পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سواوN) পাঠাইয়া দিও। যদি কেহ মরিয়৷ থাকে, তবে তাদের ওয়ারিশকে পাঠাইয়া দিও। সাহেব । কেন ? রঙ্গ। এমন অবস্থায় রাণী কিছু কিছু দান করিয়া থাকেন । সাহেব বিশ্বাস করিল না । ভাল-মন্দ কিছু না বলিয়া চলিয়া গেল । রঙ্গরাজ তখন পান্ধীবেহীরার সন্ধানে গেল । তার প্রতি সে আদেশও ছিল । _ দশম পরিচ্ছেদ এ দিকে পথ সাফ দেখিয়া ব্ৰজেশ্বর ধীরে ধীরে দেবীর কাছে আসিয়া বসিলেন । দেবী বলিল, “ভাল হইল, দেখা দিলে ! তোমার কথা ভিন্ন আজিকার কাজ হয় না । তুমি প্রাণ রাখিতে হুকুম দিয়াছিলে, তাই প্রাণ রাখিয়াছি। দেবী মরিয়াছে, দেবী চৌধুরাণী আর নাই। কিন্তু প্রফুল্ল এখনও আছে । প্রফুল্ল থাকিবে, না দেবীর সঙ্গে যাইবে ? ব্ৰজেশ্বর আদর করিয়া প্রফুল্লের মুখচুম্বন করিল। বলিল, “তুমি আমার ঘরে চল, ঘর আলো হইবে । তুমি না যাও—আমি যাইব না।” প্র । আমি ঘরে গেলে আমার শ্বশুর কি বলিবেন? ব্র । সে ভার আমার । তুমি উদ্যোগ করিয়া র্তাকে আগে পাঠাইয়া দাও । আমরা পশ্চাৎ যাইব । প্র ৷ পান্ধী-বেহারা আনিতে গিয়াছে। পান্ধী-বেহার শীঘ্রই আসিল । হরবল্লভও সন্ধ্যাহ্যিক সংক্ষেপে সারিয়া বজরায় আসিয়া উঠিলেন । দেখিলেন, নিশি ঠাকুরাণী ক্ষীর, ছানা, মাখন ও উত্তম সুপক্ক আম্র, কদলী প্রভৃতি ফল র্তাহার জলযোগের জন্য সাজাইতেছে । নিশি অনুনয়-বিনয় করিয়া তাহাকে জলযোগে বসাইল। বলিল, “এখন আপনি আমার কুটুম্ব হইলেন ; জলযোগ না করিয়া যাইতে পারিবেন না।” ছুরবল্লভ জলযোগে না বসিয়া বলিল, ব্ৰজেশ্বর কোথায় ? কাল রাত্রে বাহিরে উঠিয়া গেল—আর তাহাকে দেখি নাই।” নিশি । তিনি আমার ভগিনীপতি হইবেন, তার জন্য ভাবিবেন না। তিনি এইখামেই আছেন— আপনি জলযোগে বসুন ; আমি তাহাকে ডাকিয়া দিতেছি। সে কথাটি তাকে বলিয়া যাউন । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী হরবল্লভ জলযোগে বসিল। নিশি ব্রজেশ্বরকে । ডাকিয়া আনিল। ভিতরের কামর হইতে ব্ৰজেশ্বর বাহির হইল দেখিয়া উভয়ে কিছু অপ্রতিভ হইলেন । হরবল্লভ ভাবিলেন, আমার চাদপান। ছেলে দেখে ডাকিনী বেটর ভুলে গিয়েছে। ভালই। ব্ৰজেশ্বরকে হরবল্লভ বলিলেন, “বাপু হে, তুমি যে এখানে কি প্রকারে আসিলে, আমি ত তা এখনও কিছু বুঝিতে পারি নাই। তা ষাকৃ—সে এখনকার কথা নয়, সে কথা পরে হবে। এক্ষণে আমি একটু অনুরোধে পড়েছি—ত অনুরোধটা রাখিতে হইবে। এই ঠাকুরাণীটি সৎকুলীনের মেয়ে—ওঁর বাপ আমাদেরই পালুটি—ত ওঁর একটি অবিবাহিত ভগিনী আছে—পাত্র পাওয়া যায় না–কুল যায়। তা কুলীনের কুলরক্ষা কুলীনেরই কাজ—মুটেমজুরের ত কাজ নয়। আর তুমিও পুনৰ্ব্বার সংসার কর, সেটাও আমার ইচ্ছা বটে, তোমার গর্ভধারিণীরও ইচ্ছা বটে। বিশেষ বড় বউমাটির পরলোকের পর থেকে আমরা কিছু এ বিষয়ে কাতর আছি। তাই বলছিলাম, যখন অনুরোধে পড়া গেছে, তখন এ কৰ্ত্তব্যই হয়েছে। আমি অনুমতি করিতেছি, তুমি এর ভগিনীকে বিবাহ কর ।” ব্ৰজেশ্বর মোটের উপর বলিল, "যে আজ্ঞা ।” নিশির বড় হাসি পাইল, কিন্তু হাসিল না। হরবল্লভ বলিতে লাগিলেন, “তা আমার পান্ধীবেহার এসেছে, আমি আগে গিয়া বউ-ভাতের উদ্যোগ করি, তুমি যথাশাস্ত্র বিবাহ করে বউ নিয়ে বাড়ী যেও ” ব্রজ। যে আজ্ঞা । হর। তা তোমায় আর বলিব কি, তুমি ছেলেমানুষ নও–কুল, শীল, জাতি, মৰ্য্যাদা সব আপনি দেখে শুনে বিবাহ করবে। (পরে একটু আওয়াজ খাটো করিয়া বলিতে লাগিলেন ) আর আমাদের যেটা দ্যায্য পাওনাগগুl, তাও ত জান ? ব্ৰ । যে আজ্ঞা । হরবল্লভ জলযোগ সমাপন করিয়া বিদায় হইলেন - ব্রজ ও নিশি তাহার পদধূলি লইল। তিনি পান্ধীতে চড়িয়া নিশ্বাস ফেলিয়া দুর্গানাম করিয়া প্রাণ পাইলেন। ভাবিলেন, “ছেলেটি ডাকিনী বেটীদের" হাতে রহিল—তা ভয় নাই । ছেলে আপনার পথ চিনিয়াছে। চাদমুখের সৰ্ব্বত্র জয় ।” হরবল্লভ চলিয়া গেল, ব্ৰজেশ্বর নিশিকে জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি ছল ? তোমার ছোট বোন কে ?”