পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল নি। আমি সে জন্য আপনাদিগের হরিদ্রাগ্রামের বাটীতে গিয়াছিলাম । দানেশ খ। বলিল, “দে। বাত ছোড়কে তিন বাত হুয়া " নি। ওস্তাদজি শূরার গুণচে না কি ? ওস্তাদজি চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়৷ গোবিন্দলালকে বলিলেন, “বাবু সাহেব, ইয়ে বেতমিজ আদমিকে বিদ। দিজিয়ে ।” কিন্তু বাবুসাহেব তখন অন্যমনস্ক হইয়াছিলেন, কথা কহিলেন না । নিশাকর পলিতে লাগিলেন, “আপনার ভাৰ্য্য৷ আমাকে বিষয়গুলি পান্তনি দিতে স্বীকার হুইয়াছেন । কিন্তু আপনার অনুমতিসাপেক্ষ । তিনি আপনার ঠিকান ও জানেন না, পত্রাদি লিখিতেও ইচ্ছুক নহেন । সুতরা আপনার অভিপ্রায় জানিবার ভার আমার উপরেই পড়িল । আমি অনেক সন্ধানে আপনার ঠিকান জানিয় আপনার অল্পমতি লইতে আসিয়াছি ।” গোবিন্দলাল কোন উত্তর করিল না— বড় অন্ত মনস্ক । অনেক দিনের পর ভ্রমরের কথা শুনিলেন- - তাহার সেই ভ্রমর ! প্রায় দুই বৎসর হইল । নিশাকর কতৰ কতক বুঝিলেন । পুনরপি বলিলেন, “আপনাব যদি মত হয়, তবে এক ছত্র লিখিয় দিন যে, আপনার কোন আপত্তি নাই । তাহা হইলেই আমি উঠিয়! যাই ।” গোবিন্দলাল কিছুই উত্তর করিলেন ন| নিশা কর বুঝিলেন, আধার বলিতে হইল, আবার সকল কথাগুলি বুঝাইয়। বলিলেন । গোবিন্দলাল একবার চিত্ত সংযত করিয়া কথা সকল শুনিলেন নিশ করের সকল কথাই যে মিথ্যা, তাহ পাঠক বুঝিয়া ছেন ; কিন্তু গোবিন্দলাল তাহা কিছুই বুঝেন নাই, পূৰ্ব্বকার উগ্রভাব পরিত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আমার অনুমতি লওয়া অনাবশু্যক । বিষয় আমার স্ত্রীর, আমার নহে, বোধ হয়, তাহ জানেন । তাহার যাহাকে ইচ্ছা পত্তনি দিবেন, আমার বিধিনিষেধ নাই। আমিও কিছু লিখিব না । বোধ হয়, এখন আপনি আমাকে অব্যাহতি দিবেন ।” কাজে কাজেই নিশাকরকে উঠিতে হইল ; তিনি নীচে নামিয়া গেলেন । নিশাকর গেলে গোবিন্দলাল দানেশ খাকে বলিলেন, “কিছু গাও ” দানেশ খী প্রভুর আজ্ঞা পাইয়। আবার তমুরায় সুর বাধিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি গাইব ?” 8s o “ষা খুসি” বলিয়া গোবিন্দলাল তবলা লইলেন, গোবিন্দলাল পূৰ্ব্বেই কিছু কিছু বাজাইতে জানিতেন, এক্ষণে উত্তম বাজাইতে শিখিয়াছিলেন ; কিন্তু আজি দানেশ গার সঙ্গে তাহার সঙ্গত হইল না, সকল তালই কাটিয়া যাইতে লাগিল । দানেশ খ বিরক্ত হইয়া তন্তুর ফেলিয়। গত বন্ধ করিয়া বলিল, “আজি আমি ক্লান্ত হইয়াছি।” তখন গোবিন্দলাল একটা সেতার লইয়া বাজাইবার চেষ্টা করিলেন ; কিন্তু গৎ সকল ভুলিয়া । যাইতে লাগিলেন । সেতার ফেলিয়। নভেল পড়িতে আরম্ভ করিলেন । কিন্তু যাহা পড়িতেছিলেন, তাহার তখন বহি ফেলিয়া গোবিন্দলাল শয়নগৃহমধ্যে গেলেন । রোহিণীকে দেখিতে পাইলেন ন, কিন্তু সোন। চাকর নিকটে ছিল । দ্বার হইতে গোবিন্দলাল সোনাকে বলিলেন, “আমি এখন একটু ঘুমাইব, আমি আপনি ন উঠিলে আমাকে কেহ যেন উঠায় না ।" এই বলিয়া গোবিন্দলাল শয়নঘরের দ্বার রুদ্ধ করিলেন । তখন সন্ধ্য প্রায় উত্তীর্ণ হয় । দ্বার রুদ্ধ করিয়া গোবিন্দলাল ত ঘুমাইল না। খাটে বসিয়া দুই হাত মুখে দিয়া কাদিতে আরম্ভ করিল। কেন যে র্কাদিল, তাহ জানি ন} ভ্রমরের জন্য র্কাদিল, কি নিজের জন্য র্কাদিল, তাহা বলিতে পারি না । বোধ হয় তই ষ্ট। আমরা ত কান্ন বই গোবিন্দলালের অন্য উপায় দেখি না । ভ্রমরের জন্য র্কাদিবার পথ আছে, কিন্তু ভ্রমরের কাছে ফিরিয়া যাইবার আর উপায় নাই । হরিদ্রাগ্রামে আর মুখ দেখাইবার কথা নাই । হরিদ্রা অর্থবোধ হইল না । গ্রামের পথে কাটা পড়িয়াছে । কান্ন বই ত আর উপায় নাই । সপ্তম পরিচ্ছেদ যখন নিশাকর আসিয়া বড় হলে বসিল, রোহিণীকে সুতরাং পাশের কামরায় প্রবেশ করিতে হইয়াছিল । কিন্তু নয়নের অন্তরাল হইল মাত্ৰ— শ্রবণের নহে । কথোপকথন যাহা হইল, সকলই কান পাতিয়া শুনিল ; বরং দ্বারের পর্দাটি একটু সরাইয়া নিশাকরকে দেখিতে লাগিল ৷ নিশাকরও দেখিল যে, পর্দার পাশ হইতে 'একটি পটলচেরা চোখ: র্তাকে দেখিতেছে । রোহিণী শুনিল যে, নিশাকর অথব! রাসবিহারী হরিদ্রাগ্রাম হইতে আসিয়াছে ৷ রূপে চাকরও