পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.. পাইলেন "প্রাণ যায়। তোমার উপর বেীমা সকল দৌরাত্ম্য । હરે পড়িয়া স্তম্ভিতের ন্যায় অনেকক্ষণ নিশ্চেষ্ট রহিলেন ; ...তার পর সেই পত্রগুলি অঙ্গমনে পড়িতে আরম্ভ । করিলেন, তন্মধ্যে ব্ৰহ্মানন্দ ঘোষের একখানি পত্র কবিতাপ্রিয় ব্রহ্মানন্দ লিখিয়াছেন— “ভাই হে ! রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়--উলুখড়ের করিতে পারেন । কিন্তু আমরা দুঃখী প্রাণী, ঃঃ আমাদিগের উপর এ দৌরাত্ম্য কেন ? তিনি রাষ্ট্র করিয়াছেন যে, তুমি রোহিণীকে সাত হাজার টাকার অলঙ্কার দিয়াছ । আরও কত কদৰ্য্য কথা রটিয়াছে, তাহা তোমাকে লিখিতে লজ্জ করে,-যাহ হৌক, তোমার কাছে আমার নালিশ–তুমি ইহার বিহিত করিবে । নহিলে আমি এখানকার বাস উঠাইব । ইতি ।” গোবিন্দলাল আবার বিস্মি ত হইলেন —ত্ৰমর রটাইয়াছে ? মৰ্ম্ম কিছুই না বুঝিতে পারিয়া গোবিন্দলাল সেই দিন আজ্ঞা প্রচার করিলেন যে, এখানকার জলবায়ু আমার সহ হইতেছে না, অ’মি কালই বাটী যাইব । নৌক প্রস্তুত কর।” পরদিন নৌকারোহণে, বিষঃ-মনে গোবিন্দলাল গৃহে যাত্রা করিলেন । চতুৰ্ব্বিংশতিতম পরিচ্ছেদ ষাহাকে ভালবাস, তাহাকে নয়নের আড় করিও না। যদি প্রেমবন্ধন দৃঢ় রাখিবে, তবে স্থত। ছোট করিও । বাঞ্ছিতকে চোখে চোখে রাখিও, অদর্শনে কত বিষময় ফল ফলে । যাহাকে বিদায় দিবার সময়ে কত কঁাদিয়াছ, মনে করিয়াছ, বুঝি তাহাকে ছাড়িয়া দিন কাটিবে না—কয় বৎসর পরে তাহার সহিত আবার যখন দেখা হইয়াছে. তখন কেবল জিজ্ঞাসা করিয়াছ—“ভাল গাছ ত ?” হয় ত সে কথাও হয় ; নাই—কথাই হয় নাই—অস্তিরিক বিচ্ছেদ ঘটিয়াছে। ছয় ত রাগে অভিমানে আর দেখাই হয় নাই । তত নাই হউক, একবার চক্ষের বাহির হইলেই, যা ছিল, তা আর হয় না ; ষা যায়, তা আর আসে না ; যা ভাঙ্গে, তা আর গড়ে না । মুক্তবেণীর পর যুক্তবেণী কোথায় দেখিয়াছ ? ভ্রমর গোবিন্দলালকে বিদেশ যাইতে দিয়া ভাল করেন নাই। এ সময়ে দুই জনে একত্রে থাকিলে এ মনের মালিন্ত বুঝি ঘটিত না । বাচনিক বিবাদে আসল কথা প্রকাশ পাইত। ভ্রমরের এত ভ্ৰম ঘটিত বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী না। এত রাগ হইত না। রাগে এই সৰ্ব্বনাশ হইত না । গোবিন্দলাল স্বদেশে যাত্র করিলে,—নায়েব কৃষ্ণ কাস্তের নিকট এক এভেল। পাঠাইল যে, মধ্যম বাবু অদ্য প্রাতে গৃহাভিমুখে যাত্রা করিয়াছেন। সে পত্র ডাকে আসিল । নৌকার অপেক্ষ ডাক আগে আসে । গোবিন্দলাল স্বদেশে পেছিবার চারি পাচ দিন আগে, কৃষ্ণকাস্তের নিকট নায়েবের পত্র পৌছিল। ভ্রমর শুনিলেন, স্বামী আসিতেছেন । ভ্রমর তখনই আবার পত্র লিখিতে বসিলেন । খান চারি পাচ কাগজ কালিতে পূরাইয়া ছিড়িয়া ফেলিয়া ঘণ্টা দুই চারি মধ্যে একখানা পত্র লিখিয়া খাড়া করিলেন । এ পত্রে মাতাকে লিখিলেন যে, “আমার বড় পীড়া হইয়াছে। তোমরা যদি একবার আমাকে লইয়। যাও, তবে আরাম হুইয়। আসিতে পারি। বিলম্ব করিও ন], পীড়া বৃদ্ধি হইলে আর আরাম হুইবে না। পার যদি কল লোক পাঠাইও । এখানে পীড়ার কথ। বলিও ন৷ ” এই পত্র লিখিয় গোপনে ক্ষরি চাকরাণীর দ্বার লোক ঠিক করিয়া, ভ্রমর তাহ পিত্ৰালয়ে পাঠাইয়। দিল । যদি ম ন হইয়া আর কেহ হইত, তবে ভ্রমরের পত্র পড়িয়াই বুঝিতে পারি ত যে, ইহার ভিতর কিছু জুয়াচুরি আছে। কিন্তু মা সস্তানের পীড়ার কথা শুনিয়া একেবারে কাতর হইয়া পড়িলেন । উদেশে ভ্রমরের শাশুড়ীকে এক লক্ষ গালি দিয়া, স্বামীকে কিছু গালি দিলেন এবং কাদিয়া কাটিয়। স্থির করিলেন যে, আগামী কল বেহারা-পান্ধী লইয়। চাকর-চাকরাণী ভ্রমরকে আনিতে সাইবে ; ভ্রমরের পিতা, কৃষ্ণকান্তকে পল লিখিলেন । কৌশল করিয়া, ভ্রমরের পীড়ার কোন কথা না লিখিয়া লিখিলেন যে, “ত্রমরের মাতা অত্যন্ত পীড়িত হইয়াছেন, ভ্রমরকে একবার দেখিতে পাঠাইয়া দিবেন " দাসদাসীদিগকে সেই মত শিক্ষা দিলেন । কৃষ্ণকান্ত বড় বিপদে পড়িলেন । এ দিকে গোবিন্দলাল আসিতেছে, এ সময়ে ভ্রমরকে পিত্রালয়ে পাঠান অকৰ্ত্তব্য । ও দিকে ভ্রমরের মাতা পীড়িত, না পাঠাইলেও নয়। সাত পাচ ভাবিয়া চারি দিনের কড়ারে ভ্রমরকে পাঠাইয়া দিলেন । চারি দিনের দিন গোবিন্দলাল আসিয়া পৌঁছিলেন। শুনিলেন যে, ভ্রমর পিত্রালয়ে গিয়াছে, আজি তাহাকে আনিতে পান্ধী যাইবে । গোবিন্দলাল সকলই বুঝিতে পারিলেন । মনে মনে বড় অভিমান হইল। মনে মনে ভাবিলেন, “এত অবিশ্বাস ? না বুঝিয়া না