পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&ა ভুলিব না। পরদ্রব্য কাড়িয়া লওয়া মন্দ কাজ নয় ত মহাপাতক কি ? আপনাদের সঙ্গে আর কোন সম্বন্ধই রাখিব না। . ভবানী। সে কি ? যা এত দিন বুঝাইয়া দিয়াছি, তাই কি আবার তোমায় বুঝাইতে হইবে ? যদি আমি এ সকল ডাকাইভির ধনের এক কপর্দক গ্রহণ করিতাম, তবে মহাপাতক বটে। কিন্তু তুমি ত জীন যে, কেবল পরকে দিবার জন্য ডাকাইতি করি। যে ধাৰ্ম্মিক, সে সৎপথে থাকিয়া ধন উপার্জন করে, যাহার ধনহানি হইলে, ভরণপোষণের কষ্ট হইবে, রঙ্গরাজ কি আমি কখনও তাহদের এক পয়সাও লই নাই । যে জুয়াচোর, দাগাবাজ, পরের ধন কড়িয়া বা ফাকি দিয়া লইয়াছে, আমরা তাহাদের উপর ডাকাইতি করি। করিয়া এক পয়সা লই না, যাহার ধন বঞ্চকেরা লইয়াছিল, তাহাকেই ডাকিয়া দিই । এ সকল কি তুমি জান না? দেশ অরাজক, দেশে রাজশাসন নাই, দুষ্টের দমন নাই, ষে যার পায়, কাড়িয়া খায়। আমরা তাই তোমায় রাণী করিয়া রাজশাসন চালাইতেছি । তোমার নামে আমরা কুষ্টের দমন করি, শিষ্টের পালন করি, এ কি অধৰ্ম্ম ? : দেবী। রাজা রাণী, ষাকে করিবেন, সেই হইতে পারিবে । আমাকে অব্যাহতি দিন—আমার এ রাণীগিরিতে আর চিত্ত নাই । ভবানী । আর কাহাকেও এ রাজ্য সাজে না, আর কাহারও অতুল ঐশ্বর্ঘ্য নাই—তোমার ধনদানে সকলেই তোমার বশ । দেবী । আমার ষে ধন আছে, সকলই আমি আপনাকে দিতেছি, আমি ঐ টাকা যেরূপে খরচ করিতাম, আপনিও সেইরূপ করিবেন। আমি কাশী গিয়া বাস করিব, মানস করিয়াছি । ভবানী। কেবল তোমার ধনেই কি সকলে তোমার বশ ? তুমি রূপে যথার্থ রাজরাণী—গুণে যথার্থ রাজরাণী । অনেকে তোমাকে সাক্ষাৎ ভগবতী বলিয়া জানে—কেন না, তুমি সন্ন্যাসিনী, মা’র মত পরের মঙ্গলকামনা কর, অকাতরে ধন দান কর, আবার ভগবতীর মত রূপবতী, তাই আমরা তোমার নামে এ রাজ্য শাসন করি—নহিলে আমাদের কে মানিত ? দেবী । তাই লোকে আমাকে ডাকাইতনী বলিয়া জানে। এ অখ্যাতি মরিলেও যাবে না। ভবানী । অখ্যাতি কি ? এ বরেন্দ্রভূমে আজিকালি কে এমন আছে যে, এ নামে লজ্জিত ? কিন্তু সে কথা যাকৃ—ধৰ্ম্মাচরণে মুখ্যাতি অখ্যাতি খুজিবার বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দরকার কি ? আখ্যাতির কামনা করিলেই কৰ্ম্ম আর নিষ্কাম হইল কই ? তুমি যদি অখ্যাতির ভয় কর, তবে তুমি আপনার খুজিলে, পরের ভাবিলে না । আত্মবিসর্জন হইল কই ? দেবী । আপনাকে আমি তর্কে অঁাটিয়া উঠিতে পারিব না-আপনি মহামহোপাধ্যায়—আমার স্ত্রীবুদ্ধিতে যাহা আসিতেছে, তাই বলিতেছি—আমি এ রাণীগিরি হইতে অবসর লইতে চাই । আমার এ অার ভাল লাগে না । ভবানী । যদি ভাল লাগে না, তবে কালি রঙ্গরাজকে ডাকাইতি করিতে পাঠাইয়াছিলে কেন ? কথা যে আমার অবিদিত নাই, তাহা বলা বেশীর ভাগ । - দেবী । কথা যদি অবিদিত নাই, তবে অবশু এটাও জানেন যে, কাল রঙ্গরাজ ডাকাইতি করে নাই —ডাকাইতির ভাণ করিয়াছিল মাত্র । ভবানী । কেন ? তা আমি জানি না, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছি । দেবী । একট। লোককে ধরিয়া আনিবার জন্ত । ভবানী । লোকটা কে ? দেবীর মুখে নামটা একটু বাধ বাধ করিল—কিন্তু নাম না করিলেও নয়—ভবানীর সঙ্গে প্রতারণ চলিবে না। অতএব অগত্য দেবী বলিল, “র্তার নাম ব্রজেশ্বর রায় ।” ভ। আমি তাকে বিলক্ষণ চিনি ; তাকে তোমার কি প্রয়োজন ? দেবী । কিছু দিবার প্রয়োজন ছিল । তার বাপ ইজারাদারের হাতে কয়েদ যায়। কিছু দিয়া ব্রাহ্মণের জাতিরক্ষা করিয়াছি । ভ। ভাল কর নাই । হরবল্লভ রায় অতি পাষণ্ড । খামক। আপনার বেহাইনের জাতি মারিয়াছিল—তার জাতি যাওয়াই ভাল ছিল । দেবী শিহরিল । বলিল, “সে কি রকম ?” ভ। তার একটা পুত্রবধুর কেহ ছিল না, কেবল বিধবা ম! ছিল । হরবল্লভ সেই গরীবের বাগদী অপবাদ দিয়া বউটাকে বাড়ী হইতে তাড়াইয়া দিল । ঃখে বউটার মা মরিয়া গেল । দে । আর বউট ? o মরিয়া ভ। শুনিয়াছি, খাইতে না পাইয়া গিয়াছে । দেবী । আমাদের সে সব কথায় কাজ কি ! আমরা পরহিত ব্ৰত নিয়েছি, যার দুঃখ দেখিব, তারই দুঃখ মোচন করিব ।