কৃষ্ণকান্তের উইল ছেলেমানুষ হ’লে কি হয়, আমার ত দিন ফুরাল। দিন ফুরাল ত আর বিলম্ব করিব কেন ? অামার অনেক টাকা আছে, আমি রতনিয়ম করিব । কে এ সকল করাইবে ? বাবা, তুমি তাহার ব্যবস্থা কর।” মাধবীনাথ কোন উত্তর করিলেন না—ঘক্ষণ অসহ্য হইলে তিনি বহিৰ্ব্বাটীতে আসিলেন । বঙ্গি । বৰ্বাটীতে অনেকক্ষণ বসিয়। রোদন করিলেন । কেবল রোদন নহে —সেই মৰ্ম্মভেদী দুঃখ মাপবানাথের হৃদয়ে ঘোরতর ক্রোধে পরিণত হইল । মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন যে “সে আমার কন্যার উপর এ অত্যাচার করিয়াছে –ত৷হার উপর তেমমি অত্যাচার করে এমন কি জগতে কেতু নাই ?" - ভাবিতে ভাবিতে মাপবীনাথের হৃদয় কা শুরতার পরিবর্তে ক্রোধে পরিব্যাপ্ত হইল । মাধবীনাথ তখন রক্সোংফুল্ললোচনে প্রতিজ্ঞ করিলেন, “সে তামার ভ্রমরের এমন সৰ্ব্বনাশ করিয়াছে, আমি হুiহার এ মলি সৰ্ব্বনাশ করিব।” তখন মাপীনাথ কলক সুস্থির হইয়। অন্তঃপুরে পুনঃপ্রবেশ করিলেন । কন্সার কাছে গিয়। বলিলেন, “ম, তুমি প্রত নিয়ম করিবার কথা বলিতেছিলে, আমি সেই কথাই ভাবিতেছিলাম। এখন তোমার শরীর বড় রুগ্ন, বত-নিয়ম করিতে গেলে অনেক উপবাস করিতে হয়, এখন তুমি উপবাস সন্স করিতে পারিবে না । একটু শরীর সারুক " ল। এ শরীর কি আর সারিবে ? মাধ। সীরিবে, ম| –কি হইয়াছে ? তোমার একটুও এখানে চিকিৎস হইতেছে না –কেমন করিয়াই বা হইবে ? শ্বশুর লাই শাশুড়ী নাই, কেহু-কাছে নাই—কে চিকিৎসা করাষ্টবে ? তুমি এখন আমার সঙ্গে চল । আমি তোমাকে বাড়ী রাখিয় চিকিৎস। করাইব ! আমি এখন দুষ্ট দিন এখানে থাকিব, তাহার পর তোমাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া রাজগ্রামে যাইব । রাজগ্রামে ভ্রমরের পিরালয় । কন্যার নিকট হইতে বিদায় হইয়া মাধবীনাথ কন্যার কার্য্যকারকবর্গের নিকট গেলেন । দেওয়ান জীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, বাবুর কোন পত্রাদি আসিয়া থাকে ?” দেওয়ানজী উত্তর করিল, “কিছু ন} }" : মাধবীনাথ । তিনি এখন কোথায় আছেন ? দেওয়ানজী । তাহার কোন সংবাদই আমরা কেহ বলিতে পারি না । তিনি কোন সংবাদই পাঠান नां । ২যু-১৬ 88’ মাধ। কাহার কাছে এ সংবাদ পাইভে পারিব ** দে। তাহ জানিলে ত আমরা সংবাদ লইতাম : কাশীতে মাতাঠাকুরাণীর কাছে সংবাদ জানিতে লোক, পাঠাইয়াছিলাম –কিন্তু সেখানেও কোন সংবাদ ঃ আইসে না । বাবুর এক্ষণে অজ্ঞাতবাস । "y তৃতীয় পরিচ্ছেদ মাধবীনাথ কষ্ঠার দুর্দশ দেখিয় স্থির প্রতিজ্ঞ, করিয়াছিলেন সে, ইহার প্রের্তীকার করিবৃেন}; গোবিন্দলাল ও রোহিণী এই অনিষ্ট্রের মূল ! অতএব । প্রথমেই সন্ধান কৰ্ত্তব্য, সেই পামর-পামরী কোথায় আছে ? ন৮েং ষ্ট্রের দণ্ড হইবে না। --ভমরও মরিবে । তাহার একেবারে লুকাইয়াছে। যে সকল স্থত্রে তাহীদের বরিবার সম্ভাবন।, সকলই অবচ্ছিন্ন করিয়াছে, পদচিহ্নমার মুছিয়া ফেলিয়াছে। কিন্তু মাধবীনাথ বলিলেন যে, “যদি আমি তাঁহাদের সন্ধান করিতে না পরি, তরে বৃথাই আমার পৌরুষের শ্লাঘা করি ” এইরূপ স্থির সংকল্প করিয়া মাধবীনাথ একাকী রায়দিগের বাড়া হইতে বহির্গত হইলেন । হরিদ্রাগ্রামে একটি পোষ্ট আফিস ছিল ; মাধবীনাথ বেত্ৰহস্তে হেলিতে তুলিতে, পান চিবাইতে চিধাইতে, ধীরে ধীরে নিরাহু ভালমাল্লুসের মত সেইখানে গিয়া দর্শন দিলেন । ৬iকঘরে, অন্ধকার চালাঘরের মধ্যে মাসিক পনের টাকা বেতনভোগ একটি ডিপুটী পোষ্টমাষ্টার বিরাজ করিতেছেন । একটি আম্রকাষ্ঠের ভগ্ন টেবিলের উপরে কতকগুলি চিঠি, চিঠির ফাইল, চিঠির খাম, একখানি খুরিতে কতকটা জিউলের আটা, একটি নিক্তি, ডাকঘরের মোহর ইত্যাদি লইয়া পোষ্টমাষ্টার ওরফে পোষ্ট বাবু গম্ভীরভাবে পিয়ন মহাশয়ের নিকট আপন প্রভুত্ব বিস্তার করিতেছেন। ডিপুটী পোষ্ট্র মাষ্টার বাপু পান পনের টাকা, পিয়ন পান ৭ টাকা । সুতরাং পিয়ন মনে করে, সাত আনা আর পনের আনায় যে তফাৎ, বাবুর সঙ্গে আমার সঙ্গে তাহার অধিক তফাৎ নহে । কিন্তু বাবু মনে মনে জানেন যে, আমি একটা ডিপুটী—ও বেটা পিয়াদী-আমি ইহার হৰ্ত্ত কওঁ| বিধাতাপুরুষ—উহাতে অামাতে জমীন আশমান ফারাক্ । এই কথা সপ্রমাণ করিবার জন্য পোষ্টমাষ্টার বাবু সৰ্ব্বদা সে গরিবকে তর্জন-গর্জন করিয়া থাকেন—সেও সাত আনার ওজনে উত্তর দিয়া থাকে। বাবু আপাততঃ চিঠি ওজন করিতেছিলেন এবং পিয়াদাকে সঙ্গে সঙ্গে আশী আনার ওজনে
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।