পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী সী ৷ জান আর নাই জান, বজরা এখন আমার, আমি উহা দখল করিব। , - রঙ্গ। সাহেব, বজরাতে উঠিও না, বজরা ভূঁইও না, বিপদ ঘটিবে। - স। পূঃ ! পাঁচ শত সিপাহী লইয়া তোমাদের জন দুই চারি লোকের কাছে বিপদ ! এই বলিয়া সাহেব শাদা নিশান ফেলিয়া দিলেন। সিপাহীদের হুকুম দিলেন, “বজরা ঘেরাও কর।” সিপাহীরা বজরা ঘেরাও করিয়া ফেলিল । তখন সাহেব বলিলেন, “বজরার উপর উঠিয়া বরকন্দাজদিগের অস্ত্র কাড়িয়া লও ” ” - এ হুকুম সাহেব উচ্চৈঃস্বরে দিলেন । কথা দেবীর কানে গেল। দেবীও বজরার ভিতর হইতে উচ্চৈঃস্বরে হুকুম দিলেন, “বজরায় যাহার বাহার হাতে হাতিয়ার আছে, সব জলে ফেলিয়! দাও।” শুনিবা মাত্র, বজরায় যাহার যাহার হাতে অস্ত্র ছিল, সব জলে ফেলিয়া দিল । রঙ্গরাজও আপনার অস্ত্র সকল জলে ফেলিয়া দিল । দেখিয়া সাহেব সন্তুষ্ট হইলেন, বলিলেন, “চল, এখন বজরায় গিয়া দেখি, কি আছে ?” রঙ্গ । সাহেব, আপনি জোর করিয়া বজরায় যাইতেছেন, আমায় দোষ নাই । সা। তোমার আবার দোষ কি ? এই বলিয়া সাহেব এক জন মাত্র সিপাহী সঙ্গে লইয়া সশস্ত্রে বজরায় উঠিলেন । এটা বিশেষ সাহসের কাজ নহে, কেন না, বজরার উপর ষে কয় জন লোক ছিল, তাহারা সকলেই অস্ত্র ত্যাগ করিয়াছে। সাহেব বুঝেন নাই যে, দেবীর স্থির-বুদ্ধিই শাণিত মহাস্ত্ৰ ; তার অন্য অস্ত্রের প্রয়োজন নাই । লাহেব রঙ্গরাজের সঙ্গে কামরার দরজায় আসিলেন। দ্বার তৎক্ষণাৎ মুক্ত হইল। উভয়ে ভিতরে প্রবেশ করিলেন । প্রবেশ করিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে দুই জনেই বিস্মিত হইলেন । দেখিলেন, যে দিন প্রথম ব্ৰজেশ্বর বন্দী হুইয়া এই ঘরে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সেই দিন যেমন ইহার মনোহর সজ্জা, আজিও সেইরূপ ; দেওয়ালে তেমনি চারু চিত্র । তেমনি সুন্দর গালিচা পাতা । তেমনি আতরদান, গোলাবপাশ, তেমনি সোনার পুষ্পপাত্রে ফুল-ভরা, সোনার আল্‌বোলায় তেমনি মৃগনাভি সুগন্ধি তামাকু সাজা। তেমনি রূপার পুতুল, রূপার ঝাড়, সোনার শিকলে দোলান সোনার প্রদীপ । কিন্তু আজ একটা মসনদ নয়-দুইটা । দুইটা মসনদের উপর সুবর্ণমণ্ডিত উপাধানে দেহ রক্ষা করিয়া দুইটি জুলুর রহিয়াছে। তাহদের পরিধানে মহার্য বস্ত্র, '. |ు's সৰ্ব্বাঙ্গে মহামূল্য রত্নভূৰ। সাহেব তাঁহাদের চেনে না—রঙ্গরাজ চিনিল যে, এক জন নিশি--আর এক জন দিবা । - সাহেবের জন্য একখানা রূপার চৌকি রাখা । ইয়াছিল, সাহেব তাহাতে বসিলেন। রঙ্গরাজ খুজিতে লাগিলেন, দেবী কোথা ? দেখিলেন, কাম রার এক ধারে দেবীর সহজ বেশে দেবী দাড়াইয়া আছে, গড় পর, কেবল কড় হাতে, এলোচুল, কোন বেশভূষা নাই। সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে দেবী চৌধুরাণী ? : কাহার সঙ্গে কথা কহিব ?” - নিশি বলিল, “আমার সঙ্গে কথা কহিবেন । আমি দেবী ।” - দিবা হাসিল, বলিল, “ইংরেজ দেখিয়া রঙ্গ করি তেছিস ? এ কি রঙ্গের সময় ? লেফটেনাণ্ট সাহেব ! আমার এই ভগিনী কিছু রঙ্গতামাসা ভালবাসে, কিন্তু এ তার সময় নয় । আপনি আমার সঙ্গে কথা কহিবেন—আমি দেবী চৌধুরাণী।" নিশি বলিল, “আমরণ ! তুই কি আমার জন্য ফাসি যেতে চাস না কি ?” সাহেবের দিকে ফিরিয়া নিশি বলিল, "সাহেব, ও আমার ভগিনী—বোধ ३श? স্নেহবশতঃ আমাকে রক্ষা করিবার জন্য আপনাকে প্রতারণা করিতেছে ; কিন্তু কেমন করিয়া মিথ্যা প্রবঞ্চনা করিয়া, বহিনের প্রাণদণ্ড করিয়া, আপনার প্রাণ রক্ষা করিব ? প্রাণ অতি তুচ্ছ, আমরা বাঙ্গালীর মেয়ে, অক্লেশে ত্যাগ করিতে পারি। চলুন, আমাকে কোথায় লইয়া যাইবেন, যাইতেছি। আমিই দেবী রাণী ।” দিবা বলিল, “সাহেব । তোমার যীশুখুষ্টের দিব্য, তুমি যদি নিরপরাধিণীকে ধরিয়া লইয়। যাও। আমি দেবী ।” সাহেব বিরক্ত হইয়া রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "এ কি তামাসা ? কে দেবী চৌধুরাণী, তুমি যথার্থ বলিবে ?” * রঙ্গরাজ কিছু বুঝিল না, কেবল অনুভব করিল যে, ভিতরে একটা কি কৌশল আছে । অতএব বুদ্ধি খাটাইয়া সে নিশিকে দেখাইয়া হাতযোড় করিয়া বলিল, “হুজুর । এই যথার্থ দেবী রাণী।” তখন দেবী প্রথম কথা কহিল । বলিল, “আমার ইহাতে কথা কহ বড় দোষ । কিন্তু কি জানি, এর পর মিছা কথা ধরা পড়িলে যদি সকলে মারা যায়, তাই বলিতেছি, এ ব্যক্তি যাহা বলিয়াছে, তাহা সত্য নহে ।” পরে নিশিকে দেখাইয়া বলিল, “এ দেবী , , }يي:تم