পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to দেবী। (হাসিতে হাসিতে) চক্ষুরাদি পাচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, হস্তপদাদি পাঁচটি কৰ্ম্মেন্দ্রিয়, আর ইন্দ্রিয়ী ধিপতি মন উভয়েন্দ্রিয় অর্থাৎ মনঃ জ্ঞানেন্দ্রিয়ও বটে, কৰ্ম্মেন্দ্রিয়ও বটে । মনঃ জ্ঞানেন্দ্রিয় বলিয়া মনের দ্বারাও প্রত্যক্ষ আছে । ইহাকে মানস-প্রত্যক্ষ বলে । ঈশ্বর মানস প্রত্যক্ষের বিষয়। নিশি । “ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ-প্রমাণাভাবাৎ ৷” যিনি সাংখ্য-প্রবচনস্বত্র ও ভাৰ্য্য পড়িয়াছেন, তিনি নিশির এই ব্যঙ্গোক্তির মৰ্ম্ম বুঝিবেন । নিশি দেবীর এক প্রকার সহাধায়িনী ছিল । দেবী উত্তর করিল, “স্বত্রকারস্তোভয়েন্দ্রিয়ুশূন্যত্বং —ন তু প্রমাণাভাবাত ” দিবা । রেখে দাও তোমার হাবাত মাবৎ-— আমি ত পরমেশ্বরকে কখন মনের ভিতর দেখিতে পাই নাই । দেবী। আবার দেখা ? চক্ষুষ-প্রত্যক্ষই দেখ!— অদ্য কোন প্রত্যক্ষ দেখা নয়—মানস-প্রত্যক্ষও দেখ| নয়। চাক্ষুষ-প্রত্যক্ষের বিবর-রূপ, বহির্বিষয় ; মানস-প্রত্যক্ষের বিষয়—অন্তৰ্ব্বিষয় । মনের দ্বারা ঈশ্বর প্রত্যক্ষ হইতে পারেন । ঈশ্বরকে দেখ। যায় না । দিবা । কই ? আমি ত ঈশ্বরকে কখনও মনের ভিতর কোন রকম প্রত্যক্ষ করি নাই ? দেবী । মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যক্ষ শক্তি অল্প – সাহায্য বা অবলম্বন ব্যতীত সকল বস্তু প্রত্যক্ষ করিতে পারে না । দিবা । প্রত্যক্ষের জন্য আবার সাহায্য কি রকম ? দেখ, এই নদী, জল, গাছ-পালা, নক্ষত্র সকলই গ্রামি বিন সাহায্যে দেখিতে পাইতেছি।

  • . # ** * :

تدريجv “সকলই নয় । ইহার একটি উদাহরণ দিব ।” বলিয়া দেবী হাসিল । হাসির রকমটা দেখিয় নিশি জিজ্ঞাসা করিল, “कि ?” দেবী বলিতে লাগিল, “ইংরেজের সিপাহী আমাকে আজ ধরিতে আসিতেছে, জান ?” - দিবা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিল, “তা ত জানি ।” ● দেবী । সিপাহী প্রত্যক্ষ করিয়াছ ? দিবা । না । কিন্তু আসিলে প্রত্যক্ষ করিব । দেবী । আমি বলিতেছি, জাসিয়াছে, কিন্তু বিনা সাহায্যে প্রত্যক্ষ করিতে পারিতেছ না। এই সাহায্য গ্রহণ কর । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী এই বলিরা দেবী দিবার হাতে দূরবীণ দিল। ঠিক যে দিকে দেখিতে হইবে, দেখাইয়া দিল । দিব। দেখিল । দেবী জিজ্ঞাসা করিল, “কি দেখিলে ?” দিবা ! একখানা ছিপ । উহাতে অনেক মানুষ দেখিতেছি বটে । দেবী । উহাতে সিপাহী আছে। আর একখান। দেখ | এইরূপে দেবী দিবাকে পাঁচখানা ছিপ নানা স্থানে দেখাইল । নিশিও দেখিল। নিশি জিজ্ঞাসা করিল, “ছিপগুলি চরে লাগাইয়া আছে, দেখিতেছি । আমাদের ধরিতে অtসিয়াছে, কিন্তু আমাদের কাছে না আসিয়া, ছিপ তীরে লাগাইয়া আছে কেন ?” দেবী ! বোধ হয়, ডাঙ্গাপথে যে সকল সিপাহী আসিবে, তাহার। আসিয়া পৌঁছে নাই, ছিপের সিপাহী তাহাঁদের অপেক্ষায় আছে। ডাঙ্গার সিপাই আসিবার আগে ছিপের সিপাহী আগু হইলে, আমি ডাঙ্গাপথে পলাইতে পারি, এই শঙ্কায় উহারা আগু হইতেছে না । দিব। কিন্তু আমরা ত উহাদের দেখিতে পাইতেছি, মনে করিলেই ত পলাইতে পারি । দেবী । ওয়া তা জানে না । ওরা জানে না যে, আমরা দূরবীণ রাখি । নিশি । ভগিনি ! প্রাণে বাচিলে এক দিন না এক দিন স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবে । আজি ডাঙ্গায় উঠিয়া প্রাণ রক্ষা করিবে চল । এখনও বদি ডাঙ্গার সিপাহী আসে নাই, তবে ডাঙ্গাপথে এখন প্রাণরক্ষার উপায় আছে । দেবী । যদি প্রাণের জন্য আমি এত কাতর হইব, তবে আমি সকল সংবাদ জানিয়া শুনিয়া এখানে আসিলাম কেন ? আসিলাম যদি, তবে লোক-জন সবাইকে বিদায় দিলাম কেন ? আমার হাজার বরকনদ{জ আছে, তাহীদের সকলকে অন্ত স্থানে পাঠাইলাম কেন ? দিবা । আমরা আগে যদি জানিতাম, তা হইলে . তোমায় এমন কৰ্ম্ম করিতে দিতাম না । দেবী । তোমার সাধ্য কি, দিবা ! যা আমি স্থির করিয়াছি, তা অবগু করিব। আজ স্বামি-দর্শন করিব, স্বামীর অনুমতি লইয়া জন্মান্তরে তাহাকে । কামনা করিয়া প্রাণ সমর্পণ করিব । তোমরা আমার কথা শুনিও, দিবা, নিশি ! আমার স্বামী যখন ফিরিয়া যাইবেন, তখন র্তাহার নৌকায় উঠিয়া র্তাহার সঙ্গে চলিয়া যাইও । আমি এক ধরা দিব, আমি এক ফাসি যাব। সেই জন্ত বজরা হইতে