পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ নাপিতানী অপ্রতিভ হইয়। বলিল,—“বলি, তা নয়, বলি, আমরা নাপিত—তোমাদের নৌকায় যদি মেয়েছেলে কেহ কামায়, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছি ?” চাকরাণী একটু নরম হইল। বলিল, “আচ্ছা, জিজ্ঞাসা করিয়া আসি ” এই বলিয়। সে শৈবলিনীকে জিজ্ঞাসা করিতে গেল যে, তিনি আলুত পরিবেন কি না । যে কারণেই হউক, শৈবলিনী অন্তমনা হইবার উপায় চিস্ত করিতেছিলেন, বলিলেন, “আল্‌ল পরিব।” তখন রক্ষকদিগেল অল্পমতি লষ্টয়া দাসী নাপিতনীকে নৌকার ভিতর পাঠাষ্টয় দিল । সে স্বয়ং পূৰ্ব্বমত পাকশালার নিকট নিসক্স রহিল। নাপিতনী শৈবলিনীকে দেখিয়া আর একটু ঘোমটা টানিয়া দিল এবং তাহার একটি চরণ লইয়। আলুত পরাইতে লাগিল। শৈবলিনী কিৎকাল নাপিতনীকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন । দেখিয়! দেখিয়া বলিলেন, “লাপিতানী, তোমার বাড়ী কোথা?” নাপিতানী কথা কহিল না । শৈবলিনী আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “নাপিতনী, তোমার নাম কি ?” তথাপি উত্তর পাইলেন না । “নাপিতনী, তুমি কাদছ?” নাপিতানী মূঢ়স্বরে বলিল, “ন। " “ঙ্গা, কাদছ," বলিয়া শৈবলিনী নাপিতানীর অবগুণ্ঠন মোচন করিয়া দিলেন । নাপিতানী কাদিতেছিল । অবগুণ্ঠন মুক্ত হইলে নাপিতানী একটু হাসিল । শৈবলিনী বলিল, “আমি আসামাত্র চিনেছি । আমার কাছে ঘোমটা ? মরণ আর কি ! ত। এখানে এলি কোথা হতে ?” - নাপিতানী আর কেহ নহে –সুন্দর ঠাকুরঝি । সুন্দরী চক্ষের জল মুছিয়। কহিল, “শীঘ্ৰ যাও । আমার এই শাড়ী পর, ছাড়িয়া দিতেছি । এই আলুতার চুবড়া নাও । ঘোমটা দিয়া নৌকা ইষ্টতে চলিয়। যাও।” শৈবলিনী বিমন ইইয়। জিজ্ঞাস করিলেন, “তুমি এলে কেমন করে ?" সু । কোথা হ'তে আসিলাম, আসিলাম-–সে পরিচয় দিন পাই ত এর পর দিব । তোমার সন্ধানে এখানে আসিয়াছি । লোকে বলিল, পান্ধী গঙ্গার পথে গিয়াছে । আমিও প্রাতে উঠিয়l, কাহাকে কিছু না বলিয়, টিয়! গঙ্গাতীরে আসিলাম । লোকে বলিল, বজরা উত্তরমুখে গিয়াছে । অনেক দুর, পা ব্যথা হইয়া গেল। তখন নৌকা ভাড়া কেমন করিয়া করিয়া তোমার পাছে পাছে আসিয়াছি । তোমার বড় নৌকা —ঢলে না, আমার ছোট নৌকা, তাই শীঘ্ৰ আসিয়া ধরিয়াছি । শৈ । একল| এলি কেমন ক'রে ? সুন্দরীর মুখে আসিল, “তুই কালামুখী, সাহেবের পান্ধী চড়ে এলি কেমন করে ?” কিন্তু অসময় বুঝির সে কথ। বলিল না । বলিল, “একলা আসি নাই, আম!র স্বামী আমার সঙ্গে আছেন । আমাদের ডিঙ্গা একটু দূরে রাখির। আমি নাপিতানী সাজিয় আসিয়াছি " শৈ । তার পর ? সু । তার পর তুমি আমার এই শাড়ী পর, এই আলু তার চুবড়ী নও, ঘোমটা দিয়া নৌকা হইতে নামিয়। যাও, কেহ চিনিতে পারিবে না । তারে তীরে ধাইবে । ডিঙ্গীতে আমার স্বামীকে দেখিবে । ননাই বলিয়া লজ্জ করিও না-চিঙ্গীতে উঠিয়া বসিও । তুমি গেলেই তিনি ডিঙ্গী খুলিয়া দিয়া, তোমায় বাড়ী লইয়ু থাইলেন । শৈবলিনা অনেকক্ষণ চিস্ত করিলেন, পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তার পর তোমার দশা ?” স্থ । আমার জন্য ভাবিও না । বাঙ্গালায় এমন ইংরেজ আসে নাই যে, সুন্দরী বামনীকে নৌকায় পূরিদ্র। রাখিতে পারে । আমর ব্রাহ্মণের কন্সী, বাক্ষণের স্ত্রা । আমাদের মন দৃঢ় পাকিলে পুথিবীতে আমাদের বিপদ নাই । তুমি যাও, ষে প্রকারে হয়, আমি রাত্রিমপে বাড়া যাইব । বিপত্ত্বিভঞ্জন মধু স্থদন আমার ভরসা। তুমি আর বিলম্ব করিও না —তোমার নন্দাইয়ের এখনও তাহার হয় নাই, আজি হবে কি না, তা ও বলিতে পারি না । শৈ । ভাল, আমি সেন গেলেম । গেলে সেখানে আমায় ঘরে লেবেন কি ? স্থ । ইলু লো-কেন নেবেন না ? না নেওয়াটা পড়ে রয়েছে আর কি ! শৈ । দেখ, ইংরেঙ্গে আমায় কেড়ে এনেছে--- তার কি আমার জাতি আছে ? সুন্দরা বিস্মিত হইয়। শৈবলিণীর মুখপানে ঢাকিয়। নিরক্ষণ করিতে লাগিল । শৈবলিনার প্রতি মৰ্ম্মভেদী তীরবৃষ্টি করিতে লাগিল -ওপধিস্পষ্ট বিষপরের স্তায় গৰ্ব্বিত শৈবলিনা মুখ নত করিল । সুন্দরী কিঞ্চিৎ পরুষ ভাবে জিজ্ঞাস করিল, “সত্য কথা বলুবি ?" শৈ বলিব । স্থ ; এই গঙ্গার উপর ?