পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকাস্তের উইল না—সমুদ্রবৎ যে হৃদয়, তাহ উদ্বেলিত করিয়া দয়ার উচ্ছ্বাস উঠিল । বলিলেন, “রোহিণি, মৃত্যুই বোধ হয়, তোমার ভাল, কিন্তু মরণে কাজ নাই । সকলেই কাজ করিতে এ সংসারে আসিয়াছি—আপনার আপনার কাজ না করিয়া মরিব কেন ?” গোবিন্দলাল ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন । রোহিণী বলিল, “বলুন না ?” গো ! তোমাকে এ দেশ ত্যাগ করিয়া যাইতে হুইবে । রেী ! কেন ? গো । তুমি আপনি ত বলিতেছিলে তুমি এ দেশ ত্যাগ করিতে চাও । রে । আমি বলিতেছিলাম লজ্জায়, তাপনি বলেন কেন ? গো ! তোমায় আমায় আর দেখা-শুনা না হয় । রোহিণী দেখিল, গোবিন্দলাল সব বুঝিয়াছেন । মনে মনে বড় অপ্রতিভ হইল--বড় সুখী হইল, তাহার সমস্ত যন্ত্রণ ভুলিয়া গেল। আবার তাহার বঁাচিতে সাধ হইল। আবার তাহার দেশে থাকিতে বাসনা জন্মিল । মঞ্জস্য বড়ই পরাধীন । রোহিণী বলিল “আমি এখনই যাইতে রাজি আছি, কিন্তু কোথায় ঘাইব ?” গো । কলিকাতায় । সেখানে আমি আমার এক জন বন্ধুকে পত্র দিতেছি । তিনি তোমাকে একখানি বাড়ী কিনিয়া দিবেন, তোমার টাক। লাগিবে না । রো। আমার খুড়ার কি হইবে ? গো । তিনি তোমার সঙ্গে যাইবেন, নহিলে তোমাকে কলিকাতায় যাইতে বলিতাম না । রো । সেখানে দিনপাত করিব কি প্রকারে ? গো । আমার বন্ধু তোমার খুড়ার একটি চাকরী করিয়া দিবেন । রো । খুড়া দেশত্যাগে সন্মত হইবেন কেন ? গো । তুমি কি তাহাকে এই ব্যাপারের পর সম্মত করিতে পারিবে না ? রো । পারিব, কিন্তু আপনার জ্যেষ্ঠতাতকে সন্মত করিবে কে ? তিনি আমাকে ছাড়িবেন কেন ? গো । আমি অনুরোধ করিব । রো। তাহা হইলে আমার কলঙ্কের উপর কলঙ্ক । আপনারও কিছু কলঙ্ক । গো - সত্য ; তোমার জন্য কর্তার কাছে ভ্রমর অনুরোধ করিবে । তুমি এখন ভ্রমরের অনুসন্ধানে যাও । তাহাকে পাঠাষ্টয়া দিয়া, আপনি এই বাষ্ট্র তেই থাকিও । ডাকিলে যেন পাই ।

  • ફ્રેં রোহিণী সজলনয়নে গোবিন্দলালকে দেখিতে দেখিতে ভ্রমরের অনুসন্ধানে গেল । এইরূপে কলঙ্কে;

বন্ধনে রোহিণীর প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণ হইল । .." مجتمع-ج-ته గ• : ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ভ্রমর শ্বশুরকে কোন প্রকার অনুরোধ করিম্ভে, স্বীকৃত হইল না—বড় লজ্জ করে, ছি! অগঙ্গ গোবিন্দলাল স্বয়ং কৃষ্ণকান্তের কাছে গেলেন ; কৃষ্ণকান্ত তখন আহারান্তে পালঙ্কে অৰ্দ্ধশয়ানাবস্থায় আলবোলার নল হাতে করিয়া—সুষুপ্ত। এক দিকে র্তাহার নাসিক নাদমুরে গমকে গমকে তানমূর্ছনাদি সহিত নানাবিধ রাগরাগিণীর আলাপ করিতেছে—আর এক দিকে তাহার মন অহিফেনপ্রসাদাৎ ত্রিভুবনগামী আশ্ব আরূঢ় হইয়া নানাস্থান পর্যটন করিতেছে। রোহিণীর চাদপান মুখখান বুড়ারও মনের ভিতর ঢুকিয়ছিল বোধ হয়,–চাদ কোথায় উদয় না হয় ? নহিলে বুড়া আফিঙ্গের ঝেণকে ইন্দ্রাণীর স্কন্ধে সে মুখ বসাইবে কেন ? কুষ্ণকান্ত দেখিতেছেন যে, রোহিণী হঠাৎ ইন্দ্রের শচী হইয়া মহাদেবের গোয়াল হইতে র্যাড় চুরি করিতে গিয়াছে। নদী ত্রিশূল হস্তে র্যাড়ের জার দিতে গিয়া তাহাকে ধরিয়াছে । দেখিতেছেন, নন্দী রোহিণীর আলুলায়িত কুন্তলদাম ধরিয়া টানাটানি লাগাইয়াছে এবং ষড়াননের ময়ুর সন্ধান পাইয়া তাহার সেই আগুলফবিলম্বিত কুঞ্চিত কেশগুচ্ছকে স্ফীতফণাফণিশ্রেণী ভ্ৰমে গিলিতে গিয়াছে—এমন সময়ে স্বয়ং ষড়ানন ময়ূরের দৌরাত্ম্য দেখিয়া নালিশ করিবার জন্ত মহাদেবের কাছে উপস্থিত হইয়৷ ডাকিতেছেন, “জ্যেঠামহাশয় ।” - কৃষ্ণকান্ত বিস্মিত হইয়া ভাবিতেছেন, কাৰ্ত্তিক মহাদেবকে কি সম্পর্কে জ্যেঠামহাশয় বলিয়া ডাকিতেছেন? এমন সময় কাৰ্ত্তিক আবার ডাকিলেন, “জোঠামহ+ শয় ।” কৃষ্ণকান্ত বড় বিরক্ত হইয়া কাৰ্ত্তিকের কান মলিয়া দিবার অভিপ্রায়ে হস্ত উত্তোলন করিলেন । অমনি কৃষ্ণকাস্তের হস্তস্থিত আলবোলার নল হাত হইতে খসিয়া বানাৎ করিয়া পানের বাটার উপর পড়িয়া গেলঃ পানের বাট ঝন ঝন ঝনাৎ করিয়া পিকদানির উপর পড়িয়া গেল এবং নল, বাটা, পিকদানি সকলই একয়ে সহগমন করিয়া ভূতলশায়ী হইল। সেই শব্দে কৃষ্ণ কান্তের নিদ্রাভঙ্গ হইল। তিনি নয়নোন্মীলন করিয়া দেখেন যে, কাৰ্ত্তিকেয় যথার্থই উপস্থিত। মূৰ্ত্তিমান