পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফোটে, ফোটে না । মেঘাচ্ছন্ন দিনে স্থলকমলিনীর ন্যায়, মুখ যেন ফোষ্টে ফোটে, তবু ফোটে না । ভীরু কবির কবিতাকুমুমের ন্যায়,মুখ যেন ফোটে ফোটে, তবু ফোটে না । মানিনী স্ত্রীলোকের মানকালীন কণ্ঠাগত প্রণয় সম্বোধনের ন্যায়, ফোটে ফোটে, তবু ফোটে না । তখন দলনী সহসা বীণা ত্যাগ করিয়া বলিল, “আমি গায়িব ন৷ ” নবাব বিস্মিত হষ্টয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ? রাগ না কি ?” দ। কলিকাতায় ইংরেজের যে বাজন বাজাইয়া গীত গায়, তাহাই একটি আনাইয়া দেন, তবেই আপনার সম্মুখে পুনৰ্ব্বার গীত গায়িব নহিলে আর গায়িব না । মীর কাসেম হাসিয়। বলিলেন,“যদি সে পথে কাট৷ না পড়ে, তবে অঁধষ্ঠ দিব ।” দ। কাটা পড়িবে কেন ? নবাব দুঃখিত হইয়। বলিলেন, “বুঝি তাদের সঙ্গে বিরোধ উপস্থিত হয়। কেন, তুমি কি সে সকল কথা শুন নাই ?” “শুনিয়ছি” কলিয়। দলনী নীরব রহিল মীর কাসেম জিজ্ঞাসা করিলেন, “দলনী বিবি, অঙ্গমন হইয়া কি ভাবিতেছ ? দলনী বলিল, “আপনি এক দিন বলিয়াছিলেন যে, যে ইংরেজদিগের সঙ্গে বিবাদ করিবে, সেই হারিবে-—তবে কেন আপনি তাঙ্গাদিগের সঙ্গে বিবাদ করিতে চাহেন ?—আমি বালিক, দাসী, এ সকল কথা আমার বলা নিতান্ত অন্যায়, কিন্তু বলিবার একটি অধিকার আছে । আপনি অনুগ্রহ করিয়া আমাকে ভালবাসেৰু ” নবাব বলিলেন, “সে কথা সত্য দলনী,—অামি তোমাকে ভালবাসি তোমাকে যেমন ভালবাসি, আমি কখনও স্ত্রীজাতিকে এরূপ ভালবাসি নাই বা বাসিব বলিয়া মনে করি নাই ।” দলনীর শরীর কণ্টকিত হইল। দলনী অনেকক্ষণ নীরব হইয়া রহিল—-তাহার ঢক্ষে জল পড়িল । চক্ষের জল মুছিয়া বলিল,—“যদি জানেন, যে ইংরেজের বিরোধী হুইবে, সেই হারিবে, তবে কেন তাহাদিগের সঙ্গে বিবাদ করিতে প্রস্তুত হইয়াছেন ?” মীর কাসেম কিঞ্চিৎ মৃত্যুম্বরে কহিলেন, “আমার আর উপায় নাই । তুমি নিতান্তই আমার, এই জন্য তোমার সাক্ষাতে বলিতেছি—আমি নিশ্চিত জানি, এ বিবাদে আমি রাজ্যভ্রষ্ট হইব, হয় ত প্রাণে নষ্ট হুষ্টব । তবে কেন যুদ্ধ করিতে চাই ? এ “আপনার সঙ্গে থাকিব বলিয়৷ ” ংরেজেরা যে অ’ লণ শরিতেছেন, তাহাতে র্তাহারাই রাজা, আমি রা “ । যে রাজ্যে আমি রাজ নই, সে রাজ্যে আমার প্রয়োজন ? কেবল তাহাই নহে । তাহারী বলেন, “রাজ। আমরা, কিন্তু প্রজাপীড়নের ভার তোমার উপর । তুমি আমাদিগের হইয়া প্রজাপীড়ন কর " কেন আমি তাহা করিব ? যদি প্রজার হিতার্থে রাজ্য করিতে না পারিলাম, তবে সে রাজ্য ত্যাগ করিব, অনর্থক কেন পাপ ও কলঙ্কের ভাগী হুই ? আমি সেরাজ উদ্দৌলা নহি বা মীর 翌帝消す。やて এfম তf e. 防, . ...• বাঙ্গালার অধীশ্বরের শত শত প্রশ করিল । বলি--"প্ৰাণেশ্বর ! আপনি যাহা বলিলেন, stহাতে আমি কি বলিব ? কিন্তু আমর একটি ভিক্ষা আছে । আপনি স্বয়ং যুদ্ধে যাইবেন না ।" মীর কা। এ বিষধে কি বাঙ্গালার নবাবের কৰ্ত্তব্য সে, স্ত্রীলোকের পরামর্শ শুনে ? ন বালিকার কৰ্ত্তব্য যে, এ বিষয়ে পরামর্শ দেয় ? দলনী অপ্রভিত হইল, ক্ষুণ্ণ হইল। বলিল, “আমি না বৃঝিয়। বলিয়াছি, অপরাপ মার্জন। করুন। স্ত্রীলোকের মন সহজে বুঝে না বলিয়াই এ মুকু কখ! বলিয়াছি । কিন্তু তার একটি ভিক্ষা চষ্ট ।” “কি ?” “আপনি আমাকে যুদ্ধে সঙ্গে লইয়া যাইবেন ?" “কেন, তুমি যুদ্ধ করিবে ন! কি ? বল,গুরগন গাকে লরতরম করিয়! তোমার বাহাল করি ?” দলনা আবার অপ্রতিভ হইল, কথা কহিতে পারিল ন! । মীর কাসেম তখন সস্নেহভাবে জিজ্ঞাস। করিলেন, “কেন যাইতে চাও ?" মীর কাসেম অস্বীকৃত হইলেন । কিছুতেই সন্মত হইলেন না । দলনী তখন ঈষৎ হাসিয়া কছিল, “জাহাপনা ! আপনি গণিতে জানেন ; বলুন দেখি, আমি যুদ্ধের সময় কোপায় থাকিব ?” মীর কাসেম হাসিয়া বলিলেন, “তবে কলমদান দাও ।” - দলনীর আজ্ঞাক্রমে পরিচারিকা সুবর্ণনিৰ্ম্মিত কলমদান আনিয়া দিল । মীর কাসেম হিন্দুদিগের নিকট জ্যোতিষ শিক্ষ করিয়াছিলেন, শিক্ষামত অঙ্ক পাতিয়া দেখিলেন । কিছুক্ষণ পরে, কাগজ দূরে নিক্ষেপ করিয়া, বিমর্ষ হইয়৷ বসিলেন । দলনী জিজ্ঞাসা করিল, “কি দেখিলেন ?”