পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম অসম্ভব, কেন না বাজে লোকে গোলাবারুদ কোথ। পাইবে ? অার এরূপ অব্যর্থ সন্ধান –বাজে লোকের হইতে পারে না—শিক্ষিত গোলন্দাজের । কার এ কাজ ? চন্দ্রচূড় এইরূপ ভাবিতেছিলেন, এমন সময়ে আবার সেই কামান বজ্রনাদে চতুর্দিক শদিত করিল —আবার ধূমরাশি আকাশে উঠিয়া নদীর উপরিস্থ বায়ুস্তরে গগনমার্গে বিচরণ করিতে লাগিল— আবার মুসলমান সিপাঙ্গপরিপূর্ণ অার একখানি নৌকা জলমগ্ন হইল । “ধন্য ! ধন্য !" বলিয়। চন্দ্রচূড় করতালি দিতে লাগিলেন । নিশ্চিত এই সেই মহাদেবী ! বুঝি কালিক সদয় হইয়। অবর্তীণ হইয়াছেন ৷ জয় লক্ষীনারায়ণজী ! জয় কালা ! জর পুবরাজলক্ষী । তখন চন্দ্রচূড় সভয়ে দেখিলেন সে, যে সকল নেীক অগ্রবক্তা হইয়াছিল—অর্থাং ষে সকল নৌকার সিপাহীদের গুলী তীর পর্য্যন্ত পৌছিবার সস্তাবনা, তাহার। তার লক্ষ্য করিয়া বন্দুক চালাইতে লাগিল ; ধূমে সহস। নদীবক্ষ অন্ধকার হইয় উঠিল--শব্দে কান পাত যায় ন। । চন্দ্রচূড় ভাবিলেন, “যদি আমাদের রক্ষক দেবত হয়েন-—তবে এ গুলাবৃষ্টি তাহার কি করিবে ? তার যদি মন্ত্যু হয়েন, তবে আমাদের জীবন এই পর্য্যন্ত-–এ লোহ-বৃষ্টিতে কোন মৎস্যই টিকিবে না। " কিন্তু আবার সেই কামান ডাকিল-আবার দশ দিক র্কাপিয় উঠিল—পমের চক্রে চক্ৰে সমাকীর বড়িয়া গেল ! আবার সসৈন্য মেীক। ছিন্নভিন্ন হইয়। ডুবিয়া গেল । তখন এক দিকে--- এক কামান --অার এক দিকে শত শত মুসলমান সেনীয় তুমুল সংগম বাধিয়! গেল । শব্দে আর কান পাত। নাম না । উপসাপরি গম্ভব ভাব, ভীষণ, মুহুম্মুহুঃ ইন্দ্ৰহস্তপরিত্যক্ত বজের মত সেই কামান ডাকিতে লাগিল--প্রশস্ত নদীবক্ষ এমন ধূমাচ্ছন্ন হইল যে, চন্দ্রচূড় সেই উচ্চ সৌধ হইতে উভাল তরঙ্গসংক্ষুব্ধ পূমসমুদ্র ভিন্ন আর কিছু দেখিতে পাই লেন না । কেবল সেই তীব্রনাদা বজ্রনাদে বুঝিতে পারিলেন যে, এখনও হিন্দুপম্মরক্ষিণী দেবী জাবিত। আছেন । চন্দ্রচূড় তীব্রভৃষ্টিতে ধূমসমূদ্রের বিচ্ছেদ অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন- - এই আশ্চর্য সমরের ফল কি হইল-—দেখিবেন । ক্রমে শব্দ কম পড়িয়া আসিল একটু বাতাস উঠিয়া ধুয়৷ উড়াইয়া লইয়। গেল। তখন চন্দ্রচূড় সেই জলময় রণক্ষেত্র পরিষ্কার দেখিতে পাইলেন । দেখিলেন যে, ছিন্ন, নিমগ্ন নৌকা সকল স্রোতে উলটিপালটি করিয়া ভাসিয়া চলিয়াছে । মুত ও জীবিত లిసి সিপাহীর দেহে নদীস্রোত ঝটিকা-শাস্তির भैत्र পল্লবকুসুমসমাকীর্ণ উদ্যানবৎ দৃষ্ট হইতেছে। কাহারও অস্ত্র, কাহারও বস্ত্র, কাহারও উষ্ণীষ, কাহারও দেহ ভাসিয়৷ ঘাইতেছে, কেহ সাতার দিয়া পলাইতেছে-কাহাকেও কুম্ভারে গ্রাস করিতেছে । সে কয়খান নৌক ডোলে নাই, সে কয়খানার নাবিকের প্রাণপাত করিয়। বহিয়। সিপাহী লইয়া অপর . পারে পলায়ন করিয়াছে । একমাত্র বজের প্রহারে আহত অসুরী সেনার স্তায় মুসলমানসেন রণে ভঙ্গ দিয়া পলাইল । দেখিয়৷ চন্দ্রচূড় হাতযোড় করিয়। উদ্ধমুখে গদগদকণ্ঠে সজলনয়নে বলিলেন, “জয় জগদীশ্বর ! জয় দৈত্যদমন, ভক্ততারণ, ধৰ্ম্মরক্ষণ হরি ; আজি বড় দয়া করিলে ! আজি তুমি স্বয়ং সশরীরে যুদ্ধ করিয়াছ, নয় ত এই পুররাজলক্ষ্মী স্বয়ং সুদ্ধ করিয়াছেন, নহিলে তোমার দ।সমৃদ।স সীতারাম আসিয়াছে । তোমার সেই ভক্ত ভিন্ন এ সৃদ্ধ মল্লষ্যের সাপ্য নহে ।” তখন চন্দ্রচূড় প্রাসাদশিখর হইতে অবতরণ করিলেন । পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ কমানের বন্দুকের হুড়-মুড়ংড়-মুড়, শুনিয়া গঙ্গারাম মনে ভাবিল, “এ আবার কি ! লড়াই কে করে, সেই ডাকিনী নয় ত ? তিনি কি দেবত ?” গঙ্গারাম এক জন জমাদারকে দেখিতে পাঠাইলেন । জমাদার নিক্ৰান্ত হইল। সে দিন, সেই প্রথম ফটক খোল| হুইল । জমাদার ফিরিয়া গিয়া নিবেদন করিল, “মুসলমান লড়াই করিতেছে।” গঙ্গারাম বিরক্ত হইলু! বলিল, “ত ত জানি । কার সঙ্গে মুসলমান লড়াই করিতেছে ?” প্রমদার বলিল, “কারও সঙ্গে নহে ।” গঙ্গারাম হাসিল, “তাও কি হয় মূৰ্খ! তোপ কার ?" জমাদার । হুজুর, তোপ কারও ন! । গঙ্গারাম বড় রাগিল, বলিল, “তোপের আওয়াজ শুনিতেছি না ?" জমাদার । তা শুনিতেছি । গঙ্গারাম । তবে ? সে তোপ কে দাগিতেছে ? জমা । তাহ দেখিতে পাই নাই । গঙ্গা । চোখ কোথা ছিল ?