পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ এমন সময়ে একটা গোল উঠিল যে, কামান, বন্দুক, গোলাগুলী লইয়া সসৈন্তে ফৌজদার বিদ্রোহীদিগের দমনার্থ আসিতেছেন । গোলাগুলীর কাছে ঢালসড়কী কি করিবে ? বলা বাহুল্য যে, নিমেষমধ্যে সেই ষোয়ানের দল অদৃষ্ঠ হইল । যে নিরস্ত্র বীরপুরুষেরা তাহাদের আশ্রয়ে লড়াই ফতে করিতেছি বলিয়া কোলাহল করিতেছিলেন, তাহারা বলিলেন, “আমরা ত বারণ করিয়াছিলাম ?” এই বলিয়৷ আর পশ্চাদ,ষ্টি না করিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে গৃহাভিমুখে ধাবিত হইলেন । ষাহার দাঙ্গার কোন সংস্রবে ছিল না, তাহারা চোরা গরুর অপরাধে কপিলার বন্ধন সম্ভাবন। দেখিয়া সীতরাম-গঙ্গারামকে নানাবিধ গালিগালাজ করিয়া আৰ্ত্তনাদপূৰ্ব্বক পলাইতে লাগিল । অতি অল্পকালমধ্যে সেই লোকারণ্য অন্তৰ্হিত হইল । প্রান্তর যেমন জনশূন্য ছিল, তেমনই জনশূন্য হইল । লোকজনের মপো কেবল সেই বৃক্ষ তলে চন্দ্রচুড়, সীতারাম, গঙ্গারাম, আর মূৰ্ছিত ভূতলস্থা ঐ । সীতারাম গঙ্গারামকে বলিলেন, “তুমি যে আমার ঘোড়া চুরি করিয়া পলাইয়াছিলে, সে ঘোড়া কি করিলে ? বেচিয়া খাইয়tছ ?” গঙ্গারাম হাসিয়া বলিল, “আজ্ঞে না, ঘোড়। মাঠে ছাড়িয়া দিয়াছি—ধরিয়া দিতেছি ।” সীতা । ধরিয়৷ তাহার উপর আর একবার চড়িয়া পলায়ন কর । গঙ্গা । আপনাদের ছাড়িয়া ? সীতা । তোমার ভগিনীর জন্য ভাবি ও ন! । গঙ্গা । আপনাকে ত্যাগ করিয়া আমি যাইব না । সীতা । তুমি বড় নদী পার হইয়! যাও । খামপুর চেন ত ? গঙ্গা । তা চিনি না ? সীতা । সেইখানে অতি দ্রুতগতি যাও, সেইখানে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবে ; নচেৎ তোমার নিস্তার নাই । গঙ্গা । আমি আপনাকে ত্যাগ করিয়া যাইব না । সীতারাম ভ্ৰকুটি করিলেন । গঙ্গারাম সীতারামের ভ্ৰকুটি দেখিয়া নিস্তব্ধ হইল এবং সীতারাম কিছু ধমক চমক করায় ভীত হইয়া অশ্বের সন্ধানে গেল । চন্দ্রচূড় ঠাকুর সীতারামের ইঙ্গিত পাইয়। তাহার অম্নবৰ্ত্তী হইলেন। শ্ৰী এদিকে চেতনাযুক্ত হইয়া ধীরে ২ঞ্জ-২২ ধীরে উঠিয়া বসিয়া মাথায় ঘোমটা টানিয়া দিল, তার: পর এদিকে ওদিকে চাহিয়া, উঠিয়া দাড়াইল । ' مجم-معتحصی-ع ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ সীতারাম বলিলেন,—“শ্রী, তুমি এখন কোথায় যাইবে ?” ঐ । আমার স্থান কোথায় ? সীতা । কেন, তোমার মার বাড়ী ? ঐ । সেখানে কে আছে ?—এখন সেখানে আমাকে কে রক্ষা করিবে ? সীতা । তবে তুমি কোথায় যাইতে ইচ্ছা কর ? ঐ । কোথাও নয় । সীতা । এইখানে থাকিবে ? এখানে তোমার মঙ্গল নাই । শ্ৰী । কেন, এখানে আমার কে কি করিবে ? সীতা । তুমি হাঙ্গামায় ছিলে --ফৌজদার তোমায় ফাসী দিতে পারে, মারিয়। ফেলিতে পারে ব৷ সেই রকম আর কোন সাজা দিতে পারে । শ্ৰী । ভাল । সীতা । আমি শুমপুরে যাইতেছি । তোমার ভাইও সেইখানে যাইবে । সেখানে তাহার ঘরদ্বার হইবার সস্তাবনা । তুমি সেইখানে যাও । সেখানে বা যেখানে তোমার অভিলাষ, সেইখানে বাস করিও । শ্ৰী । সেখানে কার সঙ্গে যাইব ? সীতা । আমি কোন লোক তোমার সঙ্গে দিব । শ্ৰী । এমন লোক কাহাকে সঙ্গে দিবে যে, দুরন্ত সিপাহীদিগের হত হইতে আমাকে রক্ষা করিবে ? সীতারাম কিছুক্ষণ ভাবিলেন ; বলিলেন, “চল, আমি তোমাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেছি।” ঐ সহসা উঠিয়া বসিল । উন্মুখী হইয়া স্থিরনেত্রে সীতারামের মুখপানে কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া রহিল। শেষে বলিল, “এত দিন পরে এ কথা কেন ?” সীতা । সে কথা বুঝান বড় দায় । নাই বুঝিলে ? ঐ । না বুঝিলে আমি তোমার সঙ্গে যাইব মা । যখন তুমি ত্যাগ করিয়াছ, তখন আর আমি তোমার সঙ্গে যাইব কেন ? যাইব বৈ কি ? কিন্তু তুমি দয়া করিয়া আমাকে কেবল প্রাণে বঁাচাইবার জন্য যে এক দিন আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইবে, আমি সে দয়া চাহি না । আমি তোমার বিবাহিত স্ত্রী; তোমার সর্বম্বের অধিকারিণী—আমি তোমার শুধু দয়া লইব কেন ? যাহার আর কিছুতেই অধিকার নাই, সেই দয়া চায়। এ যে মাঠ ।