পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকাণ্ডের উইল রোহিণী বসিয়া পড়িল । কিছু বলিল না, কাদিতে লাগিল । কিন্তু চক্ষের জল গোবিন্দলাল দেখিতে পাইলেন না । গোবিন্দলাল বলিলেন, রোহিণী দাড়াইল । গো । তুমি একবার মরিতে গিয়াছিলে, আবার মরিতে সাহস আছে কি ? রোহিণী তখন মরিবার ইচ্ছা করিতেছিল, অতি কাতর স্বরে বলিল, “এখন তার ন৷ মরিতে চাহিব “রোহিণি, দাড়াও " কেন ? কপালে যা ছিল, তা হলো । গো । তবে দাড়াও । নড়িও ন! ! রোহিণী দাড়াইয়া রহিল । গোবিন্দলাল পিস্তলের বাক্স পুলিলেন, পিস্তল বাহির করিলেন, পিস্তল ভর। ছিল । ভরাই থাকিত । পিস্তল তালিয়। রোহিণীর সম্মুখে ধরিয়া গোবিন্দলাল বলিলেন, “কেমন, মরিতে পারিবে ?” রোহিণী ভাবিতে লাগিল । সে দিন অনায়াসে, অক্লেশে, বারুণীৰ জলে ডুবিদ। মরিতে গিয়াছিল, আজি সে দিন রোহিণী ভুলিল । সে দুঃখ নাই, সুতরাং সে সাহস নাই । ভাসিল, “মরিব কেন ? মা হল, ইনি ত্যাগ করেন, করুন । তাকে কখনও ভুলিব না, কিন্তু তাই বলিস। মরিব কেন ? ইহাকে যে মনে ভাবিব, ব্লখের দশায় পড়িলে নে ষ্টতাকে মনে করিব, এঈ প্রসাদপুরের থেরাশি স মনে করিব, সেও ত এক সুখ, সেঃ ত এক আশ । মরিব কেন ?” রোহিণী বলিল, “মরিপ না, মারিও ন!. চরণে ন রাখ, বিদায় দাগু !" গে। ] ਯਿਲੋਂ } এই বলিয়া গোবিন্দলাল পিস্তল উঠাইরা রোহিণীর ললাটে লক্ষ্য করলেন । রোহিণী কাদিয়া উঠিল । বলিল, “মারিও না, মারিও না । আমার নবীন বয়স, নূতন মুখ । আমি আর তোমায় দেখা দিব না, আর তোমার পথে আসিব না । এখনই যাইতেছি, আমায় মারিও न] * গোবিন্দলালের পিস্তলে খট করিয়া শব্দ হইল । তার পর বড় শব্দ, তার পর সব অন্ধকার । রোহিণী গতপ্রাণ হইয়া ভূপতিত শুইল । গোবিন্দলাল পিস্তল ভূমে নিক্ষেপ করিয়া অতি দ্রুতবেগে গৃহ হইতে নির্গত হইলেন । পিস্তলের শব্দ শুনিয়া রূপে প্রভৃতি ভৃত্যবর্গ দেখিতে আসিল । দেখিল, বালকনখরবিচ্ছিন্ন পদ্মিনীবৎ রোহিণীর মৃতদেহ ভূমে লুটাইতেছে গোৱিন্দলাল কোথাও নাই ।

ro দশম পরিচ্ছেদ দ্বিতীয় বৎসর সেই রাত্রেই চৌকিদার থানায়ু গিয়া সংবাদ नॆिशः y যে, প্রসাদপুরের কুঠতে খুন হইয়াছে। সৌভাগ্যবশতঃ: থান। সে স্থান হইতে ছয় ক্রোশ ব্যবধান । দারোগ আসিতে পরদিন বেল প্রহরেক হইল । আসিয়া তিনি খুনের তদারকে প্রবৃত্ত হইলেন । রীতিমত সুরতহাল ও লাস তদারক করিয়া রিপোর্ট পাঠাইলেন । পরে রোহিণীর মুতদেহ ত্ৰাধিয়া ছান্দিয়া - গোরুর গাড়ীতে বোঝাই দিয়া চৌকিদারের সঙ্গে ডাক্তার iনায় পাঠাইলেন । পরে স্বান করিয়া আহারাদি করিলেন । তখন নিশ্চিন্ত হইয়! অপরাধীর অমুসন্ধানে প্রবৃক্ত হইলেন । কোথায় অপরাধী ? গোবিনলাল রাহিণীকে আহত করিয়াই গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছিলেন, আর প্রবেশ করেন নাই। এক রাত্র এক দিন অবকাশ পাইয়া গোবিন্দলাল কোথায়—কত দূর গিয়াছেন, তাহা কে বলিতে পারে ? কেহ তাহাকে দেখে নাই । কোন দিকে পলাইয়াছেন, কেহ জানে না, তাহার নাম পর্যন্ত কেহ জানিত না । গোবিন্দলাল প্রসাদপুরে কখনও নিজ নামধাম প্রকাশ করেন নাই, সেখানে চুণিলাল দত্ত নাম প্রচার করিয়াছিলেন । , কোন দেশ থেকে আসিয়াছিলেন, তাহা ভূত্যের এ পর্যন্তও জনিত না । দারোগী কিছু দিন ধরিয়া একে ওকে ধরিয়! জবানবন্দী করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । গোবিন্দ্রলালের কোন অসুসন্ধান করিয়া উঠিতে পারিলেন না । শেষে তিনি আসামী ফেরার বলিয়া এক খাতেম। রিপোর্ট দাখিল করিলেন । তখন যশোহর হইতে ফিচেল খী নামে এক জন সুদক্ষ ডিটেকটিভ ইন্‌স্পেক্টর প্রেরিত হইল । ফিচেল গার অনুসন্ধান-প্রণালী আমাদিগের সধিস্তারে বলিবার প্রয়োজন নাই। কতকগুলি চিঠিপত্র তিনি বাড়াতল্লাসীতে পাইলেন । তদ্বারা তিনি গোবিন্দলালের প্রকৃত নামধাম অবধারিত করিলেন । বলা বাহুল্য যে, তিনি কষ্ট স্বীকার করিয়া ছদ্মবেশে হরিদ্রাগ্রাম পর্য্যস্ত গমন করিলেন । কিন্তু গোবিনলাল হরিদ্রাগ্রামে যান নাই, সুতরাং ফিচেল খুঁ। সেখানে গোবিন্দলালকে প্রাপ্ত না হইয়া প্রত্যাবর্তন করিলেন । i