পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক তালবনের অপূৰ্ব্ব শোভা দর্শন করিতে লাগিল । পরে জয়ন্তী ফিরিয়া আসিল । মহাপুরুষ কি আদেশ করিলেন, জয়স্তাকে ন৷ জিজ্ঞাসা করিয়া, শ্ৰী বলিল, “কি মিষ্ট পাখীর শব্দ ! কান ভরিয়া গেল !” জয়ন্তী স্বামীর কণ্ঠস্বরের তুল্য কি ? ত্র । এই নদীর তর-তর গদগদ শব্দের তুল্য । জয়ন্তী। স্বামীর কণ্ঠস্বরের তুল্য কি ? শ্রী । অনেক দিন স্বামীর কণ্ঠ শুনি নাই—বড় আর মনে নাই । হায় ! সীতারাম ! জয়ন্তী তাহ! জানিত, মনে করাইবার জন্য সে কথ। জিজ্ঞাসা করিয়াছিল ৷ জয়স্তা বলিল, “এখন শুনিলে আর তেমন ভাল লাগিবে না কি ?” শ্ৰী চুপ করিয়া রহিল। কিছুক্ষণ পরে মুখ তুলিয়। জয়ন্তীর পালে চাহিয়, শ্ৰী জিজ্ঞাস করিল, “কেন, ঠাকুর কি আমাকে পতিসন্দর্শনে যাইতে অনুমতি করিয়াছেন ?” জয়ন্তী ! তোমাকে ত যাইতেই হইবে--আমাকেও তোমার সঙ্গে যাইতে বলিয়াছেন । ঐ । কেন ? জয়ন্তী । তিনি বলেন, শুভ হইবে । শ্ৰী । এখন আর আমার তাহাতে সুখ-দুঃখ কি ভগিনি ? জয়ন্তী । বুঝিতে পারিলে ন| কি শ্ৰী ? আজিও কি এত বুঝাইতে হইবে ? শ্ৰী , ন!, --বুঝি নাই । জয়ন্তী ! তোমার শুভাশুভ উদ্দিষ্ট গুইলে, ঠাকুর তোমাকে কোন আদেশ করিতেন ন} । ইহাতে তোমার শুভাশুভ কিছুষ্ট নাই । শ্ৰী । বুঝিরাছি -আমি এখন গেলে আমার স্বামীর শুভ হইবার সম্ভাবন ? জয়ন্তী । তিনি কিছুই স্পষ্ট বলেন না । অত ভাঙ্গিয়াও বলেন না, আমাদিগের সঙ্গে বেশী কথ। কহিতে চাহেন না । তবে তাহার কথার এইমাত্র তাৎপৰ্য্য হইতে পারে, ইহা আমি বুঝি। আর তুমিও আমার কাছে এত দিন যাহ! শুনিলে, শিখিলে, তাহাতে তুমিও বোধ হয় বুঝিতে পারিতেছ। ঐ ! তুমি যাইবে কেন ? জয়ন্তী। তাহ আমাকে কিছুই বলেন নাই । তিনি আজ্ঞা করিয়াছেন, তাই আমি যাইব । ন৷ যাইব কেন ? তুমি যাইবে? ঐ । তাই ভাবিতেছি । শুভাশুভ, তোমায় সীতারাম అలీ জয়ন্তী। ভাবিতেছ কেন ? সেই “প্রিয়-প্রাণহন্ত্রী" কথাটা মনে পড়িয়াছে বলিয়া কি ? শ্ৰী । না, এখন আর তাহাতে ভীত নই ৷ জয়ন্তী । কেন ভীত নও, আমাকে বুঝাও । তা বুঝিয়। তোমার সঙ্গে সাওয়৷ আমি স্থির করিব । শ্ৰী । কে কাকে মারে বহিন ? মারিবার কর্তা এক জন-—যে মরিবে তিনি ভtহাকে মারিয়া রাখিয়াছেন । সকলেই মরে । আমার হাতে হউক, ” পরের হাতে হউক, তিনি এক দিন মৃত্যুকে পাইবেন । আমি কখন ইচ্ছাপূৰ্ব্বক ঠাহাকে হত্য করিব না, ইহা বলাই বাহুল্য ; তবে সিনি সৰ্ব্বকৰ্ত্তা, তিনি যদি ঠিক করিয়! থাকেন যে, আমারই হাতে তাহার সংসার-যন্ত্রণা হইতে নিস্কৃতি ঘটিবে, তবে । কাহার সাধ্য অস্তথ। করে ? আমি বনে বনেই বেড়াই, আর সমুদ্রপারেই যাই, তাহার আজ্ঞার বশীভূত হইতেই শুইবে । আপনি সাবধান হইয়া ধৰ্ম্মমত আচরণ করিব-—তাহাতে র্তাহার বিপদ ঘটে, আমার তাহাতে সুখ দুঃখ কিছুই নাই । হে হে। সীতারাম ! কাহার জন্য ঘুরিয়৷ বেড়াইতেছ ? - জয়ন্তী মনে মনে বড় খুলী হইল। জয়ন্ত্রী জিজ্ঞাসা করিল, “তবে ভাবিতেছ কেন ?” ঐ ভাবিতেছি, গেলে যদি তিনি আর ন৷ ছাড়িয়া দেন ? জয়ন্তী ! যদি কোষ্ঠীর ভয় আর নাই, তবে ছাড়ির নাই দিলেন ? তুমিই আসিবে কেন ? শ্রী । আমি কি আর রাজার বামে বসিবার যোগ্য ? জয়ন্তী ! এক হাজার বার । যখন তোমাকে সুবৰ্ণরেখার ধারে কি বৈতরণী-তীরে প্রথম দেখিয়াছিলাম, তাহার অপেক্ষ তোমার রূপ কত গুণে বাড়িয়াছে, তাহ তুমি কিছুই জান না । ঐী। ছি ! জয়ন্তী ! গুণ কত গুণে বাড়িয়াছে, তাও কি জান না ? কোন রাজমহিষী গুণে তোমার তুল্য ? ত্র। আমার কথা বুঝিলে কৈ ? কৈ, তুমি আমার মনের মধ্যে বাধা রাস্ত বাধিয়াছ কৈ ? আমি কি তাহ বলিতেছিলাম ? বলিতেছিলাম যে, ষে শ্ৰীকে ফিরাইবার জন্য তিনি ডাকাডাকি করিয়াছিলেন, সে শ্ৰী আর নাই—তোমার হাতে তাহার মৃত্যু হইয়াছে। এখন আছে কেবল তোমার শিষ্য । । তোমার শিন্যাকে লইয়া মহারাজাধিরাজ সীতারাম । রায় সুখী হইবেন কি ? না, তোমার শিন্যাই