পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ు 急é কিন্তু খেলায় তার মন গেল না । নন্দ ইচ্ছাপূৰ্ব্বক রাজি হারিল—রমার নাকের নোলক বাচিয়া গেল । কিন্তু রম আর খেলিল না—এক বাজি উঠিলেই রমাও উঠিয় গেল । রমা নন্দার কাছে আপন জিজ্ঞাস্ত কথার উত্তর পায় নাই——তাই সে খেলিতে পারে নাই । কতক্ষণে সে অার একজনকে সে কথ। জিজ্ঞাসা করিবে, সেই ভাবনাই ভাবিতেছিল। রম আপনার মহলে ফিরিয়া আসিয়াই আপনার একজন বর্ষীয়সী ধাত্রীকে জিজ্ঞাস করিল, “ষ্ট। গা, মুসলমানের কি ছেলে মারে ?” বর্ষীয়সী বলিল, “তার কাকে ন মারে ? তার। গোরু খায়, নেমাজ করে, তার ছেলে মারে না ত কি ?” রমার বুকের ভিতর টিপ টপ করিতে লাগিল । রম তখন যাহাকে পাইল, তাহাকেই সেই কথ। জিজ্ঞাস করিল, পুরবাসিনা আবালবৃদ্ধ সকলকেই জিজ্ঞাসা করিল। সকলেষ্ট মুসলমান ভয়ে ভীত, কেহই মুসলমানকে ভাল চক্ষুতে দেখে ন—সকলেই প্রায় বর্ষীয়সীর মত উত্তর দিল । তখন রম। সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত মনে করিয়া, বিছানায় আসিয়। শুষ্টয়৷ পড়িয়া, ছেলে কোলে লইয়। কাদিতে লাগিল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ এ দিকে তোরাব গ{ সংবাদ পাইলেন যে, সীতারাম মহম্মদপুরে নাই, দিল্লী যাত্র করিয়াছেন । ভাবিলেন, এই শুভ সময়, এই সময় মহম্মদপুর পোড়াইয়। ছারখার করাই ভাল। তখন তিনি সসৈন্তে মহম্মদপুর যাত্র করিবার জন্য প্রস্থত হইতে লাগিলেন । সে সংবাদও মহম্মদপুরে পৌছিল । নগরে একট। ভারি হুলস্থল পড়িয় গেল। গৃহস্তের। যে সেখানে পাইল, পলাইতে লাগিল । কেহ মাসীর বাড়া, কেতু পিসীর বাড়ী কেহ খুড়ার বাড়া, কেহ মামার বাড়ী কেহ শ্বশুর বাড়ী কেহ জামাই বাড়ী, কেহ বেহাই বাড়ী, বোনাইবাড়ী, সপরিবার, ঘট বাটি, সিন্দুক, পেটার, তক্তপোষ সমেত গিয়া দাখিল হইল । দোকানদার দোকান লইয়া পলাইতে লাগিল, মহাজন গোল বেচিয়া পলাইতে লাগিল, আড়তদার আড়ত বেচিয়া পলাইল, শিল্পকার যন্ত্র-তন্ত্র মাথায় করিয়৷ পলাইল । বড় হুলস্থল পড়িয়া গেল । बकिमध्अब अशवली নগররক্ষক গঙ্গারাম দাস চন্দ্রচূড়ের নিকট মন্ত্রণার জন্য আসিলেন । বলিলেন, “এখন ঠাকুর, কি করিতে বলেন? সহুর ত ভাঙ্গিয় যায়।" চন্দ্রচূড় বলিলেন, “স্ত্রীলোক বালক, বৃদ্ধ যে পলায় পলাক, নিষেধ করিও না । বরং তাঁহাতে প্রয়োজন আছে । ঈশ্বর না করুন, কিন্তু তোরাব খা আসিয়া যদি গড় ঘেরাও করে, তবে গড়ে যত খাইবার লোক কম থাকে ততই ভাল । তা হ’লে দুই মাস ছয় মাস চালাইতে পারিব । কিন্তু যাহার। যুদ্ধ শিখিয়াছে, তাহাদের এক জনকেও যাইতে দিবে না, যে যাইবে, তাহাকে গুলী করিবার হুকুম দিবে। অস্ত্র-শস্ত্র একখানিও সহরের বাহিরে লষ্টয়া যাইতে দিবে না । আর খাবার সামগ্রী এক মুঠাও বাহিরে লইয়। যাইতে দিবে ন! l" সেনাপতি মৃন্ময় রায় আসিয়া চন্দ্রচূড় ঠাকুরকে মন্ত্রণ। জিজ্ঞাসা করিলেন । বলিলেন, “এখানে পড়িয়া মার খাষ্টব কেন ? যদি তোরাব গ৷ অসিতেছে, তবে সৈন্য লইয়া অর্দেক পথে গিয় তাহাকে মারিয়া আসি না কেন ?" চন্দ্রচূড় বলিলেন, “এই প্রবল নদীর সাহায্য কেন ছাড়িবে ? যদি অৰ্দ্ধপথে তুমি হার, তবে আর আমাদের দাড়াইবার উপায় থাকিবে না । কিন্তু তুমি যদি এই নদীর এ পারে কামান সাজাইয়। দাড়াও, কার সাধা এ নদী পার হয় ? এ স্থাটিয়৷ পার হুইবার নদী নয়, সংবাদ রাখ, কোথায়ু নদী পার হইবে । সেইখানে সৈন্ত লষ্টয় যাও, তাহ হইলে মুসলমান এ পারে অসিতে পারিবে ন। সব প্রস্তুত রাখ, কিন্তু আমায় ন বলিয়া যাত্র করিও ন৷ ” ছু গুপ্তচবের প্রত্যাগমন প্রতীক্ষা করিতে ছিলেন । গুপ্তচর ফিরিলেই তিনি সংবাদ পাইবেন, কখন কোন পথে তোরাব, পার সৈন্য যাত্র করিবে, তখন ব্যবস্থা করিবেন । এ দিকে অন্তঃপুরে সংবাদ পৌছিল যে, তোরার থা সসৈন্তে মহম্মদপুর লুঠিত আসিতেছে । বহি কাটার অপেক্ষ। অন্তঃপুরে সংবাদটি কিছু বাড়িয়া যাওয়াই রীতি । বাহিরে “আসিতেছে" অর্থে বুঝিল, আসিবার উদ্যোগ করিতেছে ; ভিতর মহলে “আসিতেছে।” অর্থে বুঝিল, “প্রায় আসিয়৷ পৌঁছিয়াছে।” তখন সে অন্তঃপুরমধ্যে র্কাদাকাটার ভারি ধূম পড়িয়া গেল । নন্দার বড় কাজ বাড়িয়া গেল—কয়জনকে একা বুঝাইবে, কয়জনকে থামাইবে । বিশেষ রমাকে লইয়াই নন্দাকে বড় ব্যস্ত হইতে হইল –কেন না,