পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੰ তাহার যে ঢাকাই শাড়ীর উপর নিমাইমণির চোট, তাহা বাহির করিয়া তাহার পাড় ছিড়িয়া ফেলিল । বস্ত্রের যেটুকু অবশিষ্ট রছিল, গেরিমাটীতে তাহ বেশ করিয়া রঙ করিল। বস্ত্র রঙ করিতে, শুকাইতে সন্ধ্যা হইল। সন্ধ্য হইলে দ্বার রুদ্ধ করিয়া অতি চমৎকার ব্যাপারে শাস্তি ব্যাপৃত হইল । মাথায় রুক্ষ আগুল্ফ লম্বিত কেশদামের কিয়দংশ কাচি দিয়া কাটিয়া পৃথক করিয়া রাখিল । অবশিষ্ট যাহা মাথায় রহিল, তাহ বিনাইয়। জট তৈয়ারী করিল। রুক্ষ কেশ অপূৰ্ব্ব বিষ্ঠাসবিশিষ্ট জটাভারে পরিণত হইল। তার পর সেই গৈরিক বসনখানি অৰ্দ্ধেক ছিড়িয়া ধড়া করিয়া চারু অঙ্গে শাস্তি পরিপান করিল। অবশিষ্ট অর্দেকে হৃদয় আচ্ছাদিত করিল। ঘরে একখানি ক্ষুদ্র দর্পণ ছিল, বহুকালের পর শাস্তি সেখানি বাহির করিল ; বাহির করিয়া দর্পণে আপনার বেশ আপনি দেখিল । দেখিয়া বলিল, “হায়, কি করিয়া কি করি ?” তখন দর্পণ ফেলির দিয়া, ষে চুলগুলি কাটা পড়িয় ছিল, তাহা লইয়। শুশ্র গুম্ফ রচিত করিল, কিন্তু পরিতে পারিল না। ভাবিল, “ছি ছি ছি, তাও কি হয় ? সে দিন কাল কি আছে ? তবে বুড়ে বেটাকে জব্দ করিবার জন্য এ তুলিয় রাখা ভাল ' এই ভাবিয়া শাস্তি সেগুলি কাপড়ে বাধিয়। রাখিল । তার পর ঘরের ভিতর হইতে এক বৃহৎ হরিণচৰ্ম্ম বাহির করিয়া কণ্ঠের উপর গ্রন্থি দিয়া কণ্ঠ হইতে জানু পৰ্য্যস্ত শরীর আবৃত করিল । এইরূপে সজ্জিত হইয়। সেই নুতন সন্ন্যাসী গৃহমধ্যে ধীরে ধীরে চারিদিক নিরীক্ষণ করিল। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর হইলে শাস্তি সেই সন্ন্যালিবেশে দ্বারোদঘাটন পূর্বক অন্ধকারে একাকিনী গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিল । বনদেবীগণ সেই নিশীথে কাননমধ্যে অপুৰ্ব্ব গীতধ্বনি শ্রবণ করিলেন । রাগিণী বাগীশ্বরী—তাল আড়া o "দর বড়ি ঘোড়া চড়ি কোথ! তুমি যাও রে, সমরে চলিচু আমি. হামে না ফিরাও রে । হরি হরি হরি হরি বলি রণ রঙ্গে, বfাপ দিব প্রাণ আজি সমর-তরঙ্গে, তুমি কার কে তোমার কেন এস সঙ্গে, রমণীতে নাহি সাধ, রণজয় গাও রে ” R "পায়ে ধরি প্রাণনাথ আমা ছেড়ে ষেও না, ঐ গুন বাজে ঘন রণজয়-বাজনা । a膏一e নাচিছে তুরঙ্গ মোর রণ করে কামনা, * উড়িল আমার মন ঘরে আর রব না, রমণীতে নাহি সাধ, রণজয় গাও রে ” তৃতায় পরিচ্ছেদ পরদিন আনন্দমঠের ভিতর নিভৃত কক্ষে বসিয়া ভগ্নোৎসাহ সন্তাননায়ক তিন জন কথোপকথন করিতেছিলেন । জীবানন্দ সত্যানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ ! দেবতা আমাদিগের প্রতি এমন অপ্রসন্ন কেন ? কি দোষে আমরা মুসলমানের নিকট পরাভূত হইলাম ?” সত্যানন্দ বলিলেন, “দেবতা অপ্রসন্ন নহেন, যুদ্ধে জয়-পরাজয় উভয় আছে, সে দিন আমরা জয়ী হইয়াছিলাম, আজ পরাভূত হইয়াছি, শেষ জয়ই জয় । আমার নিশ্চিত ভরস আছে যে, যিনি এত দিন আমাদিগকে দয়া করিয়াছেন, সেই শঙ্খচক্র-গদাপদ্মধারী বনমালী পুনৰ্ব্বার দয়া করিবেন । তাহার পাদস্পর্শ করিয়া যে মহাব্ৰতে আমরা ব্ৰতী হইয়াছি, অবশ্য সে । ত্ৰত আমাদিগের সাধন করিতে হইবে । বিমুখ হইলে । আমরা অনন্ত নরক ভোগ করিব, আমাদের ভাবী মঙ্গলের বিষয়ে আমার সন্দেহ নাই । কিন্তু যেমন দৈবানুগ্রহ ভিন্ন কোন কার্য্য সিদ্ধ হইতে পারে না, তেমনি পুরুষকারও চাই । আমরা যে পরাভূত হইলাম, তাহার কারণ এই যে, আমরা নিরস্ত্র । গোলাগুলী-বন্দুক-কামানের কাছে লাঠিসোটা-বল্পমে, কি হইবে ? অতএব আমাদিগের পুরুষকারে লাঘব ছিল বলিয়াই এই পরাভব হইয়াছে । এক্ষণে আমাদের কৰ্ত্তব্য, যাহাতে আমাদিগেরও ঐ অস্ত্রের অপ্রতুল नां झन्न । জীব । সে অতি কঠিন ব্যাপার। সত্য। কঠিন ব্যাপার " তুমি এমন কথা মুথে আনিলে ? পক্ষে কঠিন কাজ আছে কি ? জীব । কি প্রকারে তাহার সংগ্ৰহ করিব, আজ্ঞা করুন । সত্য। সংগ্রহের জন্য আমি আজ রাত্রে l করিব । যত দিন না ফিরিয়া আসি, ততদিন তে: কোন গুরুতর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিও না । কিন্তু সস্তানদিগের একতা রক্ষা করিও । তাহাদিগের গ্রাসাচ্ছাদন যোগাইও এবং মা'র রণজয়ের জন্য অর্থ: ভাণ্ডার পূর্ণ করিও । এই ভার তোমাদিগের দুই জনের উপর রহিল ।