পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতাঁরাম আর মৃত্তিকাপ্রোথিত ভগ্নগৃহাবশিষ্ট প্রস্তর, ইষ্টক বা মনোমুগ্ধকর প্রস্তর-গঠিত মূৰ্ত্তিরাশি। তাহার দুই চারিটা কলিকাতার বড় বড় ইমারতের ভিতর থাকিলে কলিকাতার শোভ হইত.! হায় ! এখন কি না হিন্দুকে ইণ্ডাষ্ট্রয়ল স্কুলে পুতুল-গড় শিখিতে হয় । কুমারসম্ভব ছাড়িয়া সুইন্‌বৰ্ণ পড়ি, গতা ছাড়িয়া মিলু পড়ি, আর উড়িষ্যার প্রস্তর শিল্প ছাড়িয়া সাহেবদের চীনের পুতুল । করিয়া দেখি । আরও কি কপালে আছে, বলিতে পারি না । আমি যাহা দেখিয়াছি, তাহাই লিখিতেছি । সেই ললিতগিরি আমার চিরকাল মনে থাকিবে । চারিদিকে—যোজনের পর যোজন ব্যাপির-–হরিদ্বর্ণ ধান্তক্ষেত্র, মাত বসুমতীর অঙ্গে বহু-যোজন-বিস্তুত পীতাম্বরী শাটী ! তাহার উপর মাতার অলঙ্কার স্বরূপ তালবৃক্ষ শ্রেণী—সহস্ৰ সহস্ৰ, তার পর সহস্ৰ সহস্র তালবৃক্ষ ; সরল, স্থপত্র, শোভাময় ! মধ্যে নীলসলিল। বিরূপা, নীল পীত পুষ্পময় হরিংক্ষেত্রমধ্য দিয়া বহিতেছে—সুকোমল গালিচার উপর কে নদী আঁকিয়া দিয়াছে । ত| মাক-–চারি পাশে মুত মহাত্মাদের মহীয়সী কীৰ্ত্তি । পাতর এমন করিয়! যে পালিশ করিয়াছিল, সে কি এক্ট আমাদের মত হিন্দু ? এমন করিয়া বিনাবন্ধনে সে গাথিয়ছিল, সে কি আমাদের মত হিন্দু ? আর এই প্রস্তরমূৰ্ত্তি সকল যে ক্ষোদিয়াছিল,—এই দিব। পুষ্পমালাভরণভূষিত - বিকম্পিতচেলাঞ্চলপ্রবৃদ্ধসৌন্দর্য্য, সৰ্ব্বাঙ্গমুন্দরগঠন, পৌরুষের সঙ্গিত লবণ্যের মূৰ্ত্তিমান সন্মিলন স্বরূপ পুরুষমূৰ্ত্তি যাহার গড়িয়াছে, তাহারা কি হিন্দু ? এইরূপ কোপপ্রেমগৰ্ব্বসৌভাগ্য ফুরিতাধর চৗরাস্বর, তরলিতরত্নহারা, পীবর যৌবনভারাবনতদেহ - তন্ত্ৰী শু্যাম শিখরিদর্শন। পক্কবিস্বাধরোষ্ঠী মধ্যে ক্ষাম চকিতহরিণীপ্রেক্ষণ নিয়নাভিঃ — এই সকল স্ত্রীমূৰ্ত্তি যার গড়িয়াছে, তার। কি হিন্দু ? তখন হিন্দুকে মনে পড়িল । তখন মনে পড়িল, উপনিষদ, গীত, রামায়ণ, মহাভারত, কুমারসম্ভব, শকুন্তলী, পাণিনি, কাত্যায়ন, সাংখ্য, পাতঞ্জল, বেদান্ত, বৈশেষিক, এ সকল হিন্দুর কীৰ্ত্তি—এ পুতুল কোন ছার । তখন মনে করিলাম, হিন্দুকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া জন্ম সার্থক করিয়াছি । সেই ললিতগিরির পদতলে বিরূপ তীরে গিরির শরীরমধ্যে হস্তিগুম্ফা নামে এক গুহা ছিল ৷ গুহ বলিয়া, আবার ছিল বলিতেছি কেন ? পৰ্ব্বতের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কি আবার লোপ পায় ? কাল বিগুণ হইলে সবই লোপ পায় ৷ গুহাও আর নাই। ২১ : ছাদ পড়িয়া গিয়াছে, স্তস্তসকল ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, --তলদেশে ঘাস গজাইতেছে । সৰ্ব্বস্ব লোপ পাইয়াছে, গুহাটার জন্য দুঃখে কাজ কি ? - কিন্তু গুহ বড় সুন্দর ছিল । পৰ্ব্বতাঙ্গ হইতে ক্ষোদিত স্তম্ভ, প্রাকার প্রভূতি বড় রমণীয় ছিল । চারিদিকে অপূৰ্ব্ব প্রস্তরে ক্ষোদিত নরমূৰ্ত্তিসকল শোভা করিত । তাহারই তই চারিটি আজিও আছে । কিন্তু ছাত পড়িয়াছে, রঙ্গ জলিয়। গিয়াছে, কাহারও নাক ভাঙ্গিয়ছে, কাহারও হাত ভাঙ্গিয়াছে, কাহারও প। ভাঙ্গিয়াছে । পুতুলগুলাও আধুনিক হিন্দুর মত অঙ্গষ্ঠান হইয়াছে । - কিন্তু গুহার এ দশ আজকাল হইয়াছে । আমি যখনকার কথ। বলিতেছি, তখন এমন ছিল না— গুহ সম্পূর্ণ ছিল । তাহার ভিতর পরম যোগী মহাত্ম। গঙ্গাধর স্বামী বাস করিতেন । যথাকালে সন্ন্যাসিনী শ্ৰীকে সমভিব্যাহারে লইয়া তথর উপস্থিত হইলেন, দেখিলেন, গঙ্গাধর স্বামী তখন ধ্যানে নিমগ্ন । অতএব কিছু না বলিয়া, তাহারা সে রাত্রি গুহ।প্রাস্তে শয়ন করিয়া যাপন করিলেন । , প্রতুষে ধ্যানভঙ্গ হইলে, গঙ্গাধর স্বামী গাত্ৰোখান পূৰ্ব্বক বিরূপায় স্বাণ করিয়া, প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিলেন । পরে তিনি প্রত্যাগত হইলে সন্ন্যাসিনী প্রণত হইয়। তাহার পদধূলি গ্রহণ করিল, শ্ৰীও তাহাই করিল । গঙ্গাধর স্বামী শ্রীর সঙ্গে তখনও কোন কথা কহিলেন না । তিনি কেবল সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে কথাবাত্তা কহিতে লাগিলেন । তুর্ভাগ্য—সকল কথাই সংস্কৃত ভাষায় হইল । শ্রী তাহার এক বর্ণ বুঝিল না । যে কয়টা কথ। পাঠকের জানিবার প্রয়োজন, বাঙ্গালায় বলিতেছি । স্বামী । এ স্ত্রী কে ? সন্ন। । পথিক । স্বামী । এখানে কেন ? সন্ন্যা । ভবিষ্যৎ লইয়। গোলে পড়িয়াছে । আপনাকে কর দেখাইবার জষ্ঠ আসিয়াছে ; উহার প্রতি ধৰ্ম্মানুমত আদেশ করুন । শ্ৰী তখন নিকটে আসিয়া আবার প্রণাম করিল । স্বামী তাহার মুখপানে চাহিয়া দেখিয়া হিন্দীতে বলিলেন, “তোমার কর্কট রাশি " *

  • পরীকনক-শরীরে দেবনম্র প্রকাশুে। ভবতি বিপুলবক্ষণ: কর্কটো ষস্য রাশিঃ –কোষ্ঠীপ্রদীপে। এইরূপ লক্ষণাদি দেখিয়া জ্যোতিবিদেরা রাশি ও নক্ষত্র

নির্ণয় করেন ।