সীতাঞ্জাম । ફિલ’, রমা ক্ষণে ক্ষণে মূৰ্ছা যাইতে লাগিল । নন্দ মনে মনে ভাবিতে লাগিল, “সতীন মরিয়া গেলেই বাচি–কিন্তু প্রভু যখন আমাকে অন্তঃপুরের ভার দিয়া গিয়াছেন, তখন আমাকে আপনার প্রাণ দিয়াও সতীনকে বঁাচাইতে হুইবে ।” তাই নন্দ সকল কাজ ফেলিয়া রমার সেবা করিতে লাগিল । এ দিকে পৌরস্ত্রীগণ নন্দাকে পরামর্শ দিতে লাগিল—“মা ! তুমি এক কাজ কর—সকলের প্রাণ বঁাচাও । এই পুরী মুসলমানকে বিনা সদ্ধে সমর্পণ কর—সকলের প্রাণ ভিক্ষ মাগিয়| লও । আমরা বাঙ্গালী মানুষ, আমাদের লড়াই-ঝগড়া কাজ কি ম| } প্রাণ বাচিলে আবার সব হবে । সকলের প্রাণ তোমার হাতে-মা, তোমার মঙ্গল হোক—আমাদের কথ। শোন ।” নন্দা তাহাদিগকে বুঝাইলেন । বলিলেন, “ভয় কি মা ! পুরুষমানুষের চেয়ে তোমরা কি বেশী বুঝ ? ভার। যখন বলিতেছেন, ভয় নাই, তখন ভয় কেন ? তাদের কি আপনার প্রাণে দরদ নাই,— ন। আমাদের প্রাণে দরদ নাই ?” এই সকল কথার পর রম বড় মূৰ্ছ গেল ন । উঠিয়া বসিল , কি কথা ভাবিস মনে সাহস পাইয়। ছিল, তাহ পরে বলিতেছি । চতুর্থ পরিচ্ছেদ গঙ্গারাম নগররক্ষক । এ সময়ে রাত্রিতে নগরপরিভ্রমণে তিনি বিশেষ মনোযোগ । যে দিনের কথা বলিলাম, সেই রাত্রিতে তিনি নগরের অবস্থা জানিবার জন্ত পদব্ৰজে সামান্ত বেশে, গোপনে এক নগরপরিভ্রমণ করিতেছিলেন । রাত্রি তৃতীয় প্রহরের পর ক্লাস্ত হইয়া, তিনি গৃহে প্রত্যাগমন করিবার বাসনায়, গৃহাভিমুখ হইতেছিলেন, এমন সময়ে কে আসিয়া পশ্চাৎ হইতে র্তাহার কাপড় ধরিয়া টানিল । গঙ্গারাম পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন, এক জন স্ত্রীলোক। রাত্রি অন্ধকার, রাজপথে আর কেহ নাই —কেবল একাকিনী সেই স্ত্রীলোক । অন্ধকারে স্ত্রীলোকের আকার, স্ত্রীলোকের বেশ, ইহা জানা গেল—কিন্তু আর কিছুই বুঝা গেল না । গঙ্গারাম জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?” স্ত্রীলোক বলিল, “আমি যে হই, তাতে আপনার কিছু প্রয়োজন নাই। আমাকে বরং জিজ্ঞাসা করুন মে, আমি কি চাই !" २झु-२8
কথার স্বরে বোধ হইল যে, এই স্ত্রীলোকের বয়স বড় বেশী নয় । তবে কথাগুলি জোর জোর বটে ; গঙ্গারাম বলিল, “সে কথা পরে হইবে । আগে বঙ্গ দেখি, তুমি স্ত্রীলোক, এত রাত্রে একাকিনী রাজপথে কেন বেড়াইতেছ? আজকাল কিরূপ সময় পড়িয়াছে তাহা কি জান না ?” ‘. স্ত্রীলোক বলিল “এত রাত্রে একাকিনী আমি । এই রাজপথে, আর কিছুই করিতেছি না--কেবল আপনারই সন্ধান করিতেছি ।” গঙ্গারাম । মিছা কথা। প্রথমতঃ তুমি চেনই ন যে, আমি কে ? . স্ত্রীলোক । আমি চিনি যে, আপনি দাস মহাশয়, " নগর রক্ষক । গঙ্গারাম । ভাল, চেন দেখিতেছি । কিন্তু আমাকে এখানে পাইবার সম্ভাবনা, ঈহ! তোমার জানিবার সম্ভাবন নাই, কেন না, আমিই জানিতাম ন! যে, আমি এখন এ পথে আসিব । স্ত্রীলোক । আমি অনেকক্ষণ ধরিয়া আপনাকে গলিতে গলিতে খুজিয়। বেড়াইতেছি । আপনার বাড়াতেও সন্ধান লইয়াছি । গঙ্গারাম ] কেন ? স্ত্রীলোক । সেই কথাই আপনার আগে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল । আপনি একটা দুঃসাহসিক কাজ করিতে পারিবেন ? গঙ্গ। কি ? স্ত্রীলোক । আমি আপনাকে যেখানে লইয়। যাইব, সেখানে এখনি যাইতে পারিবেন ? গঙ্গা । কোথায় যাইতে হইবে ? স্ত্রীলোক । তাহা আমি আপনাকে বলিব না । আপনি তাহা জিজ্ঞাসা করিতে পরিবেন না । সাংস হয় কি ? গঙ্গা । আচ্ছ, তা না বল, আর দুই একুটা কথা বল। তোমার নাম কি ? তুমি কে ? কি কর ? আমাকেই বা কি করিতে হইবে ? স্ত্রীলোক । আমার নাম মুরলা,ইহা ছাড়া আর কিছুই বলিব না । আপনি আসিতে সাহস না করেন, আসিবেন না । কিন্তু যদি এই সাহস না থাকে, তবে মুসলমানের হাত হইতে নগর রক্ষা করিবেন কি প্রকারে ? আমি স্ত্রীলোক যেখানে যাইতে পারি, আপনি নগররক্ষক হইয়া সেখানে এত কথা নহিলে যাইতে পারিবেন না ? কাজেই গঙ্গারামকে মুরলার সঙ্গে যাইতে হইল । মুরলা’আগে আগে চলিল, গঙ্গারাম পাছু পাছু। কিছু