পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্ত এক জন মুহুরিকে আজ্ঞা করিলেন, “আমার উইল পড় ।” মুহুরি পড়িয়া সমাপ্ত করিল। কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “ও উইল ছিড়িয়। ফেলিতে হইবে। নূতন উইল লেখ ।” মুহুরি জিজ্ঞাসা করিল, “কিরূপ লিখিব ?" কৃষ্ণকান্ত বলিলেন, “যেমন আছে, সব সেইরূপ, কেবল—” “কেবল কি ?” ,“কেবল গোবিন্দলালের নাম কাটিয়া দিয়া তাহার স্থানে আমার ভ্রাতুপুত্রবধু ভ্রমরের নাম লেখ । ভ্রমরের অবর্তমানাবস্থায় গোবিন্দলাল ঐ অৰ্দ্ধাংশ পাইবে লেখ ।” সকলে নিস্তদ্ধ হইয়। রহিল । কেহ কোন কথ। কহিল ন! ! মুহুরি গোবিন্দলালের মুখপানে চাহিল, গোবিন্দলাল ইঙ্গিত করিলেন, “লেখ ।" মুহুরি লিখিতে আরম্ভ করিলেন । লেখা সমাপন হইলে কৃষ্ণকান্ত স্বাক্ষর করিলেন । সাক্ষিগণ স্বাক্ষর করিল। গোবিন্দলাল আপনি উপযাচক হইয়। উইলখানি লইয়। তাহতে সীক্ষিস্বরূপ স্বাক্ষর করিলেন । উইলে গোবিন্দলালের এক কপর্দক ও নাই— ভ্রমরের অৰ্দ্ধাংশ । সেই রাত্রে হরিনাম করিতে করিতে তুলসীতলায় কুষ্ণকান্ত পরলোকগমন করিলেন । সপ্তবিংশতিতম পরিচ্ছেদ কৃষ্ণকাস্তের মৃত্যুসংবাদে দেশের লোক ক্ষোভ করিতে লাগিল । কেহ বলিল, “একটা ইন্দ্রপাত হইয়াছে," কেহ বলিল “একটা দিকৃপাল মরিয়াছে।” কেহ বলিল, “পৰ্ব্বতের চুড়া ভাঙ্গিয়াছে।” কৃষ্ণকান্ত বিষয়ী লোক, কিন্তু খাটি লোক ছিলেন এবং দরিদ্র ও ব্রাহ্মণপণ্ডিতকে যথেষ্ট দান করিতেন, সুতরাং অনে কেই তাহার জন্য কাতর হইল । সৰ্ব্বাপেক্ষ ভ্রমর । এখন কাজে কাজেই ভ্রমরকে আনিতে হইল। কৃষ্ণকান্তের মৃত্যুর পরদিনই গোবিন্দলালের মাতা উদ্যোগী হইয়া পুত্রবধূকে আনিতে পাঠাইলেন । ভ্রমর আসিয়া কৃষ্ণকাস্তের জন্ত কঁাদিতে আরম্ভ করিল। গোবিন্দলালের সঙ্গে ভ্রমরের প্রথম সাক্ষাতে রোহিণীর কথা লইয়া কোন মহাপ্রলয় ঘটিবার সম্ভাবনু ছিল কি না, তাহ আমরা ঠিক বলিতে পারি २छ्र-** ・ "..・ কৃষ্ণকাত্তের উইল - - 瓷 లి(t ఛ ন। কিন্তু কৃষ্ণকান্তের শোকে সে সকল কথা এখন : চাপ পড়িয়া গেল। ভ্রমরের সঙ্গে গোবিন্দলালের } যখন প্রথম সাক্ষাৎ হইল, তখন ভ্রমর জ্যেষ্ঠশ্বশুরের জন্য কাদিতেছে, গোবিন্দলালকে দেখিয়া আরও কঁদিতে লাগিল । গোবিনালালও অশ্রীবর্ষণ করিলেন। , অতএব যে বড় হাঙ্গামার আশঙ্কা ছিল, সেটা " গোলমালে মিটিয়া গেল ! জুই জনেই তাহা বুঝিল । দুই জনেই মনে মনে স্থির করিল যে, যখন প্রথম দেখায় কোন কথাই হইল না তবে আর গোলযোগ করিয়া কাজ নাই--গোলযোগের এ সময় নহে । , মানে মানে কৃষ্ণকাস্তের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হইয়া স্বীকৃ— . তাহার পরে যাহার মনে যা থাকে, তাহা হইবে r; তাই ভাবিয়া গোবিন্দলাল একদা উপযুক্ত সময় বুঝিয়া" ভ্রমরকে বলিয়া রাখিলেন “ভ্রমর ! তোমার সুঙ্গে আমার কয়েকটি কথা আছে, কথাগুলি বলিতে আমার বুক ফাটিয়া যাইবে । পিতৃশোকের অধিক যে শোক, আমি সেই শোকে এক্ষণে কাতর। এখন আমি সে সকল কথ। তোমায় বলিতে পারি না । শ্রাদ্ধের পর যাহা বলিবার আছে, তাহা বলিব । ইহার মধ্যে সে সকল কথার প্রসঙ্গে কোন কাজ নাই ।” ভ্রমর অতি কষ্টে নয়নাশ্র সংবরণ করিয়া বাল্যুপরিচিত দেবতা কালী, দুর্গা, শিব, হরি স্মরণ করিয়া বলিল, “আমারও কিছু বলিবার আছে। তোমার যখন অবকাশ হইবে, জিজ্ঞাসা করিও ।” আর কোন কথা হইল না । দিন যেমন কাটিত, তেমনি কাটিতে লাগিল, দেখিতে দেখিতে তেমনি দিন কাটিতে লাগিল ; দাসদাসী, স্কৃহিণী, পৌরস্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন কেহ জানিতে পারিল না যে, আকাশে মেঘ উঠিয়াছে, কুসুমে কীট প্রবেশ করিয়াছে, এ চারু প্রেমপ্রতিমায় ঘুণ লাগিয়াছে। : কিন্তু ঘুণ লাগিয়াছে ত সত্য । যাহা ছিল, তাঁহা । আর নাই। যে হাসি ছিল, সে হাসি আর নাই ॥ ভ্রমর কি হাসে না ? গোবিন্দলাল কি হাসে না ? হাসে ; কিন্তু সে হাসি আর নাই। নয়নে নয়নে । মিলিতে যে হাসি আপনি উছলিয়া উঠে, সে হাসি: আর নাই। যে হাসি আধ হাসি, আধ গ্রভি; সে হাসি আর নাই ; যে হাসি অৰ্দ্ধেক বলেী সংসার মুখময়, অৰ্দ্ধেক বলে, মুখের আকাঙ্ক্ষী পূরিল না—সে হাসি আর নাই । সে চাহুঞ্জি নাই—যে চাহনি দেখিয়া ভ্রমর ভাবিত, "এত রূপঃ ষে চাহনি দেখিয়া গোবিন্দলাল ভাবিত, “এওঁ গুণঠুি সে চাহনি আৰু নাই ; যে চাহনিতে গোবিন্দলের