পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to “ঐ টাকার মধ্যে যৎকিঞ্চিং আমি যাদ্ধা করি । আট হাজার টাক আমি উহা হইতে লইলাম। তিন হাজার টাকায় গঙ্গাতীরে আমার একটি বাড়ী প্রস্তুত করিব, পাঁচ হাজার টাকায় আমার জীবন নিৰ্ব্বাহ হুইবে । “আপনার আসার জন্য সকল বন্দোবস্ত করিয়া রাথিয়| আমি পিত্রালয়ে যাইব । যতদিন না আমার বাড়ী প্রস্তুত হয়, তত দিন আমি পিত্রলয়ে বাস করিব, আপনার সঙ্গে আমার ইহজন্মে আর সাক্ষাৎ হুইবার সম্ভাবনা নাই । ইহাতে আমি সন্তুষ্ট,--আপনিও যে সস্তুষ্ট, তাহাতে আমার সন্দেহ নাই । “আপনার দ্বিতীয় রহিলাম।” বথাকালে পত্র গোবিন্দলালের হস্তগত হইল । কি ভয়ানক পত্ৰ ! এতটুকু কোমলতাও নাই । গোবিন্দলালও লিখিয়াছিলেন, ছয় বৎসরের পর লিখিতেছি, কিন্তু ভ্রমরের পত্রে সে রকমের কথাও একটা নাই । সেই ভ্রমর ! গোবিন্দলাল পত্র পড়িয়া উত্তর লিখিলেন, “আমি হরিদ্রাগ্রামে যাইব না । যাহাতে এখানে আমার দিনপাত হয়, এইরূপ মাসিক ভিক্ষা আমাকে এখানে পাঠাষ্টয়া দিও " ভ্রমর উত্তর করিলেন, “মাস মাস আপনাকে পাঁচ শত টাক পঠাইব । আরও অধিক পাঠাইতে পারি, কিন্তু অধিক টাকা পাঠাইলে ভাই। অপব্যয়িত পত্রের প্রতীক্ষায় আমি হুইবার সম্ভাবনা । আর আমার একটি নিবেদন, বৎসর বৎসর যে উপস্বত্ব জমিতেছে--আপনি এখানে আসিয়। ভোগ করিলে ভাল হয় । আমার জন্য দেশত্যাগ করিবেন না—আমার দিন ফুরাইয়৷ আসিয়াছে ।" গোবিন্দলাল কলিকাতাতেই রতিলেন । উভয়েই বুঝিলেন, সেই ভাল । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ সপ্তম বৎসর

বাস্তবিক ভ্রমরের দিন ফুরাইয়। আসিয়াছিল । অনেক দিন হইতে ভ্রমরের সাংঘাতিক পীড়া চিকিৎসায় উপশমিত ছিল। কিন্তু রোগ আর. চিকিৎসা মানিল না। এখন ভ্রমর দিন দিন ক্ষয় হইতে লাগিলেন । অগ্রহায়ণ মাসে ভ্রমর শষ্যাশায়িনী হইলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী আর শয্যাত্যাগ করিয়া উঠেন না । মাধবীনাথ স্বয়ং আসিয়া নিকটে থাকিয়া নিষ্ফল চিকিৎসা করাইতে লাগিলেন । যামিনী হরিদ্রাগ্রামের বাটীতে আসিয়| ভগিনীর শেষ শুশ্রুষা করিতে লাগিলেন । রোগ চিকিৎসা মানিল না । পৌষমাস এইরূপে গেল ; মাঘমাসে ভ্রমর ঔষধ-ব্যবহার পরিত্যাগ করিলেন, ঔষধ সেবন এখন বৃথা । ষামিনীকে বলিলেন, “আর ঔষধ খাওয়া হইবে না । দিদিসম্মুখে ফাল্গুন মাস-ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার রাত্রে যেন মরি। দেখিস দিদি –যেন ফাল্গুনের পূর্ণিমার রাত্রি পলাইয়া যায় মা বদি দেখিস যে, পূর্ণিমার রাত্রি পার হই—তবে আমায় একটা অন্তরটিপনি দিতে ভুলিস না । রোগে হউক, অস্তরটিপনিতে হউক, ফাল্গুনের জ্যোৎস্না-রাত্রে মরিতে হইবে । মনে থাকে যেন দিদি ” যামিনী কঁদিল, কিন্তু ভ্রমর আর ঔষধ খাইল ন। ঔষধ খায় না, রোগের শান্তি নাই—কিন্তু ভ্রমর দিন দিন প্রফুল্লচিত্ত হইতে লাগিল । এত দিনের পর ভ্রমর আবার হাসি-তামাস। আরম্ভ করিল ছয় বৎসরের পর এই প্রথম হাসিতামাস। ! নিবিবার আগে প্রদীপ হাসিল । মত দিন যাইতে লাগিল, অন্তিমকাল দিনে দিনে মৃত নিকট শ্লষ্টতে লাগিল, ভ্রমর স্থির, প্রফুল, হান্তমূৰ্ত্তি । শেষে সেই ভয়ঙ্কর শেষ দিন উপস্থিত হইল । ভ্রমর পৌরজনের চাঞ্চল এবং সামিনীর কান্না দেখিয় বুঝিলেন, আজ বুঝি দিন ফুরাইল । শরীরে ঘন্থণাও সেইরূপ অত্নভূত করিলেন । তখন ভ্রমর ঘামিনীকে বলিলেন -“আজি শেন দিন ।” যামিনী কাঢ়িল । লমর বলিল, “দিদি-আঞ্জ শেষ দিন—আমার কিছু ভিক্ষা আছে—কথা નિtશિષ્ટ " ঘামিনী কাদিতে লাগিল—কথ! কহিল না । লমর বলিল, “আমার এক ভিক্ষ, আজি কাদিও ম।—আমি মরিলে পর কাদিও আমি বারণ করিতে আসিব না—কিন্তু আজ তোমাদের সঙ্গে যে কয়টা কথা কহিতে পারি, নিৰ্ব্বিঘ্নে কহিয়! মরিব সাপ করিতেছে ।” যামিনী ঢক্ষের জল মুছিয়। কাছে বসিল—কিন্তু অবরুদ্ধ বাম্পে আর কথা কহিতে পারিল না । ভ্রমর বলিতে লাগিল—“আর একটি ভিক্ষা–তুমি ছাড়া আর কেহ এখানে না আসে । সময়ে সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিব—কিন্তু এখন আর কেহ না আসে। তোমার সঙ্গে আর কথা কহিতে পাব না ।” ○・ジ