পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাধারাণী প্রথম পরিচ্ছেদ রাধীরাণী নামে এক বালিকা মাহেশে রথ দেখিতে গিয়াছিল । বালিকার বয়স একাদশ পরিপূর্ণ হয় নাই । তাহাদিগের অবস্থা পূৰ্ব্বে ভাল ছিল— বড়মানুষের মেয়ে। কিন্তু তাহার পিতা নাই । ভাহার মাতার সঙ্গে এক জন জ্ঞাতির একটি মোকদম। হয়, সৰ্ব্বস্ব লইয়া মোকদ্দমা ; মোকদ্দমাটি বিধব। হাইকোটে হারিল । সে হারিবামাত্র, ডিক্রাদার জ্ঞাতি ডিক্রা জারি করিয়া ভদ্রাসন হইতে উহাদিগকে বাহির করিয়া দিল । প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি ডিক্ৰী জারি করিয়া লইল । খরচ ও ওয়াশিলাত দিতে নগদ বাহ! কিছু ছিল, তাহাও গেল । রাধারাণীর মাত অলঙ্কারাদি বিক্রয় করিয়া প্রিবিকেন্সিলে একটি আপীল করিল। কিন্তু আর তাহারের সংস্থান রহিল না । বিধবা একটি কুটীরে অtশ্রয় লইয়! কোন প্রকারে শারীরিক পরিশ্রম করিয়৷ দিনপাত করিতে লাগিল । রাধারাণীর বিবাহ দিতে পারিল না । কিন্তু ভাগফ্ৰমে রথের পুরে রাণারাণীর ম৷ ঘোরতর পীড়িত হইল—যে কায়িক পরিশ্রমে দিনপাত হইত, তাহা বন্ধ হহল । সুতরাং আর তাহরে চলে না । মাত রুগ্না, এ জন্য কাজে কাজেই তাহার উপবাস। রাধারাণীর জুটিল না বলিয়া উপবাস। রথের দিন তাহার মা একটু বিশেষ হইল, পথ্যের প্রয়োজন হইল ; কিন্তু পথ্য কোথায় ? কি দিবে ? রাধারাণী কাদিতে কাদিতে কতকগুলি বনফুল তুলিয়া তাহার মালা গাথিল। মনে করিল যে, এই মাল। রথের হাটে বিক্রয় করিয়া তুই একটি পয়সা পাইব, তাহাতেই মা'র পথ্য হইবে । কিন্তু রথের টান অৰ্দ্ধেক হইতে না হইতেই ঝড়বৃষ্টি আরস্ত হইল। বৃষ্টি দেখিয়া লোক ভাঙ্গিয়া গেল। মাল কেহ কিনিল না । রাধারণ মনে করিল যে, আমি একটু না হয় ভিজিলাম-বৃষ্টি থামিলেই আবার লোক জমিবে । কিন্তু বৃষ্টি আর থামিল না । লোক আর জমিল না । সন্ধ্যা হইল --রাত্রি হইল—বড় অন্ধকার হইল, অগত্যা রাধারাণী কাদিতে কঁাদিতে ফিরিল। a蛋一》动 অন্ধকার—পথ কর্দমময়,-পিচ্ছিল--কিছু দেখা যায় না। তাহাতে মুষলধারে শ্রাবণের ধারা বর্বিত্ত্বে ছিল । মাতার অন্নাভাব মনে করিয়া তদপেক্ষাঃ রাধারাণীর চক্ষু বারিবর্ষণ করিতেছিল। রাধারাষ্ট্ৰী কঁদিতে কঁাদিতে উঠিতেছিল, আবার কাদিতে কাঞ্জি তাছাড় খাইতেছিল। দুই গণ্ডবিলম্বী ঘন কুঞ্জ অলকাবলী বহিয়া, কবর বহিয়া, বৃষ্টির জল পড়িয়া ভাসিয়া যাইতেছিল। তথাপি রাধারাণী সেই এক পয়সার বনফুলের মাল৷ বুকে করিয়া রাখিয়াছিল— ফেলে নাই । န္က ႏို এমন অন্ধকারে অকস্মাৎ কে আসিয়া রাধারাণীর : ঘাড়ের উপর পড়িল । রাধারাণী এতক্ষণ উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয় কঁদে নাই—এক্ষণে উচ্চৈঃস্বরে কাদিল । , যে ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িয়াছিল, সে বলিল;" “কে গা তুমি কঁাদ ?" পুরুষমানুয়ের গলা—কিন্তু কণ্ঠস্বর শুনিয়া রাধারাণীর রোদন বন্ধ হইল। রাধারাণীর চেন। লোক নহে --কিন্তু বড় দয়ালু লোকের কথা—রাধ+ রাণীর ক্ষুদ্রবুদ্ধিটুকুতে ইহা বুঝিতে পারিল । রাধারাণী রোদন বন্ধ করিয়! বলিল, “আমি দুঃখী লোকের মেয়ে । আমার কেহ নাই—কেবল মা আছেন " : সে পুরুষ বলিল, “তুমি কোথায় গিয়াছিলে ?” রাধা । আমি রথ দেখিতে গিয়াছিলাম। ৰাষ্ট্ৰী যাইব । অন্ধকারে বৃষ্টিতে পথ দেখিতে পাইতেছি না । পুরুষ বলিল, “তোমার বাড়ী কোথায় ?” রাধারাণী বলিল, “শ্রীরামপুর " সে ব্যক্তি বলিল, “আমার সঙ্গে আইস-আমিও স্ত্রীরামপুর যাইব । চল, কোন পাড়ায় তোমার বাক্ট, --তাহা আমাকে বলিয়া দাও--আমি তোমাকে বাড়ী রাখিয়া আসিতেছি । বড় পিছল, তুমি মামার হাত ধর, নহিলে পড়িরা যাইবে ।" •. s. এইরূপে সেই ব্যক্তি রাধারাণীকে লইয়া চলিল, অন্ধকারে সে রাধারাণীর বয়স অনুমান করিতে পারে । নাই, কিন্তু কথার স্বরে বুঝিয়াছিল যে, রাধারাণী বড়; বালিকা। এখন রাধারাণী তাহার হাত ধরায় হস্তস্পর্শে জানিল, রাধারাণী বড় বালিকা। তখন সে জিজ্ঞাসা করিল যে, “তোমার বয়স কত ?” *- :