পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نموي নদীর অপর পারে ঠিক তাহার সম্মুখে, বহুসংখ্যক নৌক একত্র হইয়াছে । তীরে অনেক লোকও আছে বোধ হইতেছে ; কিন্তু তখনও তেমন ফর্সা হয় নাই, বুঝা গেল ন যে, তাহার। কি প্রকারের লোক । তখন তিনি গঙ্গারামকে ডাকিতে পাঠাইলেন । গঙ্গারাম আসিয়া সেই অট্টালিক শিখরদেশে উপস্থিত হইল । চন্দ্রচূড় জিজ্ঞাস করিলেন, “ও পারে ৮. অত নৌকা কেন ?" , গঙ্গা । বলিতে ত পারি ন! ৷ কথা কহিতে কহিতে বেশ আলে। হুষ্টল । তথন বোধ হইল, ঐ সকল লোক সৈনিক চন্দ্রচূড় তখন বলিলেন, "গঙ্গারাম সৰ্ব্বনাশ হুইয়াছে । আমাদের চর আমাদের প্রতারণা করিয়াছে, অথব। সে ঈ প্রতারিত হইয়াছে । আমরা দক্ষিণ-পথে সৈন্স পাঠাইলাম, কিন্তু ফৌজদারের সেন। এই পথে আসিয়াছে । সৰ্ব্বনাশ হঈল । এখন রক্ষা করে কে ? গঙ্গা । কেন, আমি আছি কি করিতে ? চন্দ্র । তুমি এই কয়জন মাত্র দুৰ্গরক্ষক লই৷ এই অসংখ্য সেনার কি করিবে ? অার তুমিও দুৰ্গরক্ষার কোন উদ্যোগ করিতেছ না। কাল বলিয়। ছিলাম বলিয়। আমাকে কড়! কড়া শুনাষ্টয়াছিলে । এখন কে দায়ভার ঘাড়ে করে ? গঙ্গা । অত ভয় পাইবেন না, ওপারে যে ফৌজ দেখিতেছেন, তাহ অসংখ্য না । এষ্ট কয়খান! নৌকায় কয়জন সিপাহী পার হইতে পারে ? আমি তীরে গিয়। ফৌজ লইয়। দাড়াইতেছি । উহার যেমন তীরে আসিবে, আমনি উচ্চ দিগকে টিপিয়৷ মারিব । গঙ্গারামের অভিপ্রায়, সেল। লষ্টয়া ব্যক্তির হইবেন, কিন্তু এখন নয়, আগে ফৌজদারের সেন। নিৰ্ব্বিঘ্নে পার হউক । তার পর তিনি সেন। লষ্টয় দুৰ্গদ্বার খুলিয়। বাহির হইবেন, মুক্তদ্বর পাইয়। মুসলমানের নিৰ্ব্বিল্পে গড়ের ভিতর প্রবেশ করিবে । তিনি কোন আপত্তি করিবেন না। কাল যে মূর্কিট। দেখিয়াছিলেন, সেট কি বিভাসিক কৈ, তার আর কিছু প্রকাশ নাই । চন্দ্রচূড় সব বুঝিলেন । তথাপি ধলিলেন “তবে শীঘ্র যাও । সেনা লইয়। বাহির হু ও ! বিলম্ব করিও না । নৌকা সকল সিপাহী বোঝাই লইয়। ছড়িতেছে !" গঙ্গারাম তখন তাড়াতাড়ি ছাদের উপর হইতে নামিল । চন্দ্রচুড় সভয়ে দেখিতে লাগিলেন যে, প্রায় বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী পঞ্চাশখান। নৌকায় পাঁচ ছয় শত মুসলমান-সিপাহী একশ্রেণীবদ্ধ হইয়া যাত্রা করিল। তিনি অতিশয় অস্থির হইয়। দেখিতে লাগিলেন, কতক্ষণে গঙ্গারাম সিপাহী লইয়া বাহির হয় । সিপাহী সকল সাজিতেছে, ফিরিতেছে, ঘুরিতেছে, সারি দিতেছে –কিন্তু বাহির হইতেছে না । চন্দ্রচূড় তখন ভাবিলেন, “হায় ! হায় ! কি দুষ্কৰ্ম্ম করিয়াছি –কেন গঙ্গারামকে বিশ্বাস করিয়াছিলাম ? এখন সৰ্ব্বনাশ হইল ! কৈ, সেই জ্যোতিস্ময়ী রাজলক্ষ্মাই বা কৈ ? তিনিও কি ছলনা করি লেন ?" চন্দ্রচূড় গঙ্গারামের সন্ধানে আসিবার অভি প্রায়ে সৌধ হইতে অবতরণ করিবার উপক্রম করিতেছিলেন, এমন সময়ে গুডুম করিয়া এক কামানের আওয়াজ হইল। মুসলমানের নৌকাশ্রেণী হইতে আওয়াজ হইল, এমন বোধ হইল ন! ! তাঁহাদের সঙ্গে কামান অ}ছে, এমন বোপ হইতেছিল না । চন্দ্র চূড় নিরীক্ষণ করিয়৷ দেখিলেন, মুসলমানের কোন নৌকায় কমানের পয়। দেখা যায় না । চন্দ্রচূড় সবিস্ময়ে দেখিলেন যেমন কমানের শব্দ হইল, আমনি মুসলমানদিগের একখানি নেকৈ জলমগ্ন হইল ; আরোঙ্গ সিপাষ্ট্রর সস্তরণ কলিয়। অন্য নৌকার উঠিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । “তবে কি এ তামাদের তোপ !" এই ভাবিয়। চন্দ্রচূড় নিরীক্ষণ করির। দেখিলেন । দেখিলেন, একটি সিপাই ও গড় হইতে দাচির হয় নাই। দুর্গপ্রাকারে, সেখানে তোপ সকল সঞ্জান আছে, সেখানে একটি মতুল্য ও নাই ; তলে এ তোপ, ছাড়িল কে ? কোন ও দিকে পম দেখা যার কি না, ইত লক্ষ্য করিবার জন্ত ঢদচড় ঢারিদিকে চাঙ্গিত লাগিলেন, - দেখিলেন. গড়ের সম্মুখে সেখানে রাজবাটীর ঘাট, সেইখান ভট্টতে ঘুরিদ ঘুরিয়৷ ধুমরাশি আকাশমার্গে উঠিয়। পবন পথে চলিয়। সাঈলেছে । তখন চন্দ্রচূড়ের স্মরণ হইল যে, ঘাটের উপরে, গাছের তলায় একট। ভোপ আছে ! কোন শক্রর নেকৈ আসিয়৷ ঘাটে না লাগিতে পারে, এ জন্য সীতারাম সেখানে একটা কামান রাখিয়াছিলেন-কেহ এখন সেই কামান ব্যবহার করিতেছে, ইহা নিশ্চিত । কিন্তু সে কে ? গঙ্গারামের একটি সিপাহীও বাহির হয় নাই—এখন ও ফটক বন্ধ । মুন্ময়ের সিপাহীর অনেক দূর চলিয়। গিয়াছে । মৃন্ময় যে কোন সিপাহী ঐ কামানের জন্য রাখিয়া যাইবেন, ইহা অসম্ভব ; কেন না, দুৰ্গরক্ষার ভার গঙ্গারামের উপর আছে। কোন বাজে লোক আসিয়া কামান ছাড়িল, ইহাও