পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* , , বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী

  • গুরের যথার্থ উইল সিদ্ধ হইয়াছে ; অতএব রাধারাণী "একা সম্পত্তির অধিকারিণী হইবে । আপনি তাহাকে দেখিবেন, আপনার কন্যার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিবেন, এই আমার ভিক্ষ । আপনি এই কথা স্বীকার করিলেই আমি মুখে মরিতে পারি।”

কামাখ্যাবাবু বলিলেন, “আমি আপনার নিকট শপথ করিতেছি, আমি রাধারাণীকে আপনার কন্যার অধিক ষত্ব করিব । আমি কায়মনোবাক্যে এ কথা কহিলাম, আপনি বিশ্বাস করুন।" যিনি মুমু তিনি কামাখ্যাবাবুর ঢাক্ষর জল দেখিয়া তাহার কথায় বিশ্বাস করিলেন । র্তাহার সেই শীর্ণ শুষ্ক অধরে একটু আলাদের হাসি দেখা দিল। হাসি দেখিয়া কামাখ্যাবাবু বলিলেন, ইনি আর বঁাচিবেন না । কামাখ্যাবাবু তাহাকে বিশেষ করিয়া অনুরোধ করিলেন যে, “এক্ষণে আমার গৃহে চলুন পরে ভদ্রাসন দখল হইলে আসিবেন " রাধারাণীর মাতার যে অহঙ্কার, সে দারিদ্র্যজনিত –এজন্য দারিদ্র্যাবস্থায় র্তাহার গৃহে যাইতে চাহেন নাই । এক্ষণে আর দারিদ্র্য নাই, সুতরাং আর সে অহঙ্কারও নাই । এক্ষণে তিনি যাইতে সন্মত হইলেন । কামাখ্যাবাবু রাধারাণী ও তাহার মাতাকে সযত্নে নিজালয়ে লইয়। গেলেন । তিনি রীতিমত পীড়িতার চিকিৎসা করাইলেন, কিন্তু তাহার জীবনরক্ষ হইল না, অল্পদিনেই তাহার মৃত্যু হইল । উপযুক্ত সময়ে কামাখাবাবু রাধারাণীকে তাহার সম্পত্তিতে দখল দেওয়াইলেন । কিন্তু রাধারাণী বালিকা বলিয় তাহাকে নিজবাটীতে এক থাকিতে "দিলেন না, আপন গৃহেই রাখিলেন । কালেক্টর সাহেব রাধারাণীর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে আনিবার জন্য যত্ন পাইলেন, কিন্তু কামাখ্যাবাৰু বিবেচনা করিলেন, আমি রাধারাণীর জন্য যতদূর করিব, সরকারী কৰ্ম্মচারিগণ ততদূর করিবে না। কামাখ্যাবাবুর কৌশলে কালেক্টার সাহেব নিরস্ত হইলেন । কামাখ্যাবাবু স্বয়ং রাধারাণীর সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিতে লাগিলেন । বাকি রাধারাণীর বিবাহ। কিন্তু কামাখ্যাবাৰু নব্যতন্ত্রের লোক—বাল্য-বিবাহে তাহার দ্বেষ ছিল । তিনি বিবেচনা করিলেন যে, রাধারাণীর বিবাহ তাড়াতাড়ি না দিলে জাতি গেল মনে করে, এমত আর কেহ নাই । অতএব যবে রাধারাণী স্বয়ং বিবেচনা করিয়া বিবাহে ইচ্ছুক হইবে, তবে তাহার বিবাহ দিব । এখন সে লেখাপড়া শিখুক । এই ভাবিয়া কামাখ্যাবাবু রাধারাণীর বিবাহের কোন উদ্যোগ না করিয়া তাহাকে উত্তমরূপে সুশিক্ষিত করাইলেন । তৃতীয় পরিচ্ছেদ পাঁচ বৎসর গেল—-রাধারাণী পরম সুন্দর ষোড়শবর্ষীরা কুমারী । কিন্তু সে অন্তঃপুরমধ্যে বাস করে, লহার সে রূপরাশি কেহ দেখিতে পায় না। । এক্ষণে রাধারণীর সম্বন্ধ করিবার সময় উপস্থিত হইল । কামাখ্যাবাবুর ইচ্ছা, রাপারাণীর মনের কথা বুঝিয়। তাহার সম্বন্ধ করেন, তত্ত্ব জানিবার জন্য আপনার কল্প। বসন্তকুমারীকে ডাকিলেন । বসন্তের সঙ্গে-রাধীরাণীর সর্থীত্ব । উভয়ে সমবয়স্ক। এবং উভয়ের অত্যন্ত প্রণয় । কামাখ্যাবাবু বসন্তকে আপনার মনোগত কথা বুঝাইয়া বলিলেন । বসন্ত সলজ্জভাবে অথচ অল্প কাসিতে হাসিতে পিতাকে জিজ্ঞাসা করিল, “রুক্মিণীকুমার রায় কেহ আছে ?” কামাখ্যাবাবু বিস্মিত ইয়। বলিলেন, “ন । তা ত জানি না । কেন ?" বসন্ত বলিল, “রাধীরাণী রুক্মিণীকুমার ভিন্ন আর কাহাকেও বিবাহ করিবে না ।" কামাখ্যা । সে কি ? রাধারাণীর সঙ্গে অত্য ব্যক্তির পরিচয় কি প্রকারে ইষ্টল ? বসন্ত অবনতমুখে অল্প হাসিল । সে রথের রাত্রির বিবরণ সবিস্তারে রাধীরাণীর কাছে শুনিয়াছিল, পিতার সাক্ষাতে সকল কথ। বিবৃত করিল । শুনিয়া কামাখ্যাবার রুক্মিণীকুমারের প্রশংসা করিয়া বলিলেন, “রাধারাণীকে বুঝাইয়া বলিও, রাধারাণী একটি মহাশ্রমে পড়িয়াছে । বিবাহ কতজ্ঞতা অনুসারে কৰ্ত্তব্য নহে। রুক্মিণীকুমারের নিকট রাধারাণীর কৃতজ্ঞতাস্বীকারের যদি সময় ঘটে, তবে অবশু) প্রত্যুপকার করিতে হইবে, কিন্তু বিবাহে রুক্মিণীকুমারের কোন দাবীদাওয়া নাই । তাহাও আবার সে কি জাতি, কত বয়স, তাহ কেহ জানে না । তাহার পরিবার-সন্তানাদি থাকিবার সম্ভাবনা, রুক্মিণীকুমারের বিবাহু করিবারই বা সম্ভাবনা কি ?” বসন্ত বলিল, “সম্ভাবনা কিছুই নাই, তাহাও রাধারাণী বিলক্ষণ বুঝিয়াছে। কিন্তু সেই রাত্রি