পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইe i প্রকারে ? আমি অবিশ্বাসযোগ্য কথাতেও কখনও "কুখনও বিশ্বাস করি । রোহিণী মনে মনে বলিল, “নহিলে আমি তোমার জন্যে মরিতে বসিব কেন ? যাই হৌক, আমি ত মরিতে বসিয়াছি, কিন্তু তোমায় একবার পরীক্ষা করিয়া মরিব ।” প্রকাশ্বে বলিল, “সে আপনার মহিমা । কিন্তু তাপনাকে এ দুঃখের কাহিনী বলিয়াই বা কি হইবে ?” গো । যদি আমি তোমার কোন উপকার করিতে পারি । রে। কি উপকার করিবেন ? গোবিন্দলাল ভাবিলেন, “ইহার জোড়া নাই । যাই হউক, এ কাতর।—ইহাকে সহজে পরিত্যাগ করা নহে ।” প্রকাশ্বে বলিলেন, “যদি পারি, কৰ্ত্তাকে অনুরোধ করিব । তিনি তোমায়ু ত্যাগ করিবেন ।” রো। আর যদি আপনি অনুরোধ না করেন. তবে তিনি আমার কি করিবেন ? গে। শুনিয়াছ ত ? রো। “আমার মাথ। মুড়াইবেন, ঘোল ঢালিয়। দিবেন, দেশ হইতে বাহির করিয়া দিবেন । ইহার ভাল মন্দ কিছু বুঝিতে পারিতেছি না। এ কলঙ্কের পর, দেশ হইতে বাহির করিয়া দিলেই আমার উপকার। আমাকে তাড়াইয়া না দিলে, আমি আপনিই এ দেশ ত্যাগ করিয়া যাইব । আর এ দেশে মুখ দেখাইব কি প্রকারে ? ঘোল ঢাল বড় গুরুতর দণ্ড নয়, ধুলেই ঘোল যাইবে । বাকি এই কেশ–" এই বলিয়া রোহিণী একবার আপনার তরঙ্গক্ষুব্ধকৃষ্ণতড়াগ-তুল্য কেশদাম প্রতি দৃষ্টি করিল—বলিতে লাগিল—”এই কেশ, আপনি কাচি আনিতে বলুন, আমি বেীঠাকুরুণের চুলের দড়ি বিনাইবার জন্য ইস্থার সকলগুলি কাটিয়া দিয়া যাইতেছি।" গোবিন্দলাল ব্যথিত হইলেন । দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়৷ বলিলেন, “বুঝেছি রোহিণি ! কলঙ্কই তোমার দণ্ড । সে দণ্ড হইতে রক্ষা না হইলে অন্য দণ্ডে তোমার আপত্তি নাই ।” সু, রোহিণী এবার র্কাদিল । হৃদয়মধ্যে গোবিন্দ লালকে শত সহস্র ধন্যবাদ করিতে লাগিল। বলিল, “যদি বুঝিয়াছেন, তবে জিজ্ঞাসা করি, এ কলঙ্কদণ্ড হইতে কি আমায় রক্ষা করিতে পারিবেন?” • গোবিন্দলাল কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “বলিতে পারি না। আসল কথা শুনিতে পাইলে বলিতে পারি যে, পারিব কি না ।" - বঙ্কিমচন্দ্রেয় গ্রন্থাবলী রোহিণী বলিল, “কি জানিতে চাহেন, জিজ্ঞাসা করুন ।” গো । তুমি যাহা পোড়াইয়াছ, তাহা কি ? রো। জাল উইল । - গো । কোথায় পাইয়াছিলে ? রো। কর্তার ঘরে, দেরাজে । গো । জাল উইল সেখানে কি প্রকারে আসিল ? রে। আমিই রাখিয়া গিয়াছিলাম, ষে দিন আসল উইল লেখা-পড়া হয়, সেই দিন রাত্রে আসিয়া আসল উইল চুরি করিয়া জাল উইল রাখিয়া গিয়াছিলাম । e গো । কেন, তোমার কি প্রয়োজন ? রো। হরলাল বাবুর অনুরোধে । গোবিন্দলাল বলিলেন, “তবে কাল রাত্রে তাবার কি করিতে আসিয়াছিলে ?” রে। আসল উইল রাখিয়া জাল উইল চুরি করিবার জন্ত । গো । কেন ? জাল উইলে কি ছিল ? রো । বড় বাবুর বারে আনা --অlপনার এক পাই । গো । কেন আবার উইল বদলাষ্টতে আসিয়া ছিলে ? আমি ত কোন অনুরোধ করি নাই । রোহিণী কাদিতে লাগিল । বহুকষ্টে রোদন-সংবরণ করিয়া বলিল, “ন, অনুরোপ করেন নাই -কিন্তু যাহা আমি ইহজন্মে কখনও পাই নাই—যাহা ইহজন্মে আর কখনও পাইব না-আপনি আমাকে তাহ। দিযাছিলেন । গে| কি সে রোহিণি ? গে। সেই বারণী পুকুরের তীরে মনে করুন । গে| কি রোহিণি ? রে। । কি ? ইহজন্মে আমি বলিতে পারিব না- কি । আর কিছু বলিবেন না। এ রোগের চিকিৎসা নাই, আমার মুক্তি নাই । আমি বিষ পাইলে খাইতাম ; কিন্তু সে আপনার বাড়ীতে নহে । আপনি আমার অন্ত উপকার করিতে পারেন না, কিন্তু এক উপকার করিতে পারেন--একবার ছাড়িয় দিন, র্কাদিয়া আসি । তার পর যদি আমি বাচিয়া থাকি, তবে না হয়, আমার মাথা মুড়াইয়। ঘোল ঢালিয়া দেশছাড়া করিয়া দিবেন। গোবিন্দলাল বুঝিলেন। - দর্পণস্থ প্রতিবিম্বের ন্যায় রোহিণীর হৃদয় দেখিতে পাইলেন । বুঝিলেন, ষে মন্ত্রে ভ্রমর মুগ্ধ, এ ভুজঙ্গীও সেই মন্ত্রে মুগ্ধ হইয়াছে। তাহার আহলাদ হইল না—রাগও হুইল