পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২ সেই সময় কে আসিয়া তাহকে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া তাহার সঙ্গে তেমনি উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিল,— - “হরে মুরারে মধুকৈটভারে !" তখন সেই অনন্তের মহিমায় সেই অনন্ত অরণ্যমধ্যে অনন্তপথগামিনীর শরীর সম্মুখে দুই জনে আনস্তের নাম গীত করিতে লাগিলেন । পশুপক্ষী নীরব, পৃথিবী অপূৰ্ব্ব শোভাময়ী—এই চরম গীতের উপযুক্ত মন্দির । সতানন্দ মহেন্দ্রক কোলে লষ্টয়া বসিলেন । ত্রয়োদ শ পরিচ্ছেদ এ দিকে রাজধানীতে রাজপথে বড় হুলস্থল পডিয়া গেল। রব উঠিল যে, রাজসরকার হইতে কলিকাতায় যত খাজন| চালীন ষাটতেছিল, সন্ন্যাসীর তাহা মারিয়া লষ্টয়াছে । তখন রাজাঞ্জানুসারে সন্ন্যাসী ধরিতে সিপাহী বরকন্দাজ ছুটিতে লাগিল । এখন সেই ফুর্ভিক্ষপীড়িত প্রদেশে সে সমঘে প্রকৃত সন্ন্যাসী বড. ছিল না । কেন না, তাহার। ভিক্ষোপজীব, লোকে আপনি খাষ্টতে পায় ন!, সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা দিবে কে ? অ ভএব প্রকত সন্ন্যাসী যাহারা, সকলে পেটের জাল'য় কাশী প্রণাগাদি অঞ্চলে পলয়ন করিয়াছিল । কেবল সন্তানের ইচ্ছানুসারে সন্ন্যাসিবেশ ধারণ করি ত, প্রয়োজন হষ্টলে পরিত্যাগ করিত । আজ গোলযোগ দেখিয়৷ আনকেষ্ট সন্ন্যাসিবেশ পরিত্যাগ করিল : বুভুক্ষু রাজালুচরবর্গ কোথাও সন্ন্যাসী না পাইয়া কেবল গৃহস্থদিগের স্টাডি কলসী ভাঙ্গিয়া উদর অৰ্দ্ধপূরণ পূর্বক প্রতিনিবৃত্ত হইল । কেবল সত্যানন্দ কোন কালে গৈরিক বসন পরিত্যাগ করিতেন না । সেই কৃষ্ণকল্লোলিনী ক্ষুদ্র নদীতীরে সেই পথের ধারেই বৃক্ষতলে নদীতটে কল্যাণী পড়িয়া আছেন, মহেন্দ্র ও সত্যানন্দ পরস্পর আলিঙ্গন করিয়া সাশ্রলোচনে ঈশ্বরকে ডাকিতেছেন. নজরদী জমাদার সিপাহী লইয়। এমন সময়ে সেইখানে উপস্থিত। একেবারে সত্যানন্দের গলদেশে হস্তাপর্ণ পূৰ্ব্বক বলিল, “এই শাল সন্ন্যাসী ? আর এক জন অমনি মহেন্দ্রকে ধরিল । কেন না, যে সন্ন্যাসীর সঙ্গী, সে অবশু সন্ন্যাসী হইবে । আর বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী আর এক জন শস্পোপরি লম্বমান কল্যাণীর মৃতদেহটাও ধরিতে যাইতেছিল ; কিন্তু দেখিল যে, একটা স্ত্রীলোকের মৃতদেহ, সন্ন্যাসী ন হইলেও হইতে পারে । আর ধরিল না । বালিকাকে ও ঐরূপ বিবেচনায় ত্যাগ করিল। পরে তাহার কোন কথাবাৰ্ত্ত না বলিয়| দুই জনকে বধিয়া লইয়। চলিল । কল্যাণীর মৃতদেহ আর তাহার বালিক। কণ্ঠ বিন রক্ষকে সেই বৃক্ষমূল পড়িয়া রহিল। প্রথমে শোকে অভিভূত এবং ঈশ্বরপ্রেম উন্মত্ত হইয়। মহেন্দ্র বি : চতনপ্রায় ছিলেন । কি হইতেছিল, কি হইল, বুঝিতে পারেন নাই, বন্ধ:নর প্রতি কোন অপত্তি করেন নাই, কিন্তু দুই চারি পদ গেলে বুঝিলেন যে, আমাদিগকে বাধিয়া লইয়। যাইতেছে । কল্যাণীর শব পড়িয়া রহিল, সৎকার হইল ন| শিশুকন্ঠ পড়িয়া রহিল ; এষ্টক্ষণ তাহাদিগকে হিংস্ৰজন্তু খাইতে পারে, এই কথ। মনোমধ্যে উদয় হইবামাত্র মহেন্দ্র দুটি হতে পরস্পর হইতে বলে বিশ্লিষ্ট করিলেন একটানে বঁাধন ছিড়ি গেল । সেই মুহূৰ্ত্তে এক পদাঘাতে জমাদার সাহেবকে ভূমিশয অবলম্বন করাইয়া এক জন সিপাহীকে আক্রমণ করিতেছিলেন, তখন অপর তিন জন তাহাকে তিন দিক্ হইতে ধরিয়া পুনৰ্ব্বার বিজিত ও নিশ্চেষ্ট করিল। তখন দুঃখে কাতর হক্টর। মহেন্দ্র সতানন্দ ব্রহ্মচারীকে বলি লেন যে, “আপনি একটু সহায়তা করিলেই এই পাচ জন তুরায়াকে বধ করিতে পারি তাম ।” সতানন্দ বলি লন, “আমার এই প্রাচীন শরীরে বল কি —আমি যাহাকে ডাকি:তছিলাম, তিনি ভিন্ন আমার আর বল নাই –তুমি যাহ অবহু ঘটিবে, তাহার বিরু সরণ করি ও না । আমর। এই পাচ জনকে পরাভূত করিতে পারিব না । চল, কোথায় লষ্টয়া যায় দেখি । জগদীশ্বর সকল দিক্ রক্ষা করিবেন ।" তখন র্তাহার। দুই জনে আর কোন মুক্তির চেষ্টা ন| করিয়া সিপাহীদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন । কিছু দুর গিয়া সত্যানন্দ সিপাহীদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাপু ! আমি হরিনাম করিয়া থাকি, হরিনাম করার কিছু বাধা আছে ?" সত্যানন্দকে ভােলমানুষ বলিয়া জমাদারের বোধ হইয়াছিল । সে বলিল, “তুমি হরিনাম কর, তোমায় বারণ করিব না। তুমি বুড়া ব্রহ্মচারী, বোধ হয়, তোমার খালাসের হুকুমই হইবে, এই বদমাস ফাসি ষাইবে ।” তখন ব্রহ্মচারী - মৃত্নস্বরে গান করিতে লাগিলেন –