল—চকুমকি দিয়াশলাই আছে কি না ? বুড়ী-মামুষ—অবশু তামাকু খাইত । সর ওয়াল্টার রালের আবিষ্কারের পর কোন বুড়া তামাকু ব্যতীত এ ছার, এ নশ্বর, এ নীরস, এ দুৰ্বিবষহ জীবন শেষ করিতে পারিয়াছে ? আমিও গ্রন্থকার মুক্তকণ্ঠে বলি গুছি যে, যদি এমন বুড়া কেহ ছিল, তবে তাহার মরা ভাল হয় নাই—তার আর কিছু দিন থাকিয়৷ এই পৃথিবীর দুৰ্ব্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করাই উচিত ছিল । খুজিতে খুজিতে প্রফুল্ল চকুমকি, সোলা, দিয়াশলাই সব পাইল । তখন প্রফুল্ল গোয়াল উচাইয়। বিচালী লইয়া আসিল । চকুমকির আগুনে ধিচালী জ্বালিয়৷ সেই সরু সিড়িতে পাতালে নামিল । শাবলকোদালী আগে নীচে ফেলিক্ষ্ম দিয়াছিল । দেখিল, দিব্য একটি ঘর । বায়ুকেৰ্ণে-বায়ুকোণ আগে ঠিক করিল । তার পর সে সব কাঠ ফেলিক্ষ্ম দিয়াছিল, তাহা বিচাৰ্লীর আগুনে জ্ঞালিল। উপরের যুক্ত পথ দিরা ধূয়। বাহির হইয়া যাইতে লাগিল। ঘর আলে৷ হইল ! সেইখানে প্রফুল খুঁড়িতে আরম্ভ করিল। খুঁড়িতে পুড়িতে “ঠং” করিয়৷ শব্দ হইল ! প্রফুল্লের শরীর রোমাঞ্চিত হইল, বুঝিল, দুটা কি ঘড়ার গায়ে শাবল ঠেকিয়াছে । কিন্তু কোথ৷ হইতে কার পন এখানে আসিল, তার পরিচয় আগে দিব । বুড়ার নাম কৃষ্ণগোবিন্দ দাস কৃষ্ণগোবিন্দ কায়স্থের সন্তান । সে স্বচ্ছন্দে দিনপাত করিভ । কিন্তু অনেক বয়সে একটা সুন্দরী বৈষ্ণবীর হাতে পড়িয়। রসকলি ও খঞ্জনীতে চিত্ত বিক্রীত করিয়া, ভেক লইয়া বৈষ্ণবীর সঙ্গে শ্ৰীবৃন্দাবন প্রয়াণ করিল। এখন শ্ৰীবৃন্দ|বন গিয়৷ কৃষ্ণগোবিন্দের বৈষ্ণবী ঠাকুরাণী সেখানকার বৈষ্ণবদিগের মধুর জয়দেবগীতি, শ্ৰীমদভাগবতে পাণ্ডিত্য, আর নধর গড়ন দেখিয়া তৎপাদপদ্মনিকর সেবন পূর্বক পুণ্যসঞ্চয়ে মন দিল । দেখিয়৷ কৃষ্ণগোবিন্দ বৃন্দাবন পরিত্যাগ করিয়া বৈষ্ণবী লইয়া বাঙ্গালায় ফিরিয়া আসিলেন । কৃষ্ণগোবিন্দ তখন গরীবু । বিষয়-কৰ্ম্মের অন্বেষণে মুর্শিদাবাদ গিয়া উপস্থিত হইলেন। কৃষ্ণগোবিদের চাকরী জুটল। কিন্তু র্তাহার বৈষ্ণবী যে বড় সুন্দরী, নবাবের মহলে সে সংবাদ পৌছিল । এক জন হাব সী খোজা বৈষ্ণবীকে বেগম করিবার অভিপ্রায়ে তাহার নিকেতনে যাতায়াত করিতে লাগিল। বৈষ্ণবী লোভে পড়িয়া রাজি হইল । ৩ষু—২৭ আবার বেগোছ দেখিয়৷ কৃষ্ণগোবিন্দ বাবাজি বৈষ্ণবী লইয়। সেখান হইতে পলায়ন করিলেন । কিন্তু কোথায় যান ? কৃষ্ণগোবিন্দ মনে করিলেন, এ অমূল্য ৰন লইয়া লোকালয়ে বাস করা অনুচিত । কে কোন দিন কাড়িয়া লইবে । তখন বাবাজি বৈষ্ণবীকে পদ্মাপার লইনু আসিয়া একটা নিভৃত স্থান অন্বেষণ করিতে লাগিলেন । পৰ্য্যটন করিতে করিতে এই ভগ্ন অট্টালিকায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন । দেখিলেল, লোকের চক্ষু হইতে র্তার অমূল্য রত্ন লুকাইয়া রাখিবার স্থান বটে। এখানে যম ভিন্ন আর কাহারও সন্ধান রাখিবার সম্ভাবনা নাই । অতএব তাহার। সেইখানে রহিল । বাবাজি সপ্তাহে সপ্তাহে হাটে গিয়া বাজার করিয়া আলেন, বৈষ্ণবীকে কোথাও বহির হইতে দেন না । এক দিন কৃষ্ণগোবিন্দ একটা নীচের ঘরে চুল কাটিতেছিল—মাট পুড়িতে খুঁড়িতে একটা সেকেলে-- তখনকার পক্ষেও সেকেলে মোহর পাওয়া গেল । কৃষ্ণগোবিন্দ সেখানে আরও খুঁড়িল এক ভাড় টাকা পাইল । এই টকাগুলি ন পাইলে ক্লষ্ণগোবিন্দের দিন চলা ভার ইষ্টত । এক্ষণে স্বচ্ছন্দে দিনপাত হইতে লাগিল । কিন্তু কষ্ণগোবিন্দের এক নূতন জ্বালা হইল । টাক পাষ্টয় তাহার স্মরণ হইল সে, এই রকম পুরাতন বাড়ীতে অনেকে অনেক ধন মাটীর ভিতর পাইয়ছে । কৃষ্ণগোবিন্দের দৃঢ়বিশ্বাস হইল, এখানে আরও টাকা আছে । সেই অবধি ক্লষ্ণগোবিন্দ অয়দিন প্রোথিত ধনের সন্ধান করিতে লাগিল । জিতে গজিতে অনেক স্থ ভঙ্গ, মাটীর নীচে অনেক চোরকুঠারী ধাহির হইল । ক্লষ্ণগোবিন্দ বাতিকগ্রস্তের স্তায় সেই সকল স্থানে অনুসন্ধান করিতে লাগিল; কিন্তু কিছু পাইল না ; এক বৎসর এইরূপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া কৃষ্ণগোবিন্দ কিছু শাস্ত হইল। কিন্তু তথাপি মধ্যে মধ্যে নীচের ঢোরকুঠারীতে গিয়া সন্ধান করিত । একদিন দেখিল, এক অন্ধকার ঘরে এক কোণে একটা কি চক্চক্ করিতেছে। দৌড়িয়া গিয় তাহা তুলিল—দেখিল মোহর ! ইকুরে মাটা তুলিয়াছিল, সেই মাটীর সঙ্গে উহ উঠিয়াছিল। কৃষ্ণগোবিন্দ তখন কিছু করিল না ; হাটবারের অপেক্ষ করিতে লাগিল । এবার হাটবারে বৈষ্ণবকে বলিল, “আমার বড় অমুখ করিয়াছে, তুমি হাট করিতে যাও ” বৈষ্ণবী সকালে হাট করিতে গেল। বাবাজী বুঝিলেন, বৈষ্ণবী এক দিন ছুটা পাইয়াছে শীঘ্রই ফিরিবে না । কৃষ্ণগোবিন্দ সেই অবকাশে সেই কোণ পুড়িতে লাগিল। সেখানে কুড়ি ঘড়া ধন বাহির হইল । পূৰ্ব্বকালে উত্তর-বাঙ্গালায় নীলধবজবংশীয় প্রবলপরাক্রান্ত রাজগণ রাজা করিতেন । সে বংশের শেষ