পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: es శ .#'. 彎

শুনিস নাই ? মেজবাবু যে রোহিণীকে সাত হাজার

tাকার গহনা দিয়াছে।” যমের হাতে সমর্পণ করিল। ভ্রমর হাড়ে হাড়ে জলিয়। মনে মনে স্বরধুনীকে প্রকাশ্বে একটা পুতুলের মুণ্ড মোচড় দিয়া ভাঙ্গিয়া সুরধুনীকে বলিল, “তা আমি জানি, খাতা দেখিয়াছি । তোর নামে চোঁদ . হাজার টাকার গহনা লেখা আছে ।” বিনোদিনী সুরধুনীর পর রামী, বামী, হ্যামী, কামিনী, রমণী সারদা, প্রমদা, সুখদ, বরদা, কমলা, বিমলা, শীতলা, নিৰ্ম্মল, মধু নিধু বিধু তারিণী, নিস্তারিণী, দীন তারিণী, ভবতারিণী, সুরবালা, :গিরিবালা, ব্রজবলি, শৈলবাল প্রভৃতি অনেকে আসিয়া একে একে, দুষ্টসে হৃষ্টয়ে, তিনে তিনে দুঃখিনী বিরহকাতরা বালিকাকে জানাইল যে, তোমার স্বামী রোহিণীর প্রণয়াসক্ত । কেহ সুবর্তী, কেহ প্রৌঢ়া, কেহ বর্ষীয়সী, কেহ বা বালিক, সকলেই আসিয়া ভ্রমরকে বলিল, “আশ্চর্য কি ? মেজবাবুর রূপ দেখে কে না ভোলে ? রোহিণীর রূপ দেখে তিনিই ব৷ না ভুলিবেন কেন ?” কেহ আদর করিয়া, কেহ চিড়াইয়া, কেহ রসে, কেহ রাগে, কেহ সুখে, কেহ দুঃখে, কেহ হেসে, কেহ কেঁদে ভ্রমরকে জানাইল থে, "ভ্রমর, তোমার কপাল ভাঙ্গিয়াছে।" গ্রামের মধ্যে ভ্রমর সুখী ছিল । তাহার সুখ দেখিয়া সকলেই হিংসায় মরিত—কালে কুংসিতের এত সুখ, অনন্ত ঐশ্বৰ্য্য —দেবদুল্লভ স্বামী লোকে কলঙ্কশূন্ত যশ-অপরাজিতাতে পদ্মের আদর ? আবার তার উপর মল্লিকার সৌরভ ? গ্রামের লোকের এত সহিত না ; তাই পালে পালে, দলে দলে, কেহ ছেলে কোলে করিয়া, কেহ ভগিনী সঙ্গে করিয়া, কেহ কবরী বাধিয়।, কেহ কবরী লাপিতে বাধিতে, কেহ এলোচুলে সংবাদ দিতে আসিলেন— "ভ্রমর, তোমার সুখ গিয়াছে " কাহারও মনে হইল করিয়া, হৰ্ম্মতলে শয়ন করিয়া, ধুলবিলুষ্ঠিত ন যে, ভ্রমর পতিবিরহবিধুরী, নিতান্ত দোষশৃঙ্গ, দুঃখিনী বালিকা । ভ্রমর আর সহ্য করিতে ন পারিয়া, দ্বার রুদ্ধ হুইয়।

কাদিতে লাগিল । মনে মনে বলিল, “হে সন্দেহভঞ্জন !

হৈ প্রাণাধিক ! তুমিই আমার সন্দেহ, তুমিই আমার বিশ্বাস । আজ কাহাকে জিজ্ঞাসা করিব ? আমার কি সন্দেহ হয় ? কিন্তু সকলেই বলিতেছে"। সত্য না হইলে সকলে বলিবে কেন ? তুমি এখানে নাই, আজ আমার সন্দেহভঞ্জন কে করিবে ? অামার সন্দেহুভঞ্জন হুইল না—তবে মরি না কেন ? এ

অলঙ্কার দিয়াছে । बंझिबकरट्झब्र यहांबलैौ সন্দেহ লইয়া কি বাচ যায়—আমি মরি না কেন ? ফিরিয়া আসিয়া, প্রাণেশ্বর ! আমায় গালি দিও না যে, ভোমরা অামায় না বলিয়া মরিয়াছে।” দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ এখন ভ্রমরেরও যে জালা, রোহিণীরও সেই জাল ; কখ। যদি ব্লটিল, রোহির্গার কানেই বা না উঠিবে কেন ? রোহিণী শুনিল, গ্রামে রাষ্ট্র যে, গোবিন্দলাল তাহার গোলাম, সাত হাজার টাকার কথা যে কোথ। হইতে রটিল, তাত রোহিণী শুনে নাই ! কে রটাইল, তাহীর কোন তদন্ত করে নাই ; একেবারে সিদ্ধান্ত করিল যে, তবে ভ্রমরষ্ট রটাইয়াছে নহিলে এত গায়ের জাল কার ? রাহিণী ভাবিল-ভ্ৰমর আমাকে বড় জালাইল । সে দিন চোর অপবাদ, আজ আবার এই অপবাদ । এ দেশে আর থাকিব না, কিন্তু যাইবার আগে একবার ভ্রমরকে হাড়ে হাড়ে ভ্রালাইয়!"যাইব । রোহিণী ন পারে, এমন কাজষ্ট নাই, ইহ। তাহার পূর্ণপরিচয়ে জান। গিয়াছে । রোহিণী কোন প্রতিবাসিনীর নিকট হইতে একখানি বারাণসী শাড়ী ও এক স্কট গিলুটির গহন। চাহিয়৷ আনিল । সন্ধ্য হইলে সেই গুলি পুটুলি বাধিয়। সঙ্গে লইয়। রায়দিগের অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল। যথায় ভ্রমর একাকিনী মুংশয্যায় শয়ন করিয়৷ এক একবার কাদিতেছে, এক একবার চক্ষের জল মুছিয়া কড়িপানে চাহিয়৷ ভাবিতেছে, তথায় রোহিণী গিয়। পুটুলি রাখিয়। উপবেশন করিল। ভ্রমর বিস্মিত হইল— রোহিণীকে দেখিয়া বিষের জ্বালায় তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ জলিয়। গেল । সহিতে না পারিয়া ভ্রমর বলিল, “তুমি সেদিন রাত্রে ঠাকুরের ঘরে চুরি করিতে আসিয়াছিলে; আজ রাত্রে কি আমার ঘরে সেক্ট অভিপ্রায়ে আসি য়াছ নাকি ?” রোহিণী মনে মনে বলিল যে, “তোমার মুগুপাত করিতে আসিয়াছি।” প্রকাতে বলিল, “এখন আর আমার চুরির প্রয়োজন নাই ; আমি আর টাকার কাঙ্গাল নহি । মেজবাবুর অনুগ্রহে আমার আর খাইবার পরিবার দুঃখ নাই। তবে লোকে যতট৷ বলে, ততটা নহে ।” ভ্রমর বলিল, “তুমি এখান হইতে দূর হও " রোহিণী সে কথা কানে না তুলিয়া বলিতে লাগিল, “লোকে যতটা বলে ততটা নহে। লোকে বলে,