পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b" ভবানন কিছু বিষ্মিত, কিছু ভীত হইলেন । বলিলেন,-“এ সকল কি কথা ?” , ধীর । আপনি তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া ছিলেন ? ভব । তার পর ? ধীর । আপনি সেই কামিনীর প্রতি অতিশয় অসুরক্ত । ভব । ( কিছু ভাবিয়া ) ধরানন্দ, কেন এত সন্ধান লইলে ? দেখ ধারানন্দ, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহ। সকলই সত্য । তুমি ভিন্ন আর কয় জন এ কথা জানে ? ধীর । আর কেহ না । ভব। তবে তোমাকে বধ করিলেই আমি কলঙ্ক হইতে মুক্ত হইতে পারি । ধীর । পার । ভব। অইস, তবে এই বিজন স্থানে তই জনে যুদ্ধ করি। হয় তোমাকে বধ করিয়া আমি নিষ্কণ্টক হই, নয় তুমি আমাকে বধ করিয়া আমার সকল জলি নিৰ্ব্বাণ কর । অস্ত্র আছে ? ধীর। আছে—শুধু হাতে কার সাধ্য ভোমার সঙ্গে এ সকল কথা কয় ? যুদ্ধই যদি তোমার মত হয়, তবে অবং করিব । সস্তানে সস্তানে বিরোধ নিষিদ্ধ, কিন্তু আত্মরক্ষার জন্ত কাহারও সঙ্গে বিরোধ নিষিদ্ধ নহে। যাহা বলিবার জন্য আমি তোমাকে খ্ৰী,জিতেছিলাম, তাঙ্গ সবটা শুনিয়া যুদ্ধ করিলে ভাল হয় না ? ভব। ক্ষতি কি, বল না । ভবানন্দ তরবারি নিষ্কাশিত করিয়া ধারানন্দের স্কন্ধে স্থাপিত করিলেন । ধারানন্দ মা পলায় । ধীর । আমি এই বলিতেছিলাম –তুমি কল্য। নীকে বিবাহ কর – ভব । কল্যাণী, তাও জান ? ধীর । বিবাহ কর না কেন ? ভব। তাহার যে স্বামী আছে ? ধীর । বৈষ্ণবের সেরূপ বিবাহ হয় । ভব। সে নেড় বৈরাগীর—সস্তানের নহে, সন্ত{ নের বিবাহই নাই । ধীর। সস্তানধৰ্ম্ম কি পরিহার্য্য—তোমার ঘে প্রাণ যায়। ছি ! ছি! আমার র্কাধ যে কাটিয়৷ গেল ? ( বাস্তবিক এবার ধারানন্দের স্কন্ধ হইতে রক্ত পড়িতেছিল ) ভব। তুমি কি অভিপ্রায়ে আমাকে অধৰ্ম্মে মতি দিতে আসিয়াছ ? অধগু তোমার কোন স্বার্থ আছে । - বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ধীর। তাহাও বলিবার ইচ্ছা আছে—তরবারি বসাইও না-বলিতেছি । এই সস্তানধৰ্ম্মে আমার হাড় জরজর হইয়াছে, আমি ইহা পরিত্যাগ করিয়া স্ত্রী-পুত্রের মুখ দেখিয়া দিনপাত করিবার জন্য বড় উতলা হইয়াছি । আমি এ সস্তানধৰ্ম্ম পরিত্যাগ করিব । কিন্তু আমার কি বাড়ী গিয়া বসিবার ষো আছে ? বিদ্রোহী বলিয়া আমাকে অনেকে চিনে, ঘরে গিয়া বসিলেই হয় রাজপুরুষ মাথা কাটিয়া লইয়। যাইবে, নয় সস্তানেরাই বিশ্বাসঘাতক বলিয়া মারিয়া ফেলিয়। চলিয়। যাইবে । এই জন্যই তোমাকে আমার পথে লইয়! যাইতে চাই । ভব । কেন, আমায় কেন ? ধীর। সেইটি আসল কথ। । এই সস্তানের তোমার আজ্ঞাধীন –সত্যানন্দ এখন এখানে নাই, তুমি ইহার নায়ক । তুমি এই সেনা লইয়া যুদ্ধ কর, তোমার জয় হইবে, ইহা অামার দৃঢ়বিশ্বাস । সুদ্ধজয় হইলে তুমি কেন স্বনামে রাজ্য স্থাপন কর না, সেন। ত তোমার আজ্ঞাকরি । তুমি রাজা হও, কল্যাণী তোমার মন্দোদরী হউক, আমি তোমার অনুচর হইয়। স্ত্রী-পুল্লের মুখাবলোকন করিয়৷ দিনপাত করি, আর আশীৰ্ব্বাদ করি । সস্তানধৰ্ম্ম আতলঙ্গলে ডুবাইয়। দাও । ভবানন্দ পীরানন্দের স্বন্ধ ইন্তে তরবারি ধীরে ধীরে নামষ্টিলেন । বলিলেন, “দারানন্দ ! সৃদ্ধ কর, তোমায় বধ করিব । আমি ইন্দ্রিয়পরবশ হইয়। থাকিব, কিন্তু বিশ্বাসহন্ত নষ্ট । তুমি আমাকে বিশ্বাসঘাতক হইতে পরামর্শ দিয়াছ, নিজেও বিশ্বাস ঘাতক ; তোমাকে মারিলে ব্ৰহ্মহত্যু হয় না । তোমাকে মারির " দ্বারানন্দ কথা শেষ হইতে ন হইতেই উদ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল । ভবানন্দ তাহার পশ্চাদবী হইলেন না । ভবানন্দ কিছুক্ষণ অঙ্গমন ছিলেন, যখন খুজিলেন, তখন আর তাহাকে দেখিতে পাইলেন ন । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ মঠে গিয়া ভবানন্দ গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন । সেই জঙ্গলমধ্যে এক স্থানে এক প্রাচীন অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে । ভগ্নাবশিষ্ট ইষ্টকাদির উপর লতাগুল্ম-কণ্টকাদি অতিশয় নিবিড়ভাবে জন্মিয়াছে । সেখানে অসংখ্য সূপের বাস । ভগ্ন প্রকোষ্ঠের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত অভয় ও পরিষ্কৃত