পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল আমি সাত হাজার টাকার গহন। পাষ্টয়াছি । মোটে তিন হাজার টাকার গহন। আর এই শাড়ীখানি পাইয়াছি। তাই তোমায় দেখাইতে আসিয়াছি । সাত হাজার টাক! লোকে বলে কেন ?” এই বলিয়া রোহিণী পুটুলি খুলিয়া বারাণসী শাড়ী ও গিলুটির গহনাগুলি ভ্রমরকে দেখাইল। ভ্রমর লাথি মারিয়া অলঙ্কারগুলি চারিদিকে ছড়াইয়া দিল । রোহিণী বলিল, “সোনায় পা দিতে নাই ।” এই বলিয়া রোহিণী নিঃশপে গিলটির অলঙ্কারগুলি একে একে কুড়াইয়া, আবার পুটলি বাধিল, পুটুলি বাধিয়া নিঃশব্দে সেখান হইতে বাঙ্কির শুষ্টয়া গেল । আমাদের বড় দুঃখ রহিল। ভ্রমর ক্ষীরোদাকে পিটিয়া দিয়াছিল, কিন্তু রোহিণীকে একটি কিলও মাবিল না, এই তাrমাদের তান্তরিক দুঃখ । আমাদের পাঠিকার উপস্থিত থাকিলে রোহিণীকে যে স্বহস্তে পহার করিত্নে, তদ্বিযয়ে আমাদিগের কোন সংশয় নাই । গ্রীলোকের গায়ে হাত তুলিতে নাই, এ কথা মানি ; কিন্তু রক্ষসী বা পিশাচীর গায়ে যে তাত তুলিতে নষ্ট, এ কথ। তাত মানি না । তবে লমর যে রোহিণীকে কেন মারিল না, তাহা বুঝাইতে পারি, লমর ক্ষীবোদাকে ভালবাসিত, সেই জন্য তাতাকে মারপিট কলিমাছিল । লোহিণীকে ভালবাসিত ন', এই জন্য হাত উঠিল না । চেলেস ছেলেয় ঝগড়া কবিলে জননী আপনার ছেলেটিকে মারে, পরের ছেলেটিকে মারে ন! । ত্ৰৈয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ সে রাত্রি প্রভাত ন হইতেষ্ট ভ্রমর স্বামীকে পত্র লিখিহ্নে বসিল । লেখাপড় গোবিন্দলাল শিখাইয়।ছিলেন, কিন্তু ভ্রমর লেখাপড়ায় ভ ত মজবুত হইয়া উঠে নাই ; ফুলটি পুতুলটি পাখীটি স্বামীটিতে ভ্রমরের মন, লেখাপড় বা গৃহকৰ্ম্মে তত নহে ! কাগজ লইয়া লিখিতে বসিলে, একবার মুছিত, একবার কাটিত, একবার কাগজ বদলাইয়। আবার মুছিত, আবার কাটিত । শেষ ফেলিয়া রাখিত । দুই তিন দিনে একখানা পত্র শেষ হইত না, কিন্তু আজ সে সকল কিছু হইল না। তেড়াবাক ছাদে যাহা লেখনীর অগ্ৰে বাহির হইল, আজ তাহাই ভ্রমরের মঞ্জুর । "ম"গুলা “স"র মত হুইল—“স"গুলা “ম"র মত হইল —“ধ"গুলা "ক"র মত, “ফ"গুলা “থ”র মত, “থ"ণ্ডল “খ”র মত, ইকারের স্থানে আকার—আকারের ثم ذه একেবারে লোপ, যুক্ত অক্ষরের স্থানে পৃথক পৃথকৃ. অক্ষর ; কোন কোন অক্ষরের লোপ -ভ্ৰমর কিছু মানিল না। ভ্রমর আজি এক ঘণ্টার মধ্যে এক দীর্ঘ পত্র স্বামীকে লিখিয়া ফেলিল । কাটাকুটি যে ছিল : না, এমন নহে। আমরা পত্ৰখানির কিছু পরিচয় দিতেছি । লমর লিখিতেছে— “সেবিক শ্ৰী ভোগ রা” (তার পর ভোমরা কাটিয়া, ভ্রমর করিল,) “দাস্তাঃ" (আগে দাম্মা, তাহ কাটিয়া দাস্থ্য—তাঙ্গ কাটিয়া দাস্ত্যে দাস্যাঃ ঘটিয়া উঠে নাই ) “প্রণামাঃ” প্র লিখিতে প্রথমে “শ্র”, তার পর "শ্র" শেষে “প্র” । ) “নিবেদনঞ্চ” (প্রথমে নিবেদঞ্চ) তার পর ( নিবেদনঞ্চ ), “বিশেস” ( বিশেষঃ হইয়া উঠে নাই ) । এষ্টরূপ পত্র লেখার প্রণালী । যাহা লিখিয়াছিল, তাঙ্গর বর্ণগুলি শুদ্ধ করিয়া ভাষা একটুকু সংশোধন কবিমা নিয়ে লিখিতেছি । “সে দিন রাত্রে বাগানে কেন তোমার দেরী হৃষ্টয়াছিল, তাহা আমাকে ভাঙ্গিয়া বলিলে না। দুই বৎসর পরে বলিবে বলিয়াছিলে, কিন্তু আমি কপালের দোমে আগেই তাহ শুনিলাম । শুনিয়াছি কেন, দেখিয়াছি । তুমি রোহিণীকে যে বস্ত্রীলঙ্কার দিয়াছ, . লঙ্গ। সে স্বয়ং আমাকে দেখাইয়া গিয়াছে । 浣 তুমি মনে জান, বোধ হয় যে, তোমার প্রতি । আমার ভক্তি আচল—তোমার উপর আমার বিশ্বাস অনন্ত । আমিও তাহ! জানিতাম ; কিন্তু এখন বুঝিলাম যে, তাহা নহে। যত দিন তুমি ভক্তিযোগ্য, তত দিন আমারও ভক্তি ; যত দিন তুমি বিশ্বাসী, তত দিন আমারও বিশ্বাস । এখন তোমার উপর । আমার ভক্তি নাই, বিশ্বাসও নাই । তোমার দর্শনে আমার আর সুখ নাই । তুমি যখন বাড়ী আসিবে, আমাকে অন্নগ্ৰহ করিয়৷ খবর লিখিও—আমি . কাদিয়া কাটিয়া যেমন করিয়া পারি, পিত্রালয়ে যাইব ।” গোবিন্দলাল সথাকালে সেই পত্র পাইলেন । তাহার মাথায় বজাঘাত হইল । কেবল হস্তাক্ষরে এবং বর্ণাশুদ্ধির প্রণালী দেখিয়াই তিনি বিশ্বাস করিলে ষে, এ ভ্রমরের লেখা । তথাপি মনে অনেকবার সন্দেহ করিলেন--ভ্রমর তাহাকে এমন পত্র লিখিতে পারে, তাহা তিনি কখনও বিশ্বাস করেন নাই । সেই ডাকে আরও কয়খানি পত্র আসিয়াছিল। গোবিন্দলাল প্রথমেই ভ্রমরের পত্র খুলিয়াছিলেন,